প্রাকৃতিক আবাস এবং বাঘের সংরক্ষণ বাড়াতেই প্রতি বছর ২৯ জুলাই পালন করা হয় এই দিনটির
“বেশ করিয়া দেখিয়া ইন্দ্ৰ কহিল, দ্বারিকবাবু, এ বাঘ নয় বোধ হয়। তাহার কথাটা শেষ হইতে-না-হইতেই সেই রয়েল বেঙ্গল টাইগার দুই থাবা জোড় করিয়া মানুষের গলায় কঁদিয়া উঠিল। পরিষ্কার বাঙলা ভা্ষায় কহিল, না বাবু মশাই, না। আমি বাঘ-ভালুক নই-ছিনাথ বহুরূপী। ”
রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের এই অমলিন ছবি লিখে গিয়েছিলেন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। আজ ওদের দিন। মানে ‘বিশ্ব বাঘ দিবস’। বাঘ নিয়ে নানা আশঙ্কার কথা শুনিয়েছেন বাঘ বিশেষজ্ঞরা। ফি-বছর আজকের দিনে ব্যাঘ্র সংরক্ষণের সে সব কথাই আবার নতুন করে সামনে নিয়ে আসা হয়। এ বারেও এই শহরে বাঘ নিয়ে নানা আয়োজন। আজ ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলের সম্মেলন কক্ষে রয়েছে দু’টি আলোচনা। বিশিষ্ট বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞ এবং আলোকচিত্রী সুজন চট্টোপাধ্যায় এবং রাজর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায় বলবেন যথাক্রমে ‘ইন দ্য শ্যাডো অব দ্য টাইগার’ এবং ‘দ্য টাইগার ইন দ্য টোয়েন্টিফার্স্ট সেঞ্চুরি’ শিরোনামে। সঙ্গে প্রদর্শিত হবে বাঘ বিষয়ক আলোকচিত্র।
আন্তর্জাতিক ব্যাঘ্র দিবস বা বিশ্ব বাঘ দিবস সমগ্র বিশ্বে বাঘের সংরক্ষণের জন্য জনসচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে প্রতি বছর ২৯ জুলাই তারিখে পালন করা হয়। ২০১০ সালে সেণ্ট পিটার্সবার্গে অনুষ্ঠিত ব্যাঘ্র অভিবর্তনে এই দিবসের সূচনা হয়। এই দিবস পালনের মুখ্য উদ্দেশ্য হল বাঘের প্রাকৃতিক আবাস রক্ষা করা এবং বাঘের সংরক্ষণের জন্য সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করে এর সম্পর্কে থাকা ভুল ধারণা ও ভয় দূর করা। প্রতি বছর বিভিন্ন কার্যসূচীর মাধ্যমে এই দিবস পালন করা হয়। বাঘ ভারতের জাতীয় পশু হওয়ার কারণে এই দিবসের মহত্ব এখানে বেশী ধরা হয়।
ভারতের কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় শুক্রবার লোকসভায় প্রশ্নোত্তর পর্বে জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকার প্রস্তাব দিলে এবার পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবনে বাঘ সাফারির উদ্যোগ নিতে পারে কেন্দ্রীয় সরকার। এ ক্ষেত্রে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার যৌথভাবে এই বাঘ সাফারির আয়োজন করতে পারে। এর আগে পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় জানতে চেয়েছিলেন, পশ্চিমবঙ্গে ঐতিহ্যবাহী সুন্দরবন ও রয়েল বেঙ্গল টাইগার থাকলেও এখানে পর্যটকদের জন্য বাঘ সাফারির ব্যবস্থা নেই। এতে বহু পর্যটক বাঘ সাফারির জন্য বিদেশে যান। এই প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় বলেন, এ ব্যাপারে তিনি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রস্তাব পেলে উদ্যোগী হতে পারেন। সুন্দরবন আজ ভারত নয় গোটা বিশ্বেরই ঐতিহ্য। এদিকে, এদিন সর্বভারতীয় বাঘ সুমারির ফলাফল ঘোষণা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকার বাঘ বাঁচানোর জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ৷ এ বছর ঐতিহাসিক ভাবে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে দেশে৷’ এর আগে ২০০৬, ২০১০ ও ২০১৪ সালে বাঘ সুমারি হয়েছিল ভারতে৷