জম্মু-কাশ্মীর বিভাগে দিল্লি এবং পুদুচেরির মতো বিধানসভা সহ গঠিত হবে পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল
৬৯ বছর পর ৩৭০ ধারা রদ। আর যার ফলে রাজ্যের মর্যাদা হারাল জম্মু ও কাশ্মীর। সেইসঙ্গে আলাদা করে কেন্দ্রশাসিত রাজ্য হিসাবে ঘোষণা করা হল লাদাখকে। সোমবার অমিত শাহ রাজ্যসভায় জম্মু ও কাশ্মীর পুনর্গঠন বিষয়ক ২০১৯ প্রস্তাব পেশ করেন। সেইসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ লাদাখের জন্য একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠনেরও ঘোষণা করেছেন, সেখানে চণ্ডীগড়ের মতো কোনও বিধানসভা থাকছে না।
তিনি রাজ্যসভায় ঘোষণা করেন, কাশ্মীর ও জম্মু বিভাগে দিল্লি এবং পুদুচেরির মতো বিধানসভা সহ তা পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হবে। অমিত শাহ এদিন রাজ্যসভায় বলেছেন, ‘রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পরে জম্মু ও কাশ্মীরে আর্টিকেল ৩৭০-এর সমস্ত ধারা আর প্রয়োগ হবে না।’
নির্বাচনের আগে প্রচারিত ইস্তাহারে বিজেপি জানিয়েছিল, তারা ৩৫-এ ও ৩৭০ ধারা রদ করতে চায়। সেই অনুযায়ী সোমবার রাজ্যসভার অধিবেশনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ৩৭০ ও ৩৫-এ ধারা বাতিলের প্রস্তাব দেওয়ার পর কোনওরকম প্রশ্ন না তুলেই সেই সংক্রান্ত বিলে স্বাক্ষরও করে দেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। একইসঙ্গে কাশ্মীর থেকে ভেঙে আলাদা করে দেওয়া হয় লাদাখকে। দু’টি আলাদা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হচ্ছে জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখ। দু’টি জায়গাতেই দু’জন লেফটেন্যান্ট গভর্নর নিয়োগ করা হবে। যদিও কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্ত একদমই খুশি করতে পারেনি বিরোধীদের। তাঁদের দাবি, এর ফলে রাজ্যের বাসিন্দাদের পরিচিতি রক্ষা পায় ও কর্মসংস্থান থেকে বৃত্তি সব ক্ষেত্রে রাজ্যের বাসিন্দাদের অধিকার বজায় থাকে। অবশ্য কাশ্মীর ইস্যুতে কেন্দ্রীয় সরকারের ৩৭০ ধারা বাতিলের সিদ্ধান্ত ঐতিহাসিক নাকি বিতর্কিত, সেই উত্তর পাওয়ার জন্য দেশবাসীর কাছে অপেক্ষা ছাড়া কোনও গতি নেই দেশবাসীর।
সংবিধানের ৩৭০ ধারা অনুযায়ী জম্মু ও কাশ্মীর এমন একটি ব্যতিক্রমী রাজ্য, যেখানে প্রতিরক্ষা-পররাষ্ট্র বা যোগাযোগের মতো কয়েকটি বিষয় ছাড়া বাকি সব ক্ষেত্রে সেখানে ভারতের কোনও আইন প্রয়োগ করতে গেলে রাজ্য সরকারের সম্মতিও আবশ্যিক। ৩৭০ ধারা অনুযায়ী নাগরিকত্ব, চাকরি বা অন্য কোনও বৃত্তি, সম্পত্তির মালিকানা বা মৌলিক অধিকারের ক্ষেত্রও জম্মু ও কাশ্মীরের বাসিন্দারা দেশের অন্যান্য রাজ্যগুলির তুলনায় বাড়তি কিছু সুবিধা ভোগ করে থাকেন। জম্মু ও কাশ্মীরের স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে পরিগণিত হন সেই সব অধিবাসী, যাঁরা ১৯১১ সালের আগে জন্মেছেন বা এখানে বাস করছেন অথবা ওই তারিখের পরে ১০ বছর বা তারও বেশি সময় ধরে আইনত স্থাবর সম্পত্তির মালিক এবং এখানকার বাসিন্দা। তবে রাজ্যের যে মহিলারা রাজ্যের বাইরের কোনও বাসিন্দাকে বিয়ে করেন, তাঁদের সন্তানরা ওই অধিকার থেকে বঞ্চিত হন। ২০০২ সালে জম্মু ও কাশ্মীরের হাইকোর্ট জানিয়ে দেয়, যে মহিলারা অস্থায়ী বাসিন্দাদের বিয়ে করবেন তাঁরা তাঁদের অধিকার হারাবেন না।
৩৭০ ধারার ভিত্তি নিহিত আছে ভারতের সঙ্গে কাশ্মীরের সংযুক্তিকরণের ইতিহাসও। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় জম্মু-কাশ্মীর ভারতের অঙ্গ ছিল না৷ ছিল মহারাজা হরি সিং-এর স্বাধীন রাজ্য৷ ১৯৪৭ সালের ২২ অক্টোবর কাশ্মীর আক্রমণ করে পার্বত দুষ্কৃতীরা। রাজত্ব বাঁচাতে সেই সময় হরি সিং ভারতের কাছে সেনা সাহায্য চান। তাঁর শর্ত ছিল ভারতভুক্তি বা ‘ইনস্ট্রুমেন্ট অফ অ্যাকসেশন’৷ তাতে জম্মু-কাশ্মীরকে ৩৭০ নং ধারা অনুযায়ী স্বায়ত্তশাসনের বিশেষ মর্যাদা দেবার সংস্থান রাখা হয়৷ সে সময়ে বিনা পারমিটে কাশ্মীরে কারও প্রবেশ পুরোপুরি নিষিদ্ধ ছিল। এরপর ১৯৫৪ সালের ১৪ মে ৩৫-এ ধারা সংবিধানে যুক্ত হয় জওহরলাল নেহরু মন্ত্রিসভার পরামর্শে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্র প্রসাদের নির্দেশে।