স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বার্তা পেয়েই রাজ্যজুড়ে কড়া নিরাপত্তা, নজরদারি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও
গত আটষট্টি বছর ধরে চলে আসা একটি ব্যবস্থাকে হঠাৎ করে বদলে দিলে স্বাভাবিক ভাবেই আশঙ্কা থেকে যায়। তাই ৩৭০ ধারা রদের পর কোনওরকম ঝুঁকি নিতে চাইছে না নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদি সরকার। কেন্দ্রর নির্দেশে কঠোর নিরাপত্তার বলয়ে ঘিড়ে ফেলা হয়েছে জম্মু-কাশ্মীরকে। সেই সঙ্গে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের পর রাজ্যগুলিকেও সতর্ক থাকার নির্দেশ পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। প্রতিটি রাজ্যেই নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর বাড়তি নজর দিয়ে আঁটোসাটো করা হয়েছে৷ সেই সঙ্গে কেন্দ্রের নির্দেশে কড়া নজর রাখা হয়েছে সোশাল মিডিয়াগুলিতেও। যাতে কোনওরকম গুজব, প্ররোচনা বা বিদ্বেষমূলক খবর না ছড়ায়।
সংবিধানের ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের পরই গোটা দেশকে সতর্ক থাকতে বলেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। বিশেষ নজরদারি চালানো হচ্ছে সীমান্ত এলাকাগুলিতে। সেই তালিকায় বাদ নেই বাংলাও। বাড়তি সতর্ক পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের সঙ্গ কলকাতা পুলিশও। শহরের স্পর্শকাতর এলাকাগুলিতে চলছে বিশেষ নজরদারি। বিশেষত যেসব এলাকায় কাশ্মীরিরা থাকেন সেখানে বাড়তি সতর্কতা নেওয়া হয়েছে৷
সোমবার জম্মু ও কাশ্মীর থেকে সংবিধানের ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার করা হয়েছে৷ ৩৭০ ধারার এক নম্বর উপধারার প্রয়োগ করে জম্মু ও কাশ্মীরকে দেওয়া বিশেষ সুবিধা প্রত্যাহারের নির্দেশিকা সই করেছেন দেশের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ৷ কেন্দ্রের আশঙ্কা, এর জেরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েত পারে অশান্তির আগুন। শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য দেশের প্রতিটি রাজ্যের মুখ্যসচিব এবং ডিজিপি-কে পাঠানো হয়েছে সতর্কতা নিয়ে বিশেষ নির্দেশিকা।পশ্চিমবঙ্গেও পাঠানো হয়েছে ওই নির্দেশিকা। এরপরই রাজ্যের সব পুলিশ সুপার এবং পুলিশ কমিশনারদের নবান্নের তরফে সতর্ক করা হয়।
এদিন নবান্নের তরফ থেকে প্রতিটি জেলা প্রশাসনকে কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী জেলাগুলিতে যেখানে যেখানে কাশ্মীরিরা থাকেন সেখানে বাড়তি নজরদারির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ উত্তর কলকাতার বউবাজার, বড়বাজারের পাশপাশি বেহালা, ঠাকুরপুকুর এবং বন্দর এলাকায় প্রচুর সংখ্যক কাশ্মীরিরা থাকেন। মূলত ব্যবসা কিংবা পড়াশোনার জন্য আসেন তাঁরা। তাঁদের ওপর কোনওরকম হিংসাত্মক ঘটনা ঘটবে না বলে অভয় দিয়েছে পুলিশ। সেই সব এলাকায় বন্দোবস্ত করা হয়েছে কড়া নিরাপত্তার৷ পিকেটিং ছাড়াও চালানো হচ্ছে নজরদারি। যে কোনওরকম অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে জানানোর অনুরোধ করা হয়েছে৷ লালবাজার সূত্রে খবর, ওইসব থানা এলাকার পুলিশ অফিসাররা গিয়ে কাশ্মীরিদের নিজেদের নম্বর দিয়ে এসেছেন।
এদিকে, জম্মু ও কাশ্মীর পুনর্গঠন বিল পাশ রাজ্যসভায় পাশ হওয়ার পর থেকে বেড়েছে গোষ্ঠী সংঘর্ষের আশঙ্কা৷ পরিস্থিতিকে হাতিয়ার করে কেউ কেউ ঝামেলা পাকাতে পারে বলে একাধিক সূত্রে খবর এসেছে লালবাজারে৷ রাজ্যের স্বরাষ্ট্রদপ্তরও সেরকমই আশঙ্কা করছে। ইতিমধ্যেই সোশাল মিডিয়ায় গুজব ছড়ানো শুরু হয়ে গিয়েছে। তাই নিরাপত্তা বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা রাখতে রাজ্যগুলিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের বার্তা, কড়া নজরে রাখতে হবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলিকেও। ইতিমধ্যেই সাইবার সেলকে সক্রিয় থাকার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা পুলিশ৷ হোয়াটসঅ্যাপ বা ফেসবুকে গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করলে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে লালবাজার। বিতর্কিত পোস্ট সরাতে ইতিমধ্যে ফেসবুক, টুইটার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কলকাতা পুলিশের কথা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে৷ কলকাতার অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার জাভেদ শামিম বলেন, ‘যে কোনও অশান্তি রুখতে সতর্ক রয়েছে কলকাতা পুলিশ। সতর্ক দৃষ্টি রাখা হচ্ছে সোশাল মিডিয়াতেও।’