মিসিং আগম কেবাঙের প্ৰতিষ্ঠাতা তাবুরাম টাইড মিসিং ভাষা-সাহিত্য ও সংস্কৃতির উন্নতির জন্য বহু আবদান রেখে গেছেন
অজানালোকে পাড়ি দিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, গবেষক-পণ্ডিত তাবুরাম টাইড। শনিবার সকাল ৭:৩০ মিনিটে গুয়াহাটির অ্যাপলো হাসপাতালে ৭৮ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন এই বিশিষ্ট পণ্ডিত।
প্রয়াত টাইডের পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, গত প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে জ্বর ও শ্লেষ্মাজনিত রোগে ভুগছিলেন তিনি। প্ৰথমে তাঁকে স্থানীয় নেমকেয়ার হাসপাতালে ভৰ্তি করা হয়েছিল। কিন্তু রোগের উপসর্গ বেড়ে যাওয়ায় পরিবারের সদস্যরা গত ১৩ আগস্ট বিশিষ্ট এই শিক্ষাবিদকে অ্যাপলো হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে ডাক্তাররা তাঁকে আইসিইউতে ভৰ্তি করে চিকিৎসা শুরু করেন। মূলত তিনি শ্বাস-প্ৰশ্বাসের পাশাপাশি ডায়াবেটিসের রোগী ছিলেন।
১৯৪২ সালের ১ আগস্ট তাবুরাম টাইডের জন্ম হয়েছিল উজান অসমের লখিমপুর জেলার প্রত্যন্ত মিসিং গ্রাম ঘুনাসুঁতি আয়েংগিয়ায়। তাঁর বাবা উবাং টাইড ছিলেন একজন কৃষক। শিক্ষাজীবনে তাবুরাম একজন অতি মেধাবী ছাত্ৰ হিসাবে খ্যাতি লাভ করেছিলেন। গ্রামেরই একটি প্ৰাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষা আরম্ভ করে হাইস্কুল শিক্ষা গ্ৰহণ করেছিলেন উত্তর-লখিমপুরে। হাইস্কুল শিক্ষার পর তিনি চলে যান কলকাতা। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৩ সালে ইংরেজি বিষষ়ে কৃতিত্বের সঙ্গে স্নাতক উত্তীর্ণ হয়ে পরবর্তীতে ১৯৬৬ সালে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্ৰি লাভ করেছিলেন পণ্ডিত তাবুরাম।
গুয়াহাটির প্রথমসারির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কটন কলেজে ইংরেজি বিষয়ের লেকচারার হিসাবে তিনি তাঁর কৰ্মজীবন শুরু করেছিলেন। এরই মধ্যে বৃত্তি লাভ করে ব্ৰিটেনে রিডিং ইউনিভার্সিটিতে অ্যাপ্লাইড লিংগুইস্টিকে স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা নেন।
তাবুরাম টাইড কেন্দ্ৰীয় লোকসেবা আয়োগ (ইউপিএসসি)-এর মাধ্যমে ইন্ডিয়ান ফরেন সার্ভিস (আইএফএস)-এর জন্য নিৰ্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু সে সময় শারীরিক অসুস্থতার জন্য চাকরিতে যোগদান করতে পারেননি।
অসমের এই বিশিষ্ট পণ্ডিত শিক্ষা বিভাগের প্ৰশাসনিক আধিকারিক হিসাবে বেশ কয়েকবছর কাজ করেছেন। শিক্ষা দফতরের ডিপিআই, এসসিইইআরটি অধিকর্তা, মাধ্যমিক শিক্ষা অধিকর্তা, উচ্চ শিক্ষা দফতরের অধিকর্তা, মাধ্যমিক শিক্ষা পরিষদের চেয়ারম্যান-সহ বহু উচ্চপদে নিষ্ঠা ও দক্ষতার সঙ্গে কাৰ্যনিৰ্বাহ করে গিয়েছেন তাবুরাম টাইড। পাশপাশি তিনি শিক্ষা সংস্কার কমিশন, সাহিত্য অ্যাকাডেমি, ন্যাশনাল বুক ট্ৰাস্ট, গুয়াহাটি এবং ডিব্ৰুগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাৰ্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য-সহ আরও বেশ কয়েকটিকে বিভিন্ন সম্মানীয় পদে খ্যাতির সঙ্গে কাজ করে গিয়েছেন।
মিসিং আগম কেবাঙের প্ৰতিষ্ঠাতা তাবুরাম টাইড মিসিং ভাষা-সাহিত্য ও সংস্কৃতির উন্নতির জন্য বহু আবদান রেখে গেছেন। কয়েকটি গবেষণালব্ধ এবং অন্য কয়েকটি রচনাগ্ৰন্থও রচনা করেছেন এই বিশিষ্ট পণ্ডিত। সাহিত্য জগতে অবদানের জন্য অসম সরকার তাঁকে সাহিত্যিক পেনশনও প্রদান করেছিল। মিছিং আগম কেবাং তাঁকে ২০০৭ সালে ‘আগম মিগাঙ’ সম্মানে সম্মানিত করেছে। মিসিং ভাষা-সাহিত্যে অবদানের জন্য ২০১০ সালে তাঁকে সাহিত্য অ্যাকাডেমি ‘ভাষা সম্মান’ পুরস্কারে ভূষিত করেছে। এছাড়া ২০১১-১২ সালে ‘ছুকাফা’ পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করা হয়েছে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, গবেষক-পণ্ডিত তাবুরাম টাইডকে।