ফের বউবাজারে ভেঙে পড়ল একাধিক বাড়ি

3 - মিনিট |

মেট্রোর কাজে ক্ষতিগ্রস্ত বউবাজারের বিস্তীর্ণ এলাকা। ঘটনাস্থলে পৌঁছলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে রয়েছেন সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কলকাতা মেট্রোর আধিকারিকেরা।

কে আর সি টাইমস ডেস্ক

সোমবার সকালেও বউবাজারে ভেঙে পড়ল একাধিক বাড়ি । দুর্গা পিথুরি লেন এবং স্যাকরাপাড়া লেনের পর হিদরাম ব্যানার্জী লেন এবং গৌর দে লেনেও অন্তত ১০ থেকে ১২টি বাড়িতে দেখা দিয়েছে ফাটল । বসে গেছে বেশ কয়েকটি বাড়িও । আতঙ্ক ছড়িয়েছে এলাকায় ।

সোমবার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে দিল্লি থেকে আসার কথা রয়েছে বিশেষজ্ঞ দলের । এছাড়া জার্মানি থেকেও বিশেষজ্ঞদের ডাকা হয়েছে । তাঁরা এসে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে রিপোর্ট দেবেন ।

স্থানীয় কয়েকজন জানিয়েছেন, ১৮ থেকে ২১ আগস্ট হোটেলে ছিলেন তাঁরা । তারপর বাড়ি ফেরেন । সে সময় মেট্রোর কাজ চলাকালীন বাড়িতে যা ফাটল দেখা দিয়েছিল তা মেরামত করে দিয়ে যায় কর্তৃপক্ষ । কিন্তু রবিবার রাতে ফের ওই এলাকার বেশ কিছু বাড়িতে ফাটল দেখা দেওয়ায় নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়েছে । কিন্তু সুড়ঙ্গ কাটার আগে তো মাটি পরীক্ষা করা হয়, তাহলে এমনটা কী ভাবে হল ? মেট্রো কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, টানেল বোরিং মেশিন দিয়ে সুড়ঙ্গ খোঁড়ার আগে মাটি পরীক্ষা করা হয়েছিল । কিন্তু তখন কোনও ওয়াটার পকেটের অস্তিত্ব ধরা পড়েনি । পরে বোঝা যায় এই এলাকায় মাটির নীচে তৈরি হয়েছিল একাধিক অ্যাকুইফার সাধারণ মাটি পরীক্ষায় এই ধরনের ওয়াটার পকেট বা অ্যাকুইফারের অস্তিত্ব টের পাওয়া য়ায় না । ওইসব অ্যাকুইফার একটি বড় এলাকা জুড়ে থাকে । ওই অ্যাকুইফার লিক করেই জল ঢুকে গিয়েছে সুড়ঙ্গে । এর ফলেই ওই ওয়াটার পকেট লাগোয়া মাটি বসে গেছে । মাটির ওপরে থাকা বাড়িতেও ফাটল দেখা দিয়েছে ।

রবিবার রাত পর্যন্ত ১৮টি বাড়ি থেকে আতঙ্কিত ২৮৪ জন বাসিন্দাকে বিভিন্ন হোটেলে সরিয়ে দিতে হয়েছে বলে জানান কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম । পুরো ধসেছে চারটি বাড়ি । ভীষণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত আরও অন্তত ১৪টি । ঘটনাস্থলেই খোলা হয়েছে স্পেশ্যাল কন্ট্রোল রুম । নম্বর: ৯৪৩২৬১০৪৭২ । আগামীকাল, মঙ্গলবার সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে নবান্নে বৈঠকে বসবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ।

ক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের প্রশ্ন, ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পের ধর্মতলা থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত সুড়ঙ্গের প্ল্যানে কোনও গলদ থেকে গেছে ? প্ল্যানে গলদ ছিল না বলে জানান কলকাতা মেট্রো রেল কর্পোরেশন লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মানস সরকার । তাঁর দাবি, মেট্রোর কাজের জন্য আগে যে ধরনের পরীক্ষানিরীক্ষা এবং মাটির নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা প্রয়োজন, সবই হয়েছিল যথাযথ ভাবে । ভারতে মেট্রোর ইতিহাসে এটি বিরলতম ঘটনা । তবে তিনি স্বীকার করেন, এমনটা যে ঘটতে পারে, এই প্রকল্পের ইঞ্জিনিয়ারেরা তা আন্দাজই করতে পারেননি । ম্যানেজিং ডিরেক্টর বলেন, ‘সাধারণত ভূগর্ভে বোরিংয়ের কাজ করার সময় জল উঠতে থাকে । সিমেন্ট ও রাসায়নিক দিয়ে তা রুখে দেওয়া হয় । কিন্তু শনিবার দেখা যায়, কোনও ভাবেই সেই জল বন্ধ করা যাচ্ছে না । বরং হুহু করে আরও জল ঢুকতে থাকে সুড়ঙ্গে । তার জেরেই এই বিপত্তি’। রবিবার রাতেও জলস্রোত ঠেকানো যায়নি । মেট্রো কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা, জল রুখতে না পারলে আরও বহু বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে । তাই এখন তাঁদের মূল লক্ষ্য, জল বন্ধ করা ।

জানা গেছে, দিল্লি থেকে ডাকা হয়েছে জিওফিজিওলজিস্টদের । তাঁরা এসে পরীক্ষা করে রিপোর্ট দেবেন । ইতিমধ্যেই তাঁরা টানেল বন্ধ করার কাজ শুরু করেছেন । টানেলের দুই প্রান্ত সিল করে দেওয়া হচ্ছে। যদিও এক ইঞ্জিনিয়রের ব্যাখ্যা, ‘ঘটনার দায় একা কারও ওপর চাপানো যাবে না । কলকাতা শহরের মাটির চরিত্র এমনই, যেখানে সুড়ঙ্গ খোঁড়ার সময়েই সতর্ক না হলে এধরনের বিপদ ঘটতেই পারে । তবে ফাটল দেখে মনে হচ্ছে, এটা স্থায়ী । আর বাড়বে না । বৃষ্টি না হলে বড় বিপদের আশঙ্কা নেই’। তবে এই সমস্যার চটজলদি কোনও সমাধান আছে বলেও মনে করছেন না বিশেষজ্ঞ ইঞ্জিনিয়াররা । ফলে এই মুহূর্তে বউবাজারের ঘটনা কলকাতা পুরসভার মূল মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ।

স্থানীয়রা জানান, শনিবার সন্ধ্যায় প্রথমে ভূমিকম্পের মতো এলাকার বেশ কয়েকটি বাড়ি কাঁপতে শুরু করে । বাড়ির গায়ে ও মেঝেতে ফাটল ধরে যায় ৷ আতঙ্কে রাস্তায় বেরিয়ে আসেন বাড়িগুলোর বাসিন্দারা ৷ তাঁরা দেখেন, রাস্তাতেও ফাটল ধরেছে ৷ এরই মধ্যে এলাকার একটি তিনতলা বাড়ির দেওয়াল দেওয়াল থেকে একটি বড় চাঙর খসে পড়ে ৷ রবিবার বেলার দিকে দুর্গা প্রিটোরিয়া স্ট্রিটের ২টি বাড়ি ভেঙে পড়ে । সন্ধের পর আরও দুটি বাড়ি ভাঙার খবর মেলে । ঘটনার পরই তৎপর হয়ে ওঠেন কলকাতা পুরসভার মেয়র । খবর পেয়ে তিনি মেট্রো কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকে বসেন । পরিস্থিতি দেখে মেট্রো কর্তারা মেনে নেন যে টানেল বোরিংয়ের কাজের জন্যেই বাড়ি ভেঙে পড়েছে ।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related news