সৃজিতের ‘গুমনামী’-কে সমর্থন জানাল বসু পরিবারের একাংশ

3 - মিনিট |

‘আর্য্যকুমার বোস লিখেছেন , ‘আমার ঠাকুরদাদা শরৎচন্দ্র বোস এবং সুরেশচন্দ্র বোস বিশ্বাসই করতেন না নেতাজি বিমান দুর্ঘটনায় মারা গেছেন । শাহনওয়াজ কমিটির বিরোধিতা করেছিলেন সুরেশচন্দ্র

কে আর সি টাইমস ডেস্ক

নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোসের অন্তর্ধান রহস্যকেই কেন্দ্র করে তৈরী হচ্ছে পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের নতুন ছবি ‘গুমনামী’ |তবে, সৃজিতের  ‘গুমনামী’ নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই|সেন্সর বোর্ডের তরফে  সবুজ সংকেত পাওয়ার পর মুক্তি পায় ছবির ট্রেলার|কিন্তু ট্রেলার মুক্তি পাওয়ার পরও বসু পরিবারের তরফে উঠেছিল ‘গুমনামি’ নিয়ে নানা বিতর্ক|তবে,অবশেষে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ছবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন বসু পরিবারের একাংশ | আর সে কথা ইন্সট্রাগ্রামে পোস্ট করে জানিয়েছেন পরিচালক সৃজিত নিজেই|

ছবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে নিজেদের বক্তব্য জানিয়েছেন বসু পরিবারের সদস্য জয়ন্তী  রক্ষিত, আর্য্যকুমার বোস, তপতী ঘোষ ও ইন্দ্রনীল মিত্র । জয়ন্তী রক্ষিত লিখেছেন , ‘নেতাজির যে বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে তা মানেনি মুখার্জি কমিশন । নেতাজির দাদা শরৎচন্দ্র বোসও এই ঘটনার কথা বিশ্বাস করতেন না । তিনি হাবিবুর রহমানকে পুণরায় প্রশ্ন করে জানতে পারেন তাঁর বয়ানে অসঙ্গতি রয়েছে ।

তাঁর প্রকাশিত নেশন নামক সংবাদপত্রে ১৯৪৯  সালে প্রকাশ হয়, নেতাজি চিনে রয়েছেন । একথা তিনি কিসের ভিত্তিতে লিখেছিলেন ? তার উপর লখনউয়ের অধীর সোম গুমনামী বাবা নামের এই বিশেষ সাধু যে নেতাজি, তা বিশ্বাস করেননি । একটি বই লিখেছিলেন গবেষণা করে । আমরা একটি গণতান্ত্রিক দেশের বাসিন্দা । আমাদের প্রত্যেকেরই বাকস্বাধীনতা রয়েছে ।

তাই নেতাজির অন্তর্ধান রহস্য নিয়ে যদি কোনও পরিচালক চলচ্চিত্র নির্মাণ করে থাকেন, আমি তাতে কোনও অন্যায় দেখতে পাই না|’আর্য্যকুমার বোস লিখেছেন , ‘আমার ঠাকুরদাদা শরৎচন্দ্র বোস এবং সুরেশচন্দ্র বোস বিশ্বাসই করতেন না নেতাজি বিমান দুর্ঘটনায় মারা গেছেন । শাহনওয়াজ কমিটির বিরোধিতা করেছিলেন সুরেশচন্দ্র । বিচারপতি মনোজকুমার মুখার্জিও বিরোধিতা করেছিলেন । একটি গণতান্ত্রিক দেশে কোনও পরিচালক নেতাজির অন্তর্ধান রহস্য নিয়ে ছবি তৈরি করতেই পারেন ।

এটা তাঁর নৈতিক অধিকারের মধ্যে পড়ে । মানুষ না জেনেশুনে যে রকম আচরণ করেছেন, আমি তার বিরোধিতা করছি|’তপতী ঘোষ লেখেন,    ‘স্বাধীন ভারতবর্ষের নেতারা নেতাজিকে এতটাই অবজ্ঞা করেছিলেন যে, ইতিহাস বইতে নেতাজি সম্পর্কে কিংবা আইএনএ  সম্পর্কে মাত্র একটা প্যারাগ্রাফই লেখা হয়েছে । ভারতবর্ষে নতুন প্রজন্ম নেতাজি সম্পর্কে কিছুই জানে না । এতগুলো বছর পর সৃজিত মুখার্জির মতো পরিচালকরা এগিয়ে এসে ছবি তৈরি করছেন নেতাজির অন্তর্ধান রহস্য নিয়ে । এটা তো নেতাজিকে বা তাঁর দেশের প্রতি অবদানকে সকলের সামনে তুলে ধরা ।

নেতাজি পরবর্তীকালে সাধু হয়েছিলেন, কি হননি, সেটা বিতর্কের বিষয় । নেতাজির বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যু সাজানো মিথ্যে রটনা ছাড়া কিছুই নয় । তাছাড়া নেতাজি কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নন । এই দেশের মানুষকে সেটা বিচার করতে দিন’|ইন্দ্রনীল মিত্র লিখেছেন , ‘নেতাজি আমাদের দেশের । তিনি শুধু বোস পরিবারের সদস্য নন ।

পার্লামেন্টে মুখার্জি কমিশনকে রাখার পরপরই তা খারিজ করে দেওয়া হয় । কেন খারিজ করে দেওয়া হয়, তার কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি আজ পর্যন্ত । হয়তো ভারতবাসীর সত্যি জানার অধিকার নেই । তার আগে সরকারের তরফে একটি কমিটি এবং কমিশন বসানো হয়েছিল নেতাজির অন্তর্ধান রহস্যকে কেন্দ্র করে । কোনওটি সঠিক পরিণতির কথা বলতে পারেনি । একমাত্র মুখার্জি কমিশন বলেছিল, নেতাজির মৃত্যু বিমান দুর্ঘটনায় হয়নি । বোস পরিবারের কয়েকজন সদস্য সেই কমিশনের অংশ ছিলেন ।

পরিচালক সৃজিত মুখার্জির সেই সাহস আছে, যেখানে তিনি মুখার্জি কমিশনের শুনানির উপর ভিত্তি করে গোটা রিপোর্টটাই দর্শকের সামনে তুলে ধরতে চাইছেন, একটি ফিচার ছবির মাধ্যমে । তিনি মুখার্জির কমিশনের বাইরে একটা কথাও বলেননি । আমার ভাবতে খুবই খারাপ লাগছে, যাঁরা কমিশনের অঙ্গ ছিলেন, তাঁরাই পরিচালক সৃজিত মুখার্জির বিরোধিতা করছেন ।

বোস পরিবারের মানুষজন যদি নিজেদের বক্তব্য প্রকাশ করতে পারেন, একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা সেটা পারবেন না কেন ? কেন তাঁকে আটকানোর চেষ্টা করা হবে|’১৯৪৫ সালের ১৮ আগস্ট শেষবারের মতো প্রকাশ্যে দেখা যায়  নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুকে। একটি বিমানে চড়ছিলেন তিনি।

ইতিহাস বলে, ভেঙে পড়েছিল সেই বিমান, অথচ বিমানের ধ্বংসাবশেষ অথবা নেতাজীর দেহ উদ্ধার হয় নি কখনও। তার পর থেকে বহু মানুষ বহুবার দাবি করেছেন, বেঁচে আছেন নেতাজী। কিন্তু কোনও নির্ভরযোগ্য প্রমাণ কেউ দেখাতে পারেন নি। পাশাপাশি, তাঁর মৃত্যুর প্রমাণও পাওয়া যায় নি আজ পর্যন্ত।

তিনি তারপরেও বেঁচে ছিলেন নাকি বিমান দুর্ঘটনাতেই মারা গেছিলেন তিনি এবিষয়েই এগোবে  পরিচালক সৃজিতের   আগামী ছবি ‘গুমনামী’ । প্রসেনজিৎ ছাড়াও এই ছবিতে দেখা যাবে অনির্বাণ ভট্টাচার্য, তনুশ্রী চক্রবর্তীকে।২ অক্টোবর মুক্তি পাবে   ‘গুমনামী’।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related news