উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রবেশদ্বার শিলিগুড়ি। শিলিগুড়ির তেনজিং নোরগে বাস টার্মিনাসকে অত্যাধুনিকভাবে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে।
কয়েক কোটি টাকায় ঢেলে সাজছে শিলিগুড়ির তেনজিং নোরগে বাস টার্মিনাস। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই কাজ হচ্ছে। পরিকাঠামো থেকে পরিচ্ছন্নতা, সব দিকেই নজর দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব।
উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রবেশদ্বার শিলিগুড়ি। শিলিগুড়ির তেনজিং নোরগে বাস টার্মিনাসকে অত্যাধুনিকভাবে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে। এই টার্মিনাস থেকে ভিনরাজ্য তো বটেই, ভিন দেশেও গাড়ি চলাচল করে। সরকারি ও বেসরকারি বাস চলে অনেক। প্রচুর বিদেশি পর্যটকও আসেন । সব দিক মাথায় রেখে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগেই তেনজিং নোরগে বাস টার্মিনাসের আধুনিকীকরণ করা হচ্ছে । সাজছে তেনজিং নোরগে বাস টার্মিনাস। যাত্রীদের বসার আসন, ডরমেটরির আধুনিকীকরণ হচ্ছে । বাড়ছে ঘরের সংখ্যা। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘর থাকবে। টার্মিনাসের ভেতরের স্টলগুলোও সাজানো হবে। পরিচ্ছন্নতায় গুরুত্ব দেওয়া হবে । বাস পার্কিংয়ের জায়গার সংস্কার হবে। দিল্লির একটি সংস্থা নকশা তৈরি করছে ।
ঠিক হয়েছে, টার্মিনাস থেকে এনবিএসটিসি সহ সমস্ত সরকারি বাসের স্ট্যান্ড অন্যত্র সরানো হবে। তেমনিই, সরানো হবে বেসরকারি বাস স্ট্যান্ডও। নতুন দুটি বাস স্ট্যান্ডের জমির ব্যবস্থা করবে শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ির উন্নয়ন পর্ষদ কতৃর্পক্ষ। শিলিগুড়িতে স্থানীয় বাসগুলোর জন্য মহানন্দা সেতু সংলগ্ন জায়গায় বাস টার্মিনাস তৈরি হবে । জলপাইগুড়ি, কোচবিহার রুটের বাসের জন্য জলপাইমোড়ে টার্মিনাল তৈরি হবে। তবে তেনজিং নোরগে টার্মিনাসের ক্ষেত্রে রেল নয়া নির্দেশিকা জারি করায় কিছুটা সমস্যা তৈরী হয়েছে। রেল কর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন বলে জানিয়েছেন পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব।
সরকারি সূত্রের সূত্রের খবর, এশিয়ান হাইওয়ের মাধ্যমে নেপাল, বাংলাদেশ ও ভুটানের সঙ্গে জুড়ে যাচ্ছে উত্তরবঙ্গ । শিলিগুড়ির শহরের বিভিন্ন প্রান্ত দিয়ে হাইওয়েগুলো যাবে। চার দেশের মধ্যে ভবিষ্যতে বাস সার্ভিস চালু হওয়ারও সম্ভাবনা। সেই কথা মাথায় রেখেই টার্মিনাসটি আমূল বদলের সিদ্ধান্ত ।
সরকারি সূত্রের খবর, নেপালের প্যানিট্যাঙ্কি থেকে ফুলবাড়ি হয়ে বাংলাদেশের বাংলাবান্ধা পর্যন্ত যাচ্ছে এশিয়ান হাইওয়ে-২ । ৩৩ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে ১১ কিলোমিটার ফোর লেন হবে। ৪৪০ কোটি টাকার প্রকল্পের ১২০ কোটি টাকা খরচ হয়ে গেছে । তেমনই, এশিয়ান হাইওয়ে-৪৮ কোচবিহারের চ্যাংরাবান্ধা থেকে ভুটানের জয়গাঁ পর্যন্ত যাচ্ছে। প্রায় ১১০ কিলোমিটার এই রাস্তার জন্য ৬৫০ কোটি টাকার মধ্যে ১৫০ কোটি খরচ হয়ে গেছে । দু’টি রাস্তার কাজই ২০১৭ সালের জুন মাসের মধ্যে শেষ হচ্ছে । তৈরি হবে চারটি উড়ালপুল। উত্তরবঙ্গের সঙ্গে বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটান যুক্ত হলেই সরকারি ও বেসরকারি বাস চলাচল শুরু হয়ে যাবে । ঠিক হয়েছে, বাস পার্কিং বে ছাড়াও বিমানবন্দরের ধাঁচে নতুন টার্মিনাসটিতে মার্কেটিং কমপ্লেক্স সহ যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যের নানা ব্যবস্থা করা হবে।
বর্তমানে তেনজিং নোরগে বাস টার্মিনাসের সামনের অংশ থেকে এনবিএসটিসি সহ সমস্ত সরকারি বাস রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত ও বিহার, ঝাড়খন্ড, সিকিমে যাতায়াত করে। পিছনের অংশে উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তের বেসরকারি বাসগুলো ছাড়ে । কিন্তু টার্মিনাসের অবস্থা নিয়ে সব সময়ই প্রশ্ন ওঠে । শৌচালয় থেকে বসার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা, বিশ্রামাগার কিছুই ঠিকঠাক নেই ।
সম্প্রতি উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের আর্থিক সাহায্যে বাসস্ট্যান্ডটির কিছু সংস্কারের কাজ হয়েছে । জংশন এলাকায় থাকা এই বাস টার্মিনাসকে ঘিরে সব সময় যানজট লেগেই থাকে । তাই মুখ্যমন্ত্রী এদিন সমস্ত লোকাল, স্টেট এবং বেসরকারি বাসকে এলাকা থেকে সরিয়ে দেওয়ার কথা বলেছেন । পরিবহণ দফতরের কয়েকজন আধিকারিক জানান, এশিয়ান হাইওয়ে চালু হলে উত্তরবঙ্গের অলিখিত রাজধানীতে গাড়ি চলাচল বাড়বে । বাগডোগরা থেকে শালুগাড়া পর্যন্ত ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কটিও চার লেনের তৈরি হবে । নেপাল, ভুটান বা বাংলাদেশের সঙ্গে বাস পরিষেবা শুরু হলে সেগুলোও মূলত শিলিগুড়িতেই আসবে । তাই তেনজিং নোরগে টার্মিনাসটির আধুনিকীকরণ প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। এদিন গৌতম দেব জানান, ৫ কোটি টাকা ব্যায়ে নতুন করে নির্মান করা হবে বাস টার্মিনাসের একাংশ। যাবতীয় রিপোর্ট পরিবহন দফতরের প্রিন্সিপ্যাল সেক্রেটারি ও পরিবহন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীরকে জমা দেবেন । তারপরেই শুরু হবে বাস টার্মিনাসের আধুনিকীকরণের কাজ।