‘ড্রাগন ম্যান’ কি নিকটতম পূর্বপুরুষ ?
KRC Times Desk
চীনের উত্তর-পূর্ব প্রান্তে প্রায় দেড় লক্ষ বছর আগের একটি খুলি থেকে নতুন ধরনের মানব প্রজাতির সন্ধান মিলেছে বলে বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন। যা আমাদের মানুষের বিবর্তন প্রক্রিয়া সম্পর্কে এতদিনের ধারনা বদলে দেবে বলে তাঁদের অভিমত। নিয়েন্ডারথালদের থেকেও এই প্রজাতি বর্তমান মানুষের নিকট পূর্বপুরুষ বলে বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন। এতদিন পর্যন্ত মানুষের বিবর্তনের যে ইতিহাস পাওয়া গেছে, সেই মানব ফ্যামিলি ট্রি-র থেকেও এরা নিকটবর্তী সময়ের বলে বিশ্লেষণ করেছেন বিজ্ঞানীরা। মাথার এই খুলির একটি বিশ্লেষণ সম্প্রতি ‘দ্য ইনোভেশন’ নামের একটি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। তারপরেই তা নিয়ে হই চই পড়ে গেছে।
মধ্য-প্লাইস্টোসিন যুগের এই খুলিটি প্রায় ১ লক্ষ ৪৬ হাজার বছর পুরানো। খুলিটি একটি ৫০ বছর বয়স্ক পুরুষের। গভীরে প্রোথিত চোখের কোটর, চারকোনা আকৃতির। ভ্রুর খাঁজ এবং দাঁত বড়। যদিও মুখমণ্ডলটি চওড়া, চেপ্টা, মোটা চোয়াল, চোখের নিচের ছোট হাড় ইত্যাদি থেকে বিজ্ঞানীদের সিদ্ধান্ত, এই ধরনের মানব প্রজাতি অনেক বেশি আধুনিক সময়ের বা বর্তমান মানুষের সঙ্গে সাদৃশ্য আছে এমন। বিজ্ঞানীরা এই ধরনের প্রজাতির নাম দিয়ে হোমো লোংজি বা ‘ড্রাগন ম্যান’।
যেখান থেকে এই করোটি উদ্ধার হয়েছে, সেই এলাকার নামের সঙ্গে সাযুজ্য রেখেই এই নামকরণ। লোংজি নামটি এসেছে লং জিয়াং থেকে, যার অর্থ হচ্ছে ‘ড্রাগন নদী’। ১৯৩৩ সালে প্রথম এই প্রজাতির মানুষের খুলির সন্ধান মেলে হারবিন এলাকায়। সেই নামেই নামকরণ করা হয় হারবিন ক্রেনিয়াম। জাপানি সৈন্যদের থেকে বাঁচাতে নাকি একটি কুয়োর মধ্যে তা লুকিয়ে রাখা হয়েছিল। ৮৫ বছর পর সেই কুয়ো খুঁড়ে এই খুলি বের করা হয় এবং হেইবেই জিও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জি কিয়াঙের হাতে তা তুলে দেওয়া হয় ২০১৮ সালে। লন্ডনের ন্যাচরাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের প্রখ্যাত নৃতত্ত্ববিদ ও গবেষণা প্রতিবেদনের সহলেখক ক্রিস স্ট্রিঞ্জার বলেছেন, বিগত সহস্রাব্দগুলোতে যেসব জীবাশ্ম পাওয়া গেছে, তার মধ্যে এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি আবিষ্কার। গবেষক দলের বিশ্লেষণ অনুযায়ী হারবিন গোত্রটি নিয়ান্ডারথালের পরিবর্তে বর্তমান মানুষের সঙ্গে বেশি নিবিড়ভাবে সংযুক্ত।
এটি যদি একটি সম্পূর্ণ নতুন ধরনের প্রজাতি হয়ে থাকে, তাহলে এটিই সম্ভবত মানুষের সঙ্গে সবচেয়ে কাছের আত্মীয়। এটি মানবতার ভিন্ন একটি শাখা যা হোমো স্যাপিয়েন্স হওয়ার পথে ছিল না। তবে চীনের ওই অঞ্চলে কয়েক লক্ষ বছর ধরে বিবর্তিত হওয়া এক প্রজাতি, যা পরে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। চায়নিজ অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস এবং শিজিয়াঝুয়াঙ প্রদেশে হেবেই জিও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জিজুন নি বলেছেন, এই আবিষ্কারের মাধ্যমে আমরা বহু আগে হারিয়ে যাওয়া এক বংশধরকে খুঁজে পেয়েছি। গবেষণা দলের মতে, খুলিটি একজন ৫০ বছর বয়সি পুরুষের, যে গাছপালা ঘেরা উর্বর এলাকায় থাকত। ক্রিস স্ট্রিঞ্জার জানিয়েছেন, লংজির গোত্রের সদস্যরা সম্ভবত শিকারি ও খাদ্য সংগ্রহকারী ছিল। হারবিন অঞ্চলের বর্তমান শীতকালীন আবহাওয়া পর্যালোচনা করে বিজ্ঞানীদের দাবি, লংজি-রা নিয়ান্ডারথালদের থেকেও বেশি ঠান্ডা পরিবেশে বসবাস করত। লোংজি প্রজাতির প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকার জন্য অভিযোজন হয়েছিল এবং খুব সম্ভবত এশিয়া মহাদেশ জুড়ে তাদের বসবাস ছিল। দীর্ঘ গবেষণার ফলাফল ব্যাখ্যা করে ক্রিস স্ট্রিঞ্জার বলেছেন, হারবিন ছাড়াও চীন থেকে সংগৃহীত আরও কিছু জীবাশ্ম নিয়ান্ডারথাল ও হোমো স্যাপিয়েন্সেত পর তৃতীয় একটি মানব প্রজাতির অস্তিত্বের কথা নিশ্চিতভাবেই জানাচ্ছে।