সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় শাসক দল ঘনিষ্ঠ ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ
প্রাথমিক শিক্ষা ইংরেজি নিয়ে বিতর্ক থামতেই চাইছে না। শিক্ষা ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে যা নিয়ে এই মুহূর্তে রাজ্য রাজনীতির তোলপাড়। সরকারের এই সমস্ত পদক্ষেপে বিরোধিতায় মাঠে নেমেছে আসু
সহ বিভিন্ন সংগঠন । এমনকি শাসক দলের ঘনিষ্ঠ ছাত্র সংগঠ ন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ প্রাথমিক স্তরে ইংরেজি প্রবর্তনের তীব্র বিরোধিতা করেছে।কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা জানিয়ে দিয়েছেন, কোন অবস্থায় সরকার তার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছে না। শিক্ষা ক্ষেত্রে কি এমন সিদ্ধান্ত সরকার নিয়ে ফেললো যা নিয়ে এত হইচই রাজ্যে।
প্রথম যে সিদ্ধান্তটি সরকার নিয়েছে সেটা হল তৃতীয় শ্রেণি থেকে বিজ্ঞান ও গণিত ইংরেজিতে পড়ানো হবে। মানে মাতৃভাষা যে সব স্কুল আছে সেগুলিতেও মাধ্যম হিসেবে এই দুই বিষয়ের জন্য ইংরেজি থাকবে। অর্থাৎ এই বিষয়ে বাংলা বা অন্য কোন মাতৃভাষায় পড়ানো হবে না। আর আরেকটা হল, ১২৬ টি বিধানসভা কেন্দ্রের প্রতিটিতে একটি করে সরকারি ইংরেজির মাধ্যম স্কুল থাকবে। যে স্কুলগুলি সিবিএসইর অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এই দুই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নেমে পড়েছে আসুসহ বিভিন্ন সংগঠন। আসুর উপদেষ্টা সমুজ্জ্বল কুমার ভট্টাচার্য বলেছেন, এতে মাতৃভাষার স্কুলগুলিকে ধ্বংস করা হবে। তিনি অসম বিজ্ঞান সমিতির কর্মকর্তাদের বক্তব্য থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, বিজ্ঞান ও গণিত শিখতে হলে মাতৃভাষা সেরা মাধ্যম। একথা প্রসিদ্ধ বিজ্ঞানীরাই বলছেন।তাহলে সরকার কেন এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই তিনি এই দুই বিষয়ে ইংরেজি ভাষা প্রয়োগের বিরোধিতা করেছেন। প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্রে একটি করে ইংরেজি মাধ্যম স্কুল স্থাপিত হলে মাতৃভাষা মাধ্যমের স্কুলগুলির মানের আরও অবনমন ঘটবে। এইসব যুক্তি উপস্থাপন করা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী এই সমস্ত যুক্তিকে উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, আমরা সিদ্ধান্ত নেব কি আসুকে জিজ্ঞেস করে। তাহলে তো আসুর অফিসে আমাদের অফিস করতে হবে। তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, শিক্ষার মানের উন্নতি করতে গেলে এই পদক্ষেপ নিতেই হবে। সবাই নিজেদের সন্তানকে ইংরেজি মাধ্যমে পড়াবেন। গরিবদের সন্তানদের যখন ইংরেজি শেখানোর কথা আসবে তখন বিরোধিতা। এসব কোন অবস্থায় মানা হবে না। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমার ছেলে মেয়েরা ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করেছে। অসম সাহিত্য সভার সভাপতি কুলধর শইকিয়ার ছেলে মেয়েরাও ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করেছে। তখন সমস্যা হয় না। তাই সরকার যা সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটা সঠিক সিদ্ধান্ত। আসুর উপদেষ্টা সমুজ্জ্বল ভট্টাচার্যকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, ছাত্র সংস্থার উপদেষ্টা হওয়ারও একটা বয়স থাকতে হয়। যারা বিতর্ক করছেন তাদের সব সন্তানরাই ইংরেজি মাধ্যমে পড়ছেন। এছাড়া যাদের ভোটে তিনি জিতেছেন, তাদের কথাই শুনবেন। সংগঠনের কথা শুনে সিদ্ধান্ত নেবেন না।
সমুজ্জ্বল ভট্টাচার্য আরেকটা প্রস্তাব দিয়েছেন, যে মাতৃভাষার মাধ্যম গুলিতে ইংরেজি শিক্ষাকে বা যে বিষয়টি ইংরেজিতে পড়ানো হয় সেটাতে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। কিন্তু তারা তৃতীয় শ্রেণীর থেকে গণিত ও বিজ্ঞান ইংরেজি মাধ্যমে পড়ানোর তীব্র বিরোধিতা করেছেন। এই বিষয়টা নিয়ে সরকার ও বিভিন্ন সংগঠনের মধ্যে দ্বন্দ্ব চরমে উঠেছে। সরকারের সাফ কথা, রাজ্য শিক্ষার ক্ষেত্রে মানোন্নয়ন ঘটাতে হলে এ ধরনের পদক্ষেপ নিতেই হবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, আমরা তো আর অন্ধ্রপ্রদেশের মত মাতৃভাষা শিক্ষাকে স্কুল পর্যায় থেকে উঠিয়ে দিচ্ছি না। শুধুমাত্র দুটো বিষয় ইংরেজিতে পড়ানো হবে। এতে ছাত্রদের অনেকটা মানের উন্নতি হবে। সরকার মাতৃভাষা স্কুল ধ্বংস করে দেওয়ার চেষ্টা করছে এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তিনি এই মন্তব্য করেন।
Advertisement
আসলে প্রাথমিক শিক্ষায় ইংরেজি কতটুকু গ্রহণযোগ্য হবে এ নিয়ে বিতর্ক কিন্তু চলছে বহুকাল থেকে। তবে এটা ঠিক ইংরেজি ভাল না জানার জন্য মাতৃভাষা মাধ্যমের বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় পিছিয়ে থাকে। এর মধ্যে ব্যাতিক্রম নেই এমন নয়। তবে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষা করার কথা সরকার বারবার বলছে।
এ বিষয়টি নিয়ে আপাতত রাজ্য জুড়ে বিতর্ক চলছে। কিন্তু সরকার যেভাবে সিদ্ধান্তে অনঢ় রয়েছে তাতে মনে হচ্ছে এই সিদ্ধান্ত এই রাজ্যে কার্যকর হবেই। “গরিব পড়ুয়াদের “স্বার্থে সরকার এই কাজ করবেই। দৃঢ়ভাবে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। তাই যাবতীয় বিতর্কের মাঝেও ইংরেজি নিয়ে সিদ্ধান্ত সরকার কার্যকর করছে এটা নিশ্চিত।
Advertisements | 5E For Success