ছাত্র কম,অসমে বন্ধ হচ্ছে কয়েকশো স্কুল

3 - মিনিট |

জনগণের মতামত জানতে চাইলেন শিক্ষামন্ত্রী

চয়ন ভট্টাচার্য

অসম সরকার কিছু স্কুলকে একত্রিকরন করে অনেক স্কুল বন্ধ করে দিচ্ছে। আর মেট্রিকে একজনও পাস করে নি এমন ৩৪ টি স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। যার মধ্যে বরাক উপত্যকার সাতটি স্কুল আছে। এসব সিদ্ধান্ত নিয়ে জনমনে প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকেই বলছেন, স্কুলের ছাত্র হয় না এর জন্য স্কুল বন্ধ করে দেওয়ায় অনেক সমস্যা দেখা দেবে। যে এলাকায় স্কুল বন্ধ হয়েছে সেই এলাকার ছাত্রছাত্রীরা পড়াশোনার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে।

এছাড়া মাধ্যমিকে একজনও পাস না করার জন্য যাদের শাস্তি পাওয়া দরকার ,তারা না পেয়ে অন্য ক্লাসের ছাত্ররা কেন শাস্তি পাবে। এখানে শাস্তি পাওয়া উচিত ছিল সেইসব স্কুলের শিক্ষকদের, বা স্কুল পরিদর্শকের। তারা ঠিকঠাক স্কুল পরিচালনা করতে পারেননি। কিন্তু এর জন্য গোটা স্কুলটাই উঠিয়ে দেওয়া হবে? ওই এলাকার পড়ুয়ারাদের ৬-৭ কিলোমিটার দূরে অন্য স্কুলে পড়তে হবে। এইসব ছাত্ররা এই স্কুল থেকে আগামীতে মেট্রিক দিলে একজনও পাস করবে না তার নিশ্চয়তা কোথায়। শাস্তি দিলে সংস্লিষ্ট স্কুলের শিক্ষকদের দেওয়া উচিত। কিন্তু তা না করে গোটা স্কুলকে বন্ধ করে দেওয়ায় প্রতিটি এলাকায় ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। নরসিংপুরের একটি স্কুলকে এভাবে বন্ধ করে দেওয়ার প্রতিবাদ হচ্ছে। এছাড়া স্কুল একত্রীকরণের নীতির ফলে চিরতরে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অনেক ঐতিহ্যবাহী স্কুল।

এক্ষেত্রে সরকারের যুক্তি হলো ,স্কুলের ছাত্র নেই তাহলে স্কুলে রেখে কি লাভ হবে। কিন্তু বেশিরভাগ সরকারি স্কুলে দেখা যাচ্ছে ছাত্র সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু কিছু স্কুলে ছাত্র সংখ্যা বাড়ছে না, এর জন্য স্কুল বন্ধ করে দিতে হবে এই নীতি ওই এলাকার জনগণ মানতে চাইছে না। কারণ সমস্যার সমাধান না করে স্কুলটাই বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে সরকারের বক্তব্য হল, এত টাকা মাইনে দিয়ে শিক্ষক রেখে যদি এই রেজাল্ট হয় তাহলে লাভ কি। আর ছাত্ররা যদি না আসে তাহলে স্কুল রাখার কোন যৌক্তিকতা থাকে না।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু আশ্চর্যের কথা হচ্ছে রেজাল্ট খারাপ হওয়ার জন্য শিক্ষকদের কোন ক্ষতি হচ্ছে না। তাদের চাকরিতে থাকছে, মোটা মাইনেও পাবে ন। তাদের অন্য জায়গায় বদলি করা হবে। স্কুল ভালো না চলার জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ, শিক্ষক বা স্কুল পরিদর্শককে দায়ী না করে দোষী সাব্যস্ত করা হলো এলাকার অভিভাবক ছাত্র-ছাত্রীদের।

দশম শ্রেণীর ছাত্র ম্যাট্রিক পাস করতে পারে না, তার জন্য শাস্তি পেতে হবে স্কুলের সব ছাত্রদের। এটা কেমন নীতি কেমন যুক্তি, প্রশ্ন করছেন অভিভাবকরা।রনজ পেগু এট দ্য রেট অফ জি মেল ডট কম। এই ইমেলটা শিক্ষামন্ত্রী রনজ পেগুর। সরকারি স্কুল বন্ধ করা উচিত হবে কিনা এ নিয়ে জনসাধারণের মতামত জানতে চাওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

আরও একটি প্রশ্ন উঠেছে এই এমালগ্যামিশন বা একত্রিকরণ নিয়ে। ছাত্র কেন আসছে না সেটা না দেখে বা এই সমস্যার সমাধান না করে একটি স্কুলকে তার তিন কিলোমিটার দূরে আরেকটা স্কুলের সঙ্গে মিলিয়ে দিলে কি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে? এতে এই এলাকা শিক্ষার ক্ষেত্রে আগামীতে আরও পিছিয়ে যাবে। এযেন শিক্ষার ক্ষেত্রে উল্টো যাত্রা। বরাক উপত্যকা সহ সারা রাজ্য থেকে এভাবে প্রতিবাদ হচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় নাগরিক সভা হচ্ছে।

‌এসব সম্মিলিত প্রতিবাদের ফলে শিক্ষামন্ত্রী রনজ পেগু এখন চাইছেন জনগণের মতামত নিতে। কারণ কয়েকশো স্কুল রাজ্যে বন্ধ হতে যাচ্ছে। যে ইমেইল এড্রেস দিয়েছেন সেটাতে মতামত জানাতে বলেছেন শিক্ষা মন্ত্রী। অর্থাৎ সরকার এ বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছে। অযথা ব্যয় আটকাতে সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু এতে একটি এলাকাকে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে এই বিষয়টাও সমান সত্য। আসামে যে ৪৫ হাজার স্কুল রয়েছে। এগুলো একটির সঙ্গে আরেকটি র দূরত্ব একটি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে রাখা হয়েছে ‌।

তাই বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদের অভিমত, এতে অন্য সমস্যা তৈরি হবে। সকলের জন্য শিক্ষার অধিকারের যে সাংবিধানিক স্বীকৃতি রয়েছে সেটা এক্ষেত্রে ব্যহত হবে। একটা সময় ছিল গ্রামে গঞ্জে পাঁচ ছয় কিলোমিটার হেঁটে অল্প কিছু ছেলে মেয়ে স্কুলে যেত।বাকিরা নিরক্ষর হয়ে থাক ত। আর যখন স্কুল এক কিলোমিটার অন্তরের মধ্যে একটা করে গড়ে তোলা হলো তখনই দেখা গেল শিক্ষার হার বেড়েছে। এখন আবার সেই পাঁচ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে স্কুলে যাওয়া গল্পের দিন কি ফিরে আসছে? এই বিষয়টা ভাবাচ্ছে শিক্ষামন্ত্রীকেও।

বিজ্ঞাপন

For enquiries in NE India and West Bengal write to- krcfoundation@gmail.com

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *