উদ্বাস্তু বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সমস্যা সমাধান এখনও অনিশ্চয়তার মধ্যে!
অসমের বাসিন্দা 28 লক্ষ মানুষের আধার কার্ডের সমস্যা সেই তিমিরেই!খুব সহজে মিটছে না ঝামেলা! বুধবার এই বিষয়টি নিয়ে শিলচরের তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী সুস্মিতা দেবের করা মামলাটি ওঠে সুপ্রিম কোর্টে। কিন্তু শুনানিই হয়নি এ দিন! তালিকায় 22 নম্বরে থাকা এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ঠিক হয়েছে আরও দু’সপ্তাহ পর। এমনটাই বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন রাজ্য সভার সদস্য তথা তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী সুস্মিতা দেব।
এনআরসির প্রথম খসড়া তালিকায় যাদের নাম বাদ গিয়েছিল তাদের আধার কার্ড তৈরি করার বিষয়টি থমকে আছে। ফলে গোটা অসম জুড়েই একটা বড় সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে । বিশেষ করে পূর্ব পাকিস্তানের (অধুনা বাংলাদেশের) উদ্বাস্তু বাঙালি হিন্দুরা এনআরসির প্রথম খসড়া তালিকার নাম বাদ যাওয়ার পর থেকেই সমস্যায় রয়েছেন। যারাই পরে এনআরসিতে নাম তুলতে গিয়েছেন, তাঁদের বায়োমেট্রিক্স নেওয়া হয়।হাতের আঙ্গুলের ছাপ ও চোখের মনির স্ক্যান করে ছবি নেওয়া হয়।
এরপর তাঁদের মধ্যে বেশিরভাগের নামই এনআরসি-র চূড়ান্ত তালিকায় উঠেছে। কিন্তু প্রচুর নাম এনআরসির চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদও পড়ে। দেখা যায় এনআরসির চূড়ান্ত তালিকায় নাম উঠলেও যখনই পরবর্তী সময়ে নাম ওঠা ব্যক্তিরা আধার কার্ড করতে গিয়েছেন , তখনই তাঁদের সমস্যায় পড়তে হয়েছে! তাঁদের আধার কার্ড প্রক্রিয়াই ব্লক করা রয়েছে দেওয়া। অর্থাৎ এনআরসির চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের আধার কার্ড ব্লক থাকবে।
বিজ্ঞাপন
কিন্তু কবে হবে এনআরসি , ব্লকই বা ছুটবে কবে? এনিয়ে চূড়ান্ত অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন অসমের লক্ষ- লক্ষ নাগরিক! তাঁদের আধার কার্ড তৈরির প্রক্রিয়া থমকে আছে! ঘোর অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা!এরমধ্যে কয়েক লক্ষ স্কুল,কলেজ , বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষার্থী ছাত্রছাত্রীও আছেন। যারা আধার কার্ড না থাকায় প্রবল সমস্যার মধ্যে । বাইরের বিভিন্ন রাজ্যে উচ্চ শিক্ষা নিতে গিয়ে ভর্তি হতে পারছেন না । অনেকেই কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন পদে চাকরির আবেদন করেছেন তাঁরাও আধার কার্ডের জন্য আবেদনপত্র জমা দিতে পারছেন না! গত তিন বছর ধরেই আধার কার্ড পাওয়া থেকে বঞ্চিত অসমের একটি বড় অংশের নাগরিক।
এইসব বঞ্চিত নাগরিকদের হয়েই সাংসদ সুস্মিতা দেব সুপ্রিম কোর্টে একটি জনস্বার্থ সম্পর্কিত মামলা করেন। এই মামলার প্রথম শুনানিতে রাজ্য সরকার আরও কিছু সময় চায়। রাজ্য সরকারের বক্তব্য ছিল, সলিসিটর জেনারেলের কোভিড হয়েছে তাই তারা কিছু সময় চাইছে। পরে অবশ্য আদালতের চাপে মামলার শুনানিতে অংশ নেন সলিসিটর জেনারেল।
গত 24 আগস্ট এই মামলার শুনানিতে অসম সরকার রাজ্যের প্রায় 28 লক্ষ লোকের আধার কার্ড দিতে যে জটিলতা রয়েছে তা মেনেছে। অসম সরকার সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিয়ে বলেছে, আধার কার্ডের বিকল্প হিসেবে কোনও নথি দিতে তাদের কোনও আপত্তি নেই । ফলে আধার কার্ড আক্রান্ত জটিলতা ঝুলেই আছে!
এ দিকে সুস্মিতা দেব এই বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন,”অসম সরকারের দেওয়া বিকল্প নথি কতটা কাজে আসবে গুজরাট, তামিলনাড়ু বা উত্তরপ্রদেশ সহ দেশের বিভিন্ন রাজ্যে যাওয়ার পর ? উত্তর ,মধ্য বা দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে সরকারের কাছে কতটা মান্যতা পাবে অসম সরকারের দেওয়া এই বিকল্প নথি? আধারকার্ডের বিকল্প হিসেবে অসম সরকারের দেওয়া নথি কি আদৌ নাগরিকত্বের মান্যতা পাবে তো ?এসব বিষয় এখনও ঝাপসা।
সুস্মিতা দেব বৃহস্পতিবার জানান, এই মামলাটির শুনানি হওয়ার কথা ছিল বুধবার। কিন্তু তা হয়নি সময়ের অভাবে। তালিকার শেষ দিকে ছিল এই মামলাটি। উপস্থিত ছিলেন তাঁর আইনজীবী সহ সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেলও। কিন্তু অন্য মামলার শুনানি শেষ হতে হতেই আদালতের সময় অতিক্রান্ত হয়ে যায়। তাই এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন পিছিয়ে গিয়েছে আরও দু’সপ্তাহ।
এই মামলার রায় ঘোষণা করা হলে অসমের একটা বড় অংশের লোক স্বস্তির নিঃশ্বাস ত্যাগ করবেন। অন্তত আধার কার্ডের সমস্যা মিটবে। কিন্তু এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন পিছিয়ে যাওয়ায় সিঁদুরে মেঘ দেখছেন তাঁরা।
Advertisement