দুই মামলায়ই আবেদনকারীর মূল লক্ষ্য ৫১ সালকে ভিত্তিবর্ষ করা
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে পরিস্থিতির ক্রমেই জটিল হচ্ছে। গত সোমবার সুপ্রিম কোর্ট এই মামলার পরবর্তী শুনানি ৩১ অক্টোবর ধার্য করেছে। সেটা বড় কথা নয়। এখানে একটা বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সুপ্রিম কোর্ট এক্ষেত্রে আসাম ও ত্রিপুরা সরকারের মতামত জানতে চেয়েছে। হঠাৎ এভাবে কেন আসাম ও ত্রিপুরার মতামত জানতে চাওয়া হল এ নিয়ে একটা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ২০০টি সংগঠন এই আইন বাতিল করতে আদালতে মামলা করেছে। সবগুলি আবেদনপত্রকে এক জায়গায় এনে সুপ্রিম কোর্ট এই মামলা শুনানি গ্রহণ করেছে।
গত ১২ তারিখ সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্র কে বলেছে এই বিষয়ে যে প্রশ্নগুলো উঠে আসছে সে সম্পর্কে সরকার তার মনোভাব জানাক।সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতাকে আদালত পরামর্শ দিয়েছে ,তিনি যাতে এই বিষয়ে সিনিয়র আইনজীবী কপিল শিবালের সহযোগিতা নেন। নাগরিকত্ব আইন কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে প্রথম মামলা করেছে কেরালা সরকার। এরপর যারা মামলা করেছেন তারা হলেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র, অসম বিধানসভায় কংগ্রেসের নেতা দেবব্রত শইকিয়া, আসাম এডভোকেট অ্যাসোসিয়েশ সহ ২০০ টি সংগঠন।
এছাড়াও আছে ট্রাইবেল মহাসংঘ সহ কিছু খিলঞ্জিয়া সংগঠন। আসু সহ সবকটির খিলঞ্জিয়া সংগঠন এই সময় দিল্লি থেকে এই মামলার পক্ষে সমর্থন জোগাড় করেছে। তারা দক্ষ আইনজীবী ও রেখেছে। অন্যদিকে এই আইন যারা সবচাইতে বিশেষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে সেই বাঙ্গালীদের পক্ষে কোন ভাল আইনজীবী নেই। একমাত্র সরকারি আইনজীবী যা বলার বলছে ন।
এখানে লক্ষ্যনীয় বিষয় হলো সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে যে মামলাগুলো করা হয়েছে সেখানে আবেদনকারীদের বক্তব্য হল হল বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে ধর্মীয় কারণে নির্যাতিত যে ছয়টি সম্প্রদায়ের কথা বলা হয়েছে সেখানে মুসলমান নেই। তাই এই আইন দেশের ধর্মনিরপেক্ষ পরিকাঠামোর বিরোধী। আর আসাম থেকে যে সংস্থাগুলি আবেদন রেখেছে, তাদের বক্তব্য হলো এই আইনের ফলে অসংখ্য বিদেশি অনুপ্রবেশকারী নাগরিকত্ব পেয়ে যাবে। যা আসামের জনবিন্যাসকে ব্যাহত করবে।
সারা দেশে যেখানে ১৯৫১ সালকে নাগরিকত্বের ভিত্তি করা হয়েছে সেখানে আসামে কেন হবে না। এই প্রশ্ন তাদের আবেদনপত্র তোলা হয়েছে। তাই এই আইন বাতিলের দাবি তারা জানিয়েছে।
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বাঙালি হিন্দু উদ্ভাস্তদের জন্য একটা রক্ষা কবচ হতে পারে। এমনটা ভাবছেন অসমের বাঙালি হিন্দুরা। তাই স্বভাবতই শঙ্কিত রয়েছেন এই সম্প্রদায়ের মানুষ। যদিও দুই বছর হয়ে গেল নাগরিকত্ব আইনের রুলস এখনো তৈরি হয়নি। তাই এই আইন এখন পর্যন্ত বাঙালি হিন্দুদের কোন কাজে আসেনি। কিন্তু তারপরও আইনকে বাতিল করতে উঠে পড়ে লেগেছে বিভিন্ন সংগঠন।
আসাম সরকার আগামী ৩১ অক্টোবরের ভেতর এই আইন সম্বন্ধে তাদের অবস্থান কি জানায় সেটাই দেখার বিষয়। তবে আসাম ও ত্রিপুরা উভয়রাজ্যে বিজেপি সরকার রয়েছে। তাই এক্ষেত্রে আইনের পক্ষেই মতামত আসবে। কিন্তু এই বিষয়ে হঠাৎ ত্রিপুরাকে কেন জড়ানো হলো সেটা একটা বড় প্রশ্ন। গত দুই তিন বছর থেকে ত্রিপুরায় বাঙালি বিরোধী একটা আন্দোলন শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক দল টিপরমাথা সব সময় বাঙালি বিরোধী বক্তব্য রাখছে। তারা নাগরিকত্ব আইনের ঘোর বিরোধী।
এদিকে সিএএ বিরোধী এসব মামলার পাশাপাশি আরেকটি মামলা চলছে সেটা হল ছয় নম্বর ধারা সংক্রান্ত মামলা। এই মামলায় ১৯৫১ সাল কে ভিত্তি বর্ষ করার দাবি জানানো হয়েছে। এসব মামলায় যদি রায় বাঙালির বিপক্ষে যায় তাহলে কিন্তু ভয়ানক সংকট দেখা দেবে। কারণ বাঙালি পক্ষ কোন বড় আইনজীবী রাখতে পারছে না।
যদিও সরকার এই আইনে নিজেদের সমর্থনের কথা স্পষ্টভাবে জানাচ্ছে। রাজ্য সরকার সাফ জানিয়ে দিয়েছে নাগরিকত্ব আইন সমর্থন থেকে তারা বিন্দুমাত্র সরছে না। কিন্তু ৫১ সালের বিরোধিতা করে আদালতের সামনে যদি যুক্তি রাখা না যায় তাহলে কিন্তু রায় বিপক্ষে যেতে পারে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বাঙ্গালি সমাজ। চাকরি জমির অধিকার সবকিছু থেকে বঞ্চিত হওয়া সম্ভাবনা রয়েছে। তাই আদালতে এই দুই মামলা যদি ভালোভাবে লড়তে না পারা যায় তাহলে কিন্তু বিরাট সংকট দেখা দেবে।
কারণ নাগরিকত্ব আইনের সঙ্গে ৬ নম্বর ধারা সংক্রান্ত মামলা র একটা সংযোগ রয়েছে। কারণ দুটি আইনেই ভিত্তি বর্ষের প্রশ্ন জড়িত রয়েছে। ৬ নম্বর ধারা আইনে ৭১ সাল কে বাদ দিয়ে৫১ সাল কে ভিত্তি বর্ষ ধরার আবেদন জানানো হয়েছে। নাগরিকত্ব আইনে ২০১৪ সাল কাট অফ ইয়ার বাদ দিয়ে ৫১ সালকে ধরার আবেদন জানানো হয়েছে।
তাই এই দুটি মামলায় অসমের বাঙালির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। লড়াইটা কিন্তু আইনের। তাই আইনি পথে এটা মোকাবিলা না করতে পারলে সমস্যা তৈরি হবে। তখন বিষয়টা সরকারের হাতে থাকবে না। ৩১ অক্টোবর নাগরিকত্ব আইন নিয়ে সরকার কি অবস্থান জানায় সেটাই দেখার বিষয় ।
এনআরসির সংক্রান্ত সমস্যা এখনো মেটেনি। তিন বছর আগে সমস্যা যে জায়গায় ছিল সেই জায়গায় দাড়িয়ে রয়েছে। এই অবস্থায় যদি ভিত্তি বর্ষ নিয়ে কোন ধরনের রায় বেরিয়ে যায় তাহলে বাঙ্গালীদের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে।