অসমে এনআরসির কি কোল্ড স্টোরেজে যাচ্ছে?

3 - মিনিট |

রাজ্য সরকার এখন এনআরসি নিয়ে উৎসাহী নয়

চয়ন ভট্টাচার্য

এনআরসির ভবিষ্যৎ কি হবে? এই মুহূর্তে এটাই বড় প্রশ্ন। রাজ্য সরকার সরাসরি কোনদিনই বলেনি যে এনআরসি তারা চায় না। কিন্তু রাজ্য সরকারের কার্যকলাপ বা বিভিন্ন হলফনামা থেকে প্রতীয়মান হয় সরকার এনআরসি নিয়ে উৎসাহী নয়। ২০০ টি বিদেশি শনাক্তকর ট্রাইব্যুনালের সময়সীমা বৃদ্ধি না করার যে সিদ্ধান্ত রাজ্য সরকার নিয়েছে তাতেই প্রমাণিত সরকার এই এনআরসি নিয়ে মোটেই আগ্রহী নয়।

এসব বিদেশি শনাক্তকরণ ট্রাইব্যুনাল খোলা হয়েছিল, এর পেছনে একটা উদ্দেশ্য ছিল। ২০১৯ সালের ৩১ আগস্ট চূড়ান্ত খসড়া এনআরসি তালিকা প্রকাশ করার পর ১৯ লক্ষ লোকের নাম এই তালিকা থেকে বাদ পড়ে। এই বাদপড়া ব্যক্তিদের সরাসরি বিদেশি বলা যাবে না। তাই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল এনআরসির চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ পড়া প্রত্যেককে রিজেকশন স্লিপ দেওয়া হবে।

২০২০ সালের ডিসেম্বরের ভেতরে এই রিজেকশন স্লিপ দেওয়ার কথা ছিল। এই স্লিপ পাওয়ার পর এনআরসিছুটরা নাগরিকত্বের জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করতে পারবেন।কিন্তু আজ পর্যন্ত এই স্লিপ দেওয়া হলো না। আসলে এই ১৯লক্ষ এখন এনআর সি ছুট এখন কি অবস্থায় আছেন তারা নিজেরাও জানেন না ,সরকারও জানে না। আর রিজেকশন স্লিপ আগামীতে দেওয়া হবে এরও কোন সম্ভাবনা নেই।

কারণ স্লিপ নিয়ে যেখানে যাওয়ার কথা সেই বিদেশি শনাক্তকরণ ট্রাইবুনালের সময়সীমা না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর অর্থ পরিষ্কার এনআরসি নিয়ে সরকার খুব একটা উৎসাহী নয়। ‌‌ এছাড়াও এনআরসিতে প্রচুর কেলেঙ্কারি হয়েছে এই অভিযোগ করে প্রাক্তন এন আর সি কোঅর্ডিনেটর প্রতীক হাজেলার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

সরকার বলেছে এনআরসিতে সীমান্ত এলাকায় ২০ শতাংশ ও সীমান্ত এলাকার বাইরের জেলাগুলিতে দশ শতাংশ রিভেরিফিকেশন করতে হবে। কিন্তু সরকার সরাসরি এই কথা সুপ্রিম কোর্টে বলতে পারবে না। এর কারণ ২০১৯ সালের ২৩ আগষ্ট সে সময়ের এনআরসি কোঅর্ডিনেটর প্রতীক হাজেলা সুপ্রিম কোর্টে জানিয়েছিলেন ,সীমান্ত জেলা সহ কয়েকটি জেলায় ২৭ শতাংশ রিভেরিফিকেশন বা পুনর্মূল্যায়ন হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এরপর সুপ্রিম কোর্ট বলেছে এ বিষয়ে আর কোনো আবেদন গ্রহণ করা হবে না। তাই রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে এই আবেদন করেনি বা করা যুক্তিযুক্ত হবে না। কিন্তু আবেদন না করলেও এনআরসি কো অর্ডিনেটরের মাধ্যমে সীমান্ত এলাকায় কুড়ি শতাংশ ভেরিফিকেশনের আবেদন করা হয়েছে। এই আবেদন সুপ্রিম কোর্ট গ্রহণ করেছে , কারণ এন আর সি কোঅর্ডিনেটর পদটি সরাসরি রাজ্য সরকার নিয়ন্ত্রণ করছে না। নিয়ন্ত্রণ করছে সুপ্রিম কোর্ট।

তাই এই আবেদন আদালত গ্রহণ করেছে। এছাড়া এনআরসির জন্য খরচ হয়েছে ১৬ কোটি ২ টাকা। এত টাকা খরচ করে যে এখন আর সি তৈরি হয়েছে তাতে প্রচুর বিদেশির নাম আছে এমনটা মনে করছেন অসমের বিভিন্ন জাতীয়তাবাদী সংগঠন। তারা চাইছে এনআরসি বাতিল করে আবার নতুন এখন আর সি হোক। এসব নানা কারণে গত তিন বছর থেকে এনআরসি যে জায়গায় ছিল সেই জায়গায় রয়েছে।

এক চুলও নড়চড় করেনি। এই প্রেক্ষাপটে যাদের নাম এনআরসি থেকে বাদ গেছে তাদের অবস্থান কি হবে সেটা কিন্তু স্পষ্ট নয়। যদিও এনআরসিছুটরা ভোট দিতে পারবেন ও যাবতীয় নাগরিক অধিকার ভোগ করতে পারবেন। ১৯ লক্ষ এন আর সি ছুটির মধ্যে প্রায় ১৩ লক্ষ বাঙালি হিন্দু। এদের যাতে এন আর সি ছুট হওয়ার পরও রাতে নাগরিকত্ব দেওয়া যায় সেই চেষ্টায় নাগরিকত্ব সংশোধন আইন সংসদে পাস করিয়েছিল বিজেপি সরকার। এই ১৩ লক্ষ বাঙ্গালী হিন্দু বিজেপির ভোটার।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু আইন পাস হলেও রুলস তৈরি হয়নি। তাই এটাও কোন কাজে আসছে না।এই অবস্থায় রাজ্য সরকার এখন এনআরসি নিয়ে খুব একটা নড়াচড়া করতে চাইছে না। বরং এই এনআরসি যাতে আর এগুতে না পারে সেই চেষ্টাই চলছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন সংগঠন এই এনআরসির তীব্র বিরোধিতা করেছে। তাই সরকার আর এটা নিয়ে খুব একটা উৎসাহ দেখাচ্ছে না।

মে এন আরসি নিয়ে একটা সময় তুলকালাম ঘটেছিল আসাম জুড়ে সেই এন আর সি কি হিমঘরে যাচ্ছে? এটাই এখন সবচাইতে বড় প্রশ্ন। অন্তরপক্ষে সরকারের সাম্প্রতিক কিছু কার্যকলাপ দেখে এই প্রশ্নই উঠছে। আজ সরকারের জন্য এটাই হবে সবচাইতে বেশি সুবিধাজনক স্থিতি। অতএব আপাতত এনআরসি হিমঘরে।

বিজ্ঞাপন

KRC TIMES ADVERTISEMENT

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *