মুখ বন্ধ করে আছেন রাজনৈতিক নেতারা
বরাকের যুবক যুবতীদের উদ্দেশ্যে একটি কথা না বলতেই হচ্ছে মন খারাপ করে লাভ নেই। বিশ্বাস করা যায় বরাকের ছেলে মেয়েরা অযোগ্য। এ বছরই বরাকে নিটে অনেক ছেলে-মেয়ে কোয়ালিফাই করেছে। ব্যাংকিং সার্ভিস ও রেলওয়েতে কাজ পেয়েছে। দেখা যাচ্ছে একমাত্র আসাম সরকারের চাকরি খুব অল্পই পাচ্ছে আমাদের এখানকার বেকাররা। এবং এর জবাব এখানকার নেতারা দিচ্ছেন, যে নাকি যোগ্যতা নেই।
একটা চৌকিদার চাপরাশি এসব চাকরিতে কি ইন্টারভিউ। এসব পদের জন্য রিক্রুটমেন্ট বোর্ড তৈরি করারই বা কি দরকার। এসব কথা জিজ্ঞেস করে লাভ নেই। কারণ যারা চাকরি পাচ্ছে না তারাও এখন ভাবছে যে হয়তো আমি যোগ্য নই।
তাই খুব দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে এখানকার ছেলেমেয়েদের যে তোমরা আসাম সরকারের চাকরির আশা আর করো না। অন্য রাজ্যের বা কেন্দ্র সরকারের চাকরির আশা করো। নিজেকে কঠোরভাবে তৈরি কর। বেসরকারি
সংস্থায়ও ভালো চাকরি আছে। বিভিন্ন কর্মসংস্থান প্রকল্পের মাধ্যমে নিজেদের দক্ষতাকে বাড়াতে হবে। কারণ এই রাজ্যে বাঙ্গালীদের চাকরি নেই।
শুধু বাঙালি কেন অঅসমীয়াদের চাকরি নেই। কয়েকটা দেওয়া হবে মুখ রক্ষা করার জন্য।আর এসম্পর্কে কিছু বলাও যাবে না, বললেই হিন্দুত্ব বিরোধী। তাই কাউকে দোষারোপ করে আর লাভ নেই একটা কথা বোঝা যায় এখানকার শাসকদলের রাজনীতিবিদরা এটাকে মেনে নিয়েছেন। এখানকার মানুষ প্রতিবাদের ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন। এখন একটা পথই খোলা আছে, রাজ্য সরকারের চাকরির আশা ছেড়ে দেওয়া ভালো।
বরং নিজেদের তৈরি করুন কেন্দ্রীয় সরকার ও অন্য রাজ্যের চাকরির জন্য। টেট ও পুলিশে কিছু কিছু বরাকের যুবক-যুবতী চাকরি পাবে। কারণ এই সামান্য কিছু চাকরি না দিয়ে তো উপায় নেই। এর বাইরে কিছু জুটবে না।
তাই আবার বলছি মন খারাপ করবে না। যখন একটা উপনিবেশে বাস করছি তখন তো এসব দুঃখ সহ্য করতেই হবে। যারা ভোট জেতে তারাই যখন মুখ বন্ধ করে বসে আছে তখন কিছু আর বলার নেই।
অদৃষ্ট, ভাগ্যকে আপাতত দোষারোপ করে কিছুটা শান্তি পাওয়া যেতে পারে। অতএব রাজ্য সরকারের চাকরির আশা ত্যাগ করে নিজেদের তৈরি করো। এই ভারতে কোন রাজ্যে কোন জেলায় এভাবে চতুর্থ তৃতীয় শ্রেণীর পদে বাইরে থেকে নিযুক্তি নেই। কিন্তু আমাদের এখানে হচ্ছে। এবং খুব আশ্চর্য লাগে আমাদের লোক এর জন্য পক্ষে যুক্তি দেখাচ্ছে।
এর চাইতে দুঃখজনক আর কিছু হতে পারে না। কিছু লোক কতটুকু চাটুকার ,কতটুকু অন্ধ হলে এভাবে নিজের যোগ্যতাকে নিয়ে নিজেই উপহাস করতে পারে ,এটি আমি বুঝতে পারছি না। স্বাধীনতার পর থেকেই চাকরির ক্ষেত্রে আমাদের উপত্যকাকে বঞ্চিত করার একটা প্রক্রিয়া চলছে। এখন এটা প্রবলভাবে দেখা দিয়েছে।
দিশপুরের কর্তারা যা কিছু করেন তার পক্ষে যুক্তি দেখাতে লেগে যায় আমাদের স্থানীয়রা। আর এটাই হচ্ছে আমাদের সবচাইতে বড় সমস্যা। এমন কেউ নেই আমাদের এখানে প্রতিবাদ করতে পারেন। বরাকের বেকার যুবক-যুবতীদের কাছে আমি একটা অনুরোধ করছি আপনারা নিজেদের আরও কঠোরভাবে তৈরি করুন। কারণ এই চাকরির পদগুলো পূরণ হয়ে গেলে আগামী দশ বছর আর শূন্য পদ থাকবে না। অতএব অযথা আশা করে লাভ নেই।
কেন্দ্র সরকার বা অন্য রাজ্যের চাকরি অথবা বেসরকারি চাকরির জন্য নিজেদের বিভিন্ন কোচিং সেন্টারের মাধ্যমে তৈরি করুন। এখানে আপনাদের কেউ দেখবে না। আপনার চোখের সামনে আপনার বাড়ির সামনের অফিসে দেখবেন অন্য জেলার লোকেরা চাকরি করছে। তারপরও আপনি কিছু বলতে পারবেন না।
কারণ অতি কৌশলে আপনার শার্টের উপরে সেটা দেওয়া হয়েছে “অযোগ্য” তকমাটা। অযোগ্য সিল নিয়ে আপনি ঘোরাফেরা করুন সারা রাজ্য জুড়ে। আপনি অযোগ্যই তো, কারণ আপনি বরাকের। এটাই হল মোদ্দা কথা।
Advertisement