এনআরসির ব্যাক অন ভেরিফিকেশনে ১৩ লক্ষ ফেল কেস” পাশ

3 - মিনিট |

সফটওয়্যারেই ছিল আসল কেলেঙ্কারি

চয়ন ভট্টাচার্য

এনআরসি নিয়ে কত ধরনের অনিয়ম যে হয়েছে সেটা শুনলে শিউরে উঠতে হয়। কেলেঙ্কারি কোন পর্যায়ে পৌঁছেছিল সেটা ভাবাই যায় না।যত দিন যাচ্ছে একেকটা করে বিষয় খোলসা হচ্ছে। এনআরসির প্রাক্তন কোর্ডিনেটর হিতেশ দেব শর্মা এ ধরনের কিছু চমকে দেওয়ার মতো তথ্য সামনে আনলেন। যেমন, এনআরসিতে ডাটাবেজ বলতে কিছুই নেই। তার কাছে ২৩০০টির মত ডাটাবেজ ছিল ।

সেগুলো পরীক্ষা করে তিনি দেখেন ৪০ শতাংশের নাম উঠেছে যাদের নাম ওঠার কথা নয়। অর্থাৎ এনআরসির নিয়মে সাধারণভাবে এদের নাম উঠতে পারে না। তো একটা রেনডম পরীক্ষায় যদি ৪০ শতাংশ ভুল ধরা পড়ে তাহলে আন্দাজ করে নেওয়া যায় কতভাবে কেলেঙ্কারি হয়েছে। আর এটাকে নিশ্চয়ই হিউম্যান এরর হিসেবে আখ্যায়িত করা যায় না। এটা একটা পরিকল্পিত জালিয়াতি বলেই ধরে নেওয়া যায়।

বিজ্ঞাপন

এছাড়া যে সফটওয়্যার বসানো হয়েছে সেটাতেও রয়েছে সমস্যা। এন আরসির ডাটাবেজে যে সফটওয়্যার দেওয়া হয়েছিল ,সেটার উপরের সঙ্গে নিচের কোন মিল নেই । অর্থাৎ ডাটাবেস কর্মীরা যদি ডাটা এন্ট্রিতে ভুল করেন, তাহলে সেটা উপর তলার অফিসাররা ধরতে পারবেন না। এখানেই শেষ নয় ।ধরা যাক কোন এক ব্যক্তির ডাটা আপলোড করা হল।

কিন্তু এই তথ্য সফটওয়্যারে থাকছে না।তার ফলে উপর তলার অফিসাররা কোন তথ্যই পাচ্ছেন না। অর্থাৎ ইচ্ছাকৃতভাবে এটা করা হয়েছে। কোন সামঞ্জস্য রাখা হয়নি।এতে বোঝা যাচ্ছে এই কাজটা ইচ্ছাকৃতভাবে করা হয়েছে। যাতে অনেক অবৈধ নাগরিকের নাম ঢোকানো যায় তালিকায়।

বিজ্ঞাপন

আরও একটা তথ্য পাওয়া গেল এনআরসি নিয়ে। হিতেশ দেব শর্মা সুপ্রিম কোর্টে এফিডেভিটে বলেছেন, ব্যাক অন ভেরিফিকেশনে কোন তথ্য সঠিক কিনা সেটা যাচাই করার ক্ষেত্রে অনিয়ম হয়েছে। যেমন এনআরসির আবেদনপত্রের কোন একটা নথি পাঠানো হলো সংশ্লিষ্ট অফিসে ভেরিফিকেশনের জন্য। সেখান থেকে ফলাফল এসেছে” নো”। অর্থাৎ এই ডকুমেন্ট তারা দেননি। এ ধরনের ২৪ লক্ষ আবেদন যাচাই করার পর ১৩ লক্ষ ডকুমেন্টে যেখানে” না “বলা হয়েছে সেগুলোকে “হ্যা” করা হয়েছে।

কোন জাদু বলে এই নো গুলি হ্যা হয়ে গেল? এসব হিতেশ দেব শর্মা তার হলফনামায় বলেছেন। আর এই কাজটা দেখাশোনা করেছে ডিএমআই। অর্থাৎ ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজেস্টেরিয়াল ইনভেস্টিগেশন টিম। এই টিম এর গঠন নিয়ে নানা ধরনের প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, এটা নাকি সুপ্রিম কোর্টের অগোচরে করা হয়েছে। যেখানে এনআরসির প্রতিটি কাজ সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে হওয়ার কথা।আর সমস্ত কিছু কেলেঙ্কারির পেছনে কাজ করেছে সে সময়ের এনআরসি কো অর্ডিনেটর প্রতীক হাজেলার মস্তিষ্ক।

বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে এসব তথ্য সামনে আনছেন হিতেশ দেব শর্মা। এভাবে একটা বিষয় নিয়ে এত বড় দুর্নীতি হতে পারে সেটা ভাবাই যায় না। কাজ করা হয়েছে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে। যে এনআরসি নিয়ে মানুষ সর্বস্বান্ত হয়েছেন। সেই এনআরসি নিয়ে এত ছিনিমিনি খেলা হয়েছে সেটা ভাবাই যায় না। এখন একটির পর একটি কেলেঙ্কারি সামনে আসছে। এর আগে ডাটাবেজ কর্মচারীদের বেতন কেলেঙ্কারিতে ১৫৫ কোটি টাকার কেলেঙ্কারির তথ্য এসেছিল একাউন্ট জেনারেল রিপোর্টে।

এভাবে মানুষের ভবিষ্যৎকে অন্ধকার করার একটা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। সম্প্রতি হিতেশ দেব শর্মা বলেছেন, তিনি একজন দায়িত্বশীল অফিসার হিসাবে এসব তথ্য বের করেছেন। এখন প্রশ্ন হল এত কেলেঙ্কারিময় এই এনআরসি কি সুপ্রিম কোর্ট মেনে নেবে। যেখানে রীতিমত তথ্য দাখিল করে বলা হয়েছে কেলেঙ্কারি হয়েছে। ১৬০২ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছিল এনআরসির জন্য।

এই টাকার বেশিরভাগই কেলেঙ্কারিতে চলে গেছে। একদিকে টাকার।কেলেঙ্কারি ,অন্যদিকে সাধারণ মানুষের স্বার্থকে বিসর্জন দেওয়া হয়েছে। আর প্রচুর প্রকৃত নাগরিকদের নাম বাদ গেছে। এর মধ্যে একটা বড় অংশই বাঙালি ‌। এত ঢাকঢোল পিটিয়ে যে এনআরসি করা হলো তার এই হল ফলাফল।

বিজ্ঞাপন

KRC TIMES ADVERTISEMENTT

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *