যে ছক মেনে এটা করা হয়েছে তার থেকে একটা কথা স্পষ্ট মালুগ্রমের উধারবন্দ অন্তর্ভুক্তির সিদ্ধান্ত বদলাবে বলে মনে হচ্ছে না
শিলচর: ডিমিটেশনের চূড়ান্ত খসড়ায় শিলচর শহরের সাতটি ওয়ার্ড উধারবন্দে যুক্ত হয়েছে। অবশ্য পাঁচ নম্বর ওয়ার্ড রংপুর আগেই উধারবন্দে যুক্ত ছিল। এবার শিলচর শহর থেকে যে ছয়টি ওয়ার্ড যুক্ত হচ্ছে,এগুলো হলো মালুগ্রাম এলাকা , সদরঘাট কোর্ট চত্বর দেওয়ানীবাজার ও জানিগঞ্জ বাজার। অর্থাৎ সেন্ট্রাল রোডের বাপাশ পুরোপুরি উধারবন্দে চলে গেল। এ নিয়ে মালুগ্রাম এলাকায় জনগণ চরম অসন্তুষ্ট । প্রতিদিনই আন্দোলন চলছে।
এবার দেখা যাক কোন যুক্তিতে এই ওয়ার্ডগুলি উধারবন্দে গেছে? বিশ্বস্ত সূত্রে যে খবরটা পাওয়া গেল, সেটা হলো উধারবন্দ বিধানসভা এলাকার জয়পুর রাজাবাজার ব্লককে লক্ষ্মীপুর বিধানসভা আসনের সঙ্গে জুড়ে দেওয়ায় শিলচরের এই ওয়ার্ডগুলিকে উধারবন্দের সঙ্গে যুক্ত করতে হয়েছে। এছাড়া অন্য কোন উপায় ছিল না। কমিশন তাদের এতদিনের পরিশ্রমের পর এই সত্যটুকু বের করতে পেরেছিল যে উধারবন্দ থেকে যে অংশটুকু বেরিয়ে গেল সেটাকে পূরণ করতে হলে শিলচর থেকে এইগুলো নিতেই হবে।
তাহলে প্রশ্ন হল উধারবন্দ থেকেই বা কেন লক্ষ্মীপুরের এই এলাকাগুলো জুড়ে দেওয়া হবে। কারন লক্ষ্মীপুরের কিছু এলাকা সোনাইয়ের জুড়ে দেওয়া হয়েছে। যার ফলে লক্ষ্মীপুরের প্রয়োজন ছিল আরো জনসংখ্যা র। সেটা আনা হয়েছে রাজাবাজার জয়পুরকে এনে। এভাবে এক দিকে টানতে গিয়ে আরেক দিকে টানতে হয়েছে। আর এইসব টানাটানি করতে গিয়ে শিলচরের ভাগ্যে শেষ পর্যন্ত জুটলো বালিঘাট বদরপুর মাসিমপুর বুড়িবাইলের মতো সংখ্যালঘু জিপি ।
এসব করতে অনেক ব্যালেন্স করতে হয়েছে। তারপর দেখতে হয়েছে বিভিন্ন জন বিন্যাস। এই ফর্মুলায় ডিলিমিটেশন করা হয়েছে। যে ছক মেনে এটা করা হয়েছে তার থেকে একটা কথা স্পষ্ট মালুগ্রমের উধারবন্দ অন্তর্ভুক্তির সিদ্ধান্ত বদলাবে বলে মনে হচ্ছে না। কারণ একটাতে হাত দিলে পুরো ছকটাই বদলাতে হবে।
এসব টানা হেচড়া কাটাকুটি একদিনে হয়নি। অনেক গবেষণা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন এখানে কিছু সার্ভে করিয়েছে বেসরকারি সংস্থা দিয়ে। অর্থাৎ এমনভাবে এলাকাগুলো কাটা হয়েছে যাতেনির্বাচন কমিশনের কাঙ্খিত জন বিন্যাসটা ঠিক থাকে। বিষয়টা অনেকটা চক্রের মত। শিলচর থেকে এলাকা কেটে। উধারবন্দে। উধারবন্দ থেকে এলাকা কেটে লক্ষ্মীপুরে। লক্ষ্মীপুর থেকে এলাকা কেটে সোনাইয়ে।আর সোনাই থেকে কেটে বড়খলায় ।আবার বড়খলা থেকে এলাকা কেটে উধারবন্দে। একটা বৃত্তের মধ্যে অপারেশন টা হয়েছে। এবং এটা খুব সূক্ষ্মভাবে করা হয়েছে।
যখন এটা করা হয়েছে তখন তাদের জানাই ছিল যে কিছু আপত্তি উঠবে। কিন্তু আপত্তি উঠলেও এই ছক বদল না হওয়ার সম্ভাবনা অন্ততপক্ষে এই মুহূর্তে অত্যন্ত বেশি। যেমন মালুগ্রামকে বাদ দেওয়া হল ।তাহলে কি হবে , উধারবন্দ থেকে রাজাবাজার জয়পুরকে লক্ষ্মীপুরে দেওয়া যাবে না। আর লক্ষীপুর থেকে কিছু জিপি সোনাইয়ে দেওয়া যাবে না।
আর সোনা ই থেকে কিছু এলাকা বড়খলায় ও বড়খলা থেকে কিছু এলাকা আবার উধারবন্দে দেওয়া যাবে না। অতএব হাজার আপত্তি উঠলেও কমিশন চাইবে না এই চক্রে হাত দিতে।এর মাঝে কাটিগড়ারও একটা বিরাট ভূমিকা আছে। আর এই বিশাল চক্র মেলাতে গিয়ে স্থানীয় সমস্যাগুলোকে খুব একটা গুরুত্ব দেওয়া সম্ভব হয়নি।
বিজেপির দলের অভ্যন্তরে নিয়ে প্রতিবাদ উঠলেও বোঝানো হয়েছে বৃহত্তর হিন্দুত্বের স্বার্থে এসব সীমানা মেনে নিতে। অনেকেই এটার মধ্যেই সান্তনা খুঁজছেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো, মালুগ্রামের বনেদি হিন্দুরা এটা কি মানবেন। ছিন্নমূল মনিপুরী হিন্দুরা কি একটা মানবেন। এটা জানতে হলে অপেক্ষা করতে হবে।