অবশেষে উঠল নিষেধাজ্ঞা, ইলিশের খোঁজে গভীর সুমুদ্রে পাড়ি দিতে প্রস্তুত মৎস্যজীবীরা

2 - মিনিট |

এবার নিরাপত্তার বিষয়ে যথেষ্ট জোর দিয়েছে প্রশাসন। প্রতিটি ট্রলারে মৎস্যজীবীদের জন্য লাইফ জ্যাকেট ও ড্যাট বা ডিস্ট্রেস এলারট ট্রান্সমিটার দেওয়া হয়েছে সরকারী তরফে। এটির মাধ্যমে মাঝ সমুদ্র থেকে মৎস্যজীবীদের বিভিন্ন রকম সংকেতের মাধ্যমে নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে পারবে

কে আর সি টাইমস ডেস্ক

গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার উপর দু’মাসের সরকারি নিষেধাজ্ঞা উঠে গেল শনিবার, ১৫ জুন থেকে। এবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং, কাকদ্বীপ, ডায়মন্ডহারবার মহকুমার বিভিন্ন জেটিঘাট থেকে ইলিশ মাছের সন্ধানে গভীর সমুদ্র পাড়ি দেবে প্রায় হাজার তিনেক ট্রলার। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী সপ্তাহেই বাজারে ইলিশের আমদানি শুরু হয়ে যাবে বলে দাবি মৎস্যজীবীদের। ১৫ এপ্রিল থেকে ১৪ জুন এই দু’মাস সমুদ্রে, নদীতে, খাল-বিলে মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকে প্রতি বছর। মাছের প্রজন্মকে বাঁচিয়ে রাখতে ডিম পাড়ার এই মরশুমে প্রতি বছর এই সময়টায় মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকে। এই দু’মাস সমস্ত মৎস্যজীবীরা তাঁদের ট্রলার ও মাছ ধরার জাল-সহ যাবতীয় সামগ্রী সংস্কার করে নেন। যাতে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে কোনও রকম অসুবিধায় না পড়তে হয় তাঁদের। আর কিছু দিনের মধ্যে এসে পড়বে বর্ষা এ রাজ্যে। শুরু হয়ে যাবে ইলিশের মরসুম। প্রতি বছর একটু বাড়তি রোজগারের আসায় এই মরশুমের দিকেই তাকিয়ে থাকেন মৎস্যজীবী ও মাছ ব্যাবসায়ীরা। এ বিষয়ে কাকদ্বীপের মৎস্যজীবী রবিন বিশ্বাস বলেন, “প্রতিবছর এই ইলিশের মরশুমের দিকেই আমরা তাঁকিয়ে থাকি। সারাবছর টুকটাক সমুদ্রে মাছ ধরার কাজ চলে। কিন্তু, বছরে দু’মাস মাছ ধরা বন্ধ থাকে আমাদের। সেই সময় ট্রলার, নৌকা, জাল সব সারিয়ে নিয়ে সকলেই ইলিশের খোঁজে গভীর সুমুদ্রে পাড়ি দিই। এবারও দু’-একদিনের মধ্যেই পাড়ি দেব। আশাকরি গত বছরের থেকেও বেশী ইলিশ এবার পাওয়া যাবে”।  
চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। ইলিশ ধরার জাল, বরফ, জ্বালানি তেল, খাবার ও আনুসঙ্গিক সমস্ত কিছু ট্রলারে মজুত করার কাজ চলছে জোর কদমে৷ সপ্তাহ খানেক ধরেই ট্রলারগুলিকে প্রস্তত করা হচ্ছে। সরকারি নিয়ম মেনে ট্রলারে কমলা রং করেছেন মৎস্যজীবীরা। গত কয়েক বছরে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে একাধিক দুর্ঘটনার কবলে পড়েছেন মৎস্যজীবীরা। মৃত্যু হয়েছে অনেকের। অনেকের দেহ খুঁজে পাওয়া যায়নি। সেই কারণে এবার নিরাপত্তার বিষয়ে যথেষ্ট জোর দিয়েছে প্রশাসন। প্রতিটি ট্রলারে মৎস্যজীবীদের জন্য লাইফ জ্যাকেট ও ড্যাট বা ডিস্ট্রেস এলারট ট্রান্সমিটার দেওয়া হয়েছে সরকারী তরফে। এটির মাধ্যমে মাঝ সমুদ্র থেকে মৎস্যজীবীদের বিভিন্ন রকম সংকেতের মাধ্যমে নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে পারবে। এ বিষয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা সহ মৎস্য অধিকর্তা জয়ন্ত কুমার প্রধান বলেন, “ বিগত বছর গুলি থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার আমরা মৎস্যজীবীদের নিরাপত্তার উপর বেশী করে জোর দিয়েছি। প্রতিটি ট্রলারেই আমরা লাইফ জ্যাকেট ও ড্যাট দিয়েছি। আশাকরি সমস্ত মৎস্যজীবী এবার সুরক্ষিত ভাবে মৎস্য শিকার করে ফিরবেন”।  তাই দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং, ঝড়খালি, সোনাখালি, গোসাবা, পাথরপ্রতিমা, কাকদ্বীপ, ডায়মন্ড হারবার, নামখানা, ফ্রেজারগঞ্জ, রায়দিঘি ও সাগরদ্বীপের ঘাটগুলিতে সাজসাজ রব। চাতক পাখির মতন প্রথম মরসুমের ইলিশের সন্ধানে গভীর সমুদ্রে পাড়ি দেওয়ার জন্য তাকিয়ে আছেন মৎস্যজীবীরা। ফলে আর মাত্র দিন দশেকের অপেক্ষা৷ এরপরই ভোজনরসিক বাঙালির পাতে পড়তে চলেছে ইলিশ ভাপা, ইলিশ পাতুরির মতো লোভনীয় ইলিশের পদ৷ কাকদ্বীপ ফিসারম্যান ওয়েল ফেয়ার এসোসিয়েশানের সম্পাদক বিজন মাইতি বলেন, “ সমস্ত মৎস্যজীবীদেরকে নিয়ে আমরা গত দু’মাসে একাধিক আলোচনা সভা, সেমিনার ও প্রশিক্ষণ শিবির করেছি। যাতে কেউ খোকা ইলিশ না ধরেন ও সর্বপরি গভীর সমুদ্রে নিজেদের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রাখেন। তাহলেই ইলিশ যেমন জালে উঠবে, তেমনি তা বাজারেও পৌঁছবে ও সেখান থেকে ইলিশ পিপাসু মানুষের রসনা তৃপ্তি নিবারন করবে”। 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related news