যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে শিলচরের খালা ও নালা গুলি জঞ্জালমুক্ত করার দাবি

3 - মিনিট |

শিলচরের জমা জল ও কৃত্রিম বন্যা থেকে মুক্তির দাবিতে রাঙির খাড়ি পয়েন্টে এক ধর্ণা কর্মসূচির ডাক দিয়েছিল বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট। অবিলম্বে শহরের খাল এবং নালাগুলির আমূল সংস্কারের দাবিতে সোচ্চার হলেন এদিনের ধর্ণায় উপস্থিত বিশিষ্ট জনেরা

কেআরসি টাইমস বারাক ভ্যালি ব্যুরো

যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে শিলচরের খালা ও নালা গুলির আদি গভীরতা অব্দি জঞ্জালমুক্ত করতে হবে – দাবি উঠল শিলচরের জমাজল থেকে মুক্তির দাবিতে আয়োজিত বিডিএফ এর ধর্ণা মঞ্চ থেকে।

শিলচরের জমা জল ও কৃত্রিম বন্যা থেকে মুক্তির দাবিতে রাঙির খাড়ি পয়েন্টে  এক ধর্ণা কর্মসূচির ডাক দিয়েছিল বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট। অবিলম্বে শহরের খাল এবং নালাগুলির আমূল সংস্কারের দাবিতে  সোচ্চার হলেন এদিনের ধর্ণায় উপস্থিত বিশিষ্ট জনেরা।

এদিনের ধর্ণায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে বরাক ডেমোক্রেটিক যুব ফ্রন্টের মুখ্য আহ্বায়ক কল্পার্ণব গুপ্ত বলেন যে চিত্তরঞ্জন এভিনিউ ও সোনাই রোডে জমা জলের সমস্যার জন্য চরম দুর্ভোগে পড়েছেন শহরের নাগরিকরা। বাচ্চারা স্কুলে যেতে পারছে না, নার্সিং হোম ও মেডিকেল কলেজে রোগী নিয়ে যেতে হিমসিম খেতে হচ্ছে। ঘন্টার পর ঘন্টা ট্রাফিক জ্যামে আটকে থাকতে হচ্ছে। অথচ সম্পুর্ন নির্বিকার জনপ্রতিনিধিরা। তাঁরা এখন অন্যান্য জেলায় ভোটের প্রচারে ব্যাস্ত। কল্পার্ণব বলেন বরাকের রেল ও সড়ক যোগাযোগ ব্যাবস্থা আবার বিপর্যস্ত। বিমানের ভাড়া আকাশ ছোঁওয়া। তিনি বলেন ফি বছর এই সমস্যা আসে অথচ এর চিরস্থায়ী সমাধানের কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়না। এই উপত্যকার নাগরিকরা ন্যুনতম নাগরিক পরিষেবা থেকে বঞ্চিত। অথচ ভোটের সময় প্রতিশ্রুতির বন্যা বয়ে যায়। তিনি বলেন বরাকের নাগরিকদের যেভাবে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক বানিয়ে রাখা হয়েছে এর থেকে উত্তরণের পথ বের করতে হবে নিজেদেরই। তিনি বলেন তাই এই ধর্ণা কোন বিশেষ দলের কর্মসূচি নয়, সব শুভবুদ্ধি সম্পন্ন সচেতন নাগরিককেও এই ধরনের প্রতিবাদে এগিয়ে আসতে হবে। অন্যথা এইসব সমস্যার সমাধান হবে না।

বিশিষ্ট সমাজকর্মী তথা শিক্ষাবিদ সীমা ঘোষ এদিন তাঁর বক্তব্যে জনগনের দুর্দশার চিত্র তুলে ধরে বলেন ভোট আসে যায় কিন্তু বরাকের ক্ষেত্রে কোন গ্যারান্টি,ওয়ারেন্টি কাজে আসেনা। বর্ষার মরশুম শুরুর আগেই যদি এই অবস্থা হয় তবে আগামীতে কি অবস্থা হবে তা সহজেই অনুমেয়। সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে তাই সবাইকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আন্দোলনে সামিল হবার আহ্বান জানান তিনি।

নাগরিক স্বার্থরক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি হরিদাস দত্ত এদিন বলেন যে লঙ্গাই খাল, সিঙ্গির খাল ও রাঙির খালের সঠিক সংস্কার নাহলে এই সমস্যা মিটবে না। এছাড়া বাকি যেসব নালা রয়েছে সেগুলোকেও আবর্জনা মুক্ত করতে হবে। তিনি বলেন বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসন থেকে এসবের সংস্কারের করতে গিয়ে দুদিন ধরে যেভাবে উপর থেকে প্লাস্টিক, আবর্জনা ও কচুরিপানা সরানো হচ্ছে তাতে কাজের কাজ কিছুই হবেনা। দরকার খাল,নালা ইত্যাদির আদি গভীরতা অব্দি জঞ্জালমুক্তির ব্যাবস্থা করা। হরিদাস দত্ত বলেন যে বৃষ্টির মরশুম বলে এই কাজ বন্ধ করে রাখলে চলবে না। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে অন্ততঃ দশটি জেসিবি মেশিন লাগিয়ে এই কাজ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শেষ করতে হবে। তিনি বলেন এজন্য সরকারকে চাপ দিতে হলে শহরের সচেতন নাগরিকদের একজোট হয়ে এগিয়ে আসতে হবে। হরিদাস বাবু বলেন গত দুবছরে রাঙির খালের মাত্র দুশ মিটার সংস্কারের কাজ হয়েছে। এই খালের দৈর্ঘ্য ৩৪০০ মিটার। তাই এই ধরনের কাজের অগ্রগতি হলে এই কাজ শেষ হতে আগামী আরো ৩৪ বছর লাগবে। তাই শুধু মুখ্যমন্ত্রী শিলন্যাস করে গেলেই সমস্যার সমাধান হয়না, সমাধান হবে যদি ৫০০০ লোক রাস্তায় নেমে একসাথে প্রতিবাদে সামিল হন । তিনি নিজেদের না হলেও অন্তত পরবর্তী প্রজন্মের স্বার্থে সবাইকে এই ধরনের প্রতিবাদে সামিল হবার আহ্বান জানান।

বিশিষ্ট আইনজীবী সৌমেন চৌধুরী এদিনের ধর্ণায় যোগ দিয়ে বলেন যে এই ধরনের প্রতিবাদী কর্মসূচি নেবার কথা ছিল নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলদের। কিন্তু তাঁরা নীরব। তিনি এদিনের আয়োজনের জন্য বিডিএফ কে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন যে যারা ভুক্তভোগী তাঁদের সবাইকে একজোট হয়ে রাস্তায় নামতে হবে। তিনি বলেন রাজ্যে ও কেন্দ্রে একই দলের সরকার থাকা সত্ত্বেও এতদিন ধরে শিলচরে পুরভোট আটকে রাখা হয়েছে যা দুর্ভাগ্যজনক। এরফলে জনগনের অভাব অভিযোগ জানানোর জায়গা নেই। বিধায়ক, সাংসদদেরও দেখা মেলেনা। তিনি বলেন জমা জলের এই সমস্যায় যেধরনের শোচনীয় অবস্থা হয়েছে একাংশ নাগরিকের তাতে আর প্রতিশ্রুতি নয়,এবারে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান চাই। তাই এদিন ভুক্তভোগী সবাইকে একজোট হবার আহ্বান জানান তিনি।

সমাজ কর্মী কৃশানু ভট্টাচার্য এদিন বলেন যে নালা ও খালের সংস্কারের ক্ষেত্রে মূল অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে জবর দখল। তিনি বলেন এই ব্যাপারে প্রশাসনকে যেমন কঠোর হতে হবে তেমনি সংশ্লিষ্ট নাগরিকদেরও সহযোগিতা করতে হবে। অন্যথা সমস্যা মিটবে না। তিনি আরো বলেন যে যদি ডলু বাগানের চাগাছ উপড়ে ফেলার কাজে একসাথে ২৫০ টি জেসিবি মেশিন লাগানো হতে পারে,তবে শিলচরের খাল ও নালা সংস্কারের জন্য একই ধরনের উদ্যোগ না নেবার কোন কারণ নেই,বিশেষত যখন শহরের নাগরিক পরিষেবার শোচনীয় অবনতি ঘটেছে।

সমাজ কর্মী কমল চক্রবর্তী এদিন বলেন যে সুতারকান্দি সীমানা থেকে সিলেট ডাউকি সীমান্তের তামাবিলের দূরত্ব সড়ক পথে অতিক্রম করতে মাত্র দুঘন্টা সময় লাগে। এছাড়া এই পথে ধ্বস নামারও কোন সম্ভাবনা নেই। তাই বর্ষার মরশুমে এই পথ দিয়ে অনায়াসে করিমগঞ্জ থেকে ডাউকি হয়ে গৌহাটি যাওয়া সম্ভব। ইতিমধ্যে এই পথ দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিভিন্ন বানিজ্যিক সামগ্রী  মেঘালয়ে পাঠানো হচ্ছে। তিনি এদিন এই বিকল্প পথের দাবিতে সবাইকে সরব হবার আহ্বান জানান।

বিডিএফ মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জয়দীপ ভট্টাচার্য এদিন বলেন যে তাঁরা আগামী দুদিনের মধ্যে জমা জলের সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দিয়ে সরকারকে  স্মারকপত্র দেবেন। পাশাপাশি এই ইস্যুতে আরো বিভিন্ন জায়গায় আগামীতেব বিডিএফ এর পক্ষ থেকে ধর্ণা কর্মসূচি আয়োজন করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে এদিন জানান তিনি।

অন্যান্যদের মধ্যে এদিনের কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন হৃষীকেশ দে,হারাধন দত্ত, মলয় ভট্টাচার্য, নবারুণ দে চৌধুরী, শৈলেন রায়, দেবায়ন দেব,দেবজ্যোতি দত্ত চৌধুরী,হিফজুর রহমান প্রমুখ।

বিডিএফ এর পক্ষ থেকে হৃষীকেশ দে এক প্রেস বার্তায় এই খবর জানিয়েছেন।

Advertisement | 5E for Success

Advertisement

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related news