ওই দিন বিকেলে তাঁরা যখন খাঁড়ির মধ্যে তাদের ডিঙি নৌকাটি নোঙর করে কাঁকড়া ধরছিলেন, ঠিক তখন জঙ্গল থেকে একটি বাঘ বেরিয়ে এসে আচমকা লাফিয়ে পড়ে বনলতা তরফদারের উপর। নৌকা থেকে ওই মহিলা মৎস্যজীবীর ঘাড়ে কামড় বসিয়ে, মুহূর্তে তাঁকে নিয়ে জঙ্গলের মধ্যে অদৃশ্য হয় যায় রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারটি
সুন্দরবনের জঙ্গলে ফের বাঘের আতঙ্ক! খাঁড়িতে মাছ-কাঁকড়া ধরতে গিয়ে বাঘের কবলে পড়লেন একজন মৎস্যজীবী। সোমবার বিকেলে সুন্দরবনের ব্যঘ্র প্রকল্পের অন্তর্গত পিরখালী ২ নম্বর জঙ্গলে, খাঁড়িতে মাছ-কাঁকড়া ধরছিলেন বনলতা তরফদার (৫০) নামে একজন মহিলা মৎসজীবী। কাঁকড়া ধরার সময় জঙ্গল থেকে একটি বাঘ বেরিয়ে এসে বনলতাকে আক্রমণ করে। তারপর থেকেই নিখোঁজ ওই মৎসজীবী। এ বিষয়ে সোমবার সন্ধ্যায় গোসাবা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন নিখোঁজ মৎস্যজীবীর পরিবারের সদস্যরা। বিষয়টি ব্যাঘ্র প্রকল্পের সজনেখালী রেঞ্জ অফিসেও জানানো হয়েছে। যদিও, মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত তাঁর কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি।
বন দফতর সূত্রে খবর, সোমবার ভোরে তিন সঙ্গীর সঙ্গে সুন্দরবনের পিরখালী ২ নম্বর জঙ্গলে মাছ-কাঁকড়া ধরতে গিয়েছিলেন বনলতা তরফদার। গোসাবা থানার আমলামেথির বাসিন্দা ওই মহিলা মৎস্যজীবীর সঙ্গে ছিলেন তাঁর ছেলে স্বপন তরফদার, প্রতিবেশী অশোক মণ্ডল ও অজিত মণ্ডল। ওই দিন বিকেলে তাঁরা যখন খাঁড়ির মধ্যে তাদের ডিঙি নৌকাটি নোঙর করে কাঁকড়া ধরছিলেন, ঠিক তখন জঙ্গল থেকে একটি বাঘ বেরিয়ে এসে আচমকা লাফিয়ে পড়ে বনলতা তরফদারের উপর। নৌকা থেকে ওই মহিলা মৎস্যজীবীর ঘাড়ে কামড় বসিয়ে, মুহূর্তে তাঁকে নিয়ে জঙ্গলের মধ্যে অদৃশ্য হয় যায় রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারটি। ঘটনার আকস্মিকতায় হতবাক হয়ে যান বাকি তিন সঙ্গী। বেশ কিছুক্ষণ নৌকার উপর থেকে বনলতা দেবীকে খোঁজার চেষ্টা করলেও ভয়ে জঙ্গলের মধ্যে ঢোকার সাহস দেখাননি কেউই। সেখান থেকে তড়িঘড়ি ফিরে এসে সজনেখালী রেঞ্জ অফিস ও গোসাবা থানায় এ বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করেন বনলতা দেবীর সঙ্গীরা। অভিযোগ পেয়ে বনকর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। তবে, সন্ধ্যে হয় যাওয়ার কারণে মঙ্গলবার সকালে আবারও তল্লাশি শুরু হয়।বন দফতর জানিয়েছে, মৎস্যজীবীদের বৈধ অনুমতি পত্র থাকলেও ওই স্থানে মাছ-কাঁকড়া ধরার উপর বন দফতরের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। অনুমান সেই নিষিদ্ধ জায়গাতে কাঁকড়া ধরতে গিয়েই বিপদ ঘটেছে। বারে বারে বন দফতরের তরফ থেকে নিষিদ্ধ জায়গায় মাছ-কাঁকড়া ধরার জন্য বিভিন্ন ধরনের সচেতনতামূলক কর্মসূচী গ্রহণ করা হলেও, এক শ্রেণীর মৎস্যজীবী সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সেই নিষিদ্ধ জঙ্গল ও খাঁড়িতে মাছ-কাঁকড়া ধরতে গিয়ে বিপদের মুখে পড়ছেন। এই ঘটনাও তারই পুনরাবৃত্তি।