টানা বর্ষণে বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গের পাহাড় ও সমতল

3 - মিনিট |

আগামি আটচল্লিশ ঘণ্টায় ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দফতর । এই মরসুমে সব থেকে বেশি বৃষ্টি হয়েছে আলিপুরদুয়ারের হাসিমারাতে

কে আর সি টাইমস ডেস্ক

গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণে বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গের পাহাড় ও সমতল । একদিকে যখন লিস নদীর বাঁধ ভেঙে হু হু করে জল ঢুকছে মালবাজার মহকুমার সাউগাঁও বস্তিতে । অন্যদিকে ঠিক সেইসময়ই ধ্বসে বিধ্বস্ত সড়ক যোগাযোগ । বৃষ্টির জেরে ব্যাহত ডুয়ার্স রুটে ট্রেন চলাচলও ।সাউগাঁও বস্তিতে বহু মানুষ জলবন্দি । তাঁদের ত্রাণ দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে । স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, ফি বছরই বর্ষায় লিস নদীর বাঁধ ভেঙে জল ঢোকে তাঁদের বস্তিতে । তখনকার মতো ত্রাণ দেওয়া হয় । কিন্তু স্থায়ী কোনও সমাধান হয় না ।ডুয়ার্সের ওদলাবাড়ির কাছে রেলের আন্ডারপাস জল জমায় ডুয়ার্স রুটের চলাচলও ব্যাহত । ঘুরপথে শিলিগুড়ি থেকে এনজেপি, জলপাইগুড়ি হয়ে আলিপুরদুয়ারে পাঠানো হচ্ছে ট্রেনগুলোকে । আলিপুরদুয়ার শহর লাগোয়া কালজানি, ডিমা ও নোনাই নদীতে জল বেড়ে যাওয়ায় বৃষ্টিতে জমা জল নদীতে পড়তে পারছে না । পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে পুর প্রশাসন । তিত, বাঙ্গরি ও হাউরি নদীর জল বেড়ে যাওয়ায় ফের বিচ্ছিন হয়ে পড়েছে টোটোপাড়া । এছাড়া ভুটান পাহাড়েও বৃষ্টি হচ্ছে বলে জানা গেছে । আগামি আটচল্লিশ ঘণ্টায় ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দফতর । এই মরসুমে সব থেকে বেশি বৃষ্টি হয়েছে আলিপুরদুয়ারের হাসিমারাতে। পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে সেচ দফতর । সেবকে ধ্বস নামায় শিলিগুড়ির সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সিকিম ও দার্জিলিঙের । ধ্বস সরানোর কাজ চলছে । আজ সকালে লিস নদীর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে মালবাজারের বিস্তীর্ণ এলাকা । তিস্তায় জল বাড়ায় জারি করা হয়েছে হলুদ সংকেত । পাহাড় ও সমতলের বিস্তীর্ণ এলাকার ব্যাহত স্বাভাবিক জনজীবন । লিস নদীর নবনির্মিত রেলওয়ে আন্ডারপাসের পিলার ধসে রেললাইনের মাটি সরে যাওয়ায় ডুয়ার্স রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ । যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে কাজে নেমেছে রেলের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ । আলিপুরদুয়ার জেলা সেচ দফতরের নির্বাহী বাস্তুকার নীরজ কুমার সিং জানান,  ‘কোনও নদীতে এখনও বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়নি । তবে আমরা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছি । পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত আছি’।কিছুদিন আগে ধ্বসের ফলে কার্শিয়াং ও দার্জিলিংয়ে টয়ট্রেন পরিষেবা স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল । বন্ধ ছিল রংপং-কার্শিয়াং রুটে যান চলাচলও । এবার ধ্বসের ফলে সিকিমের সঙ্গে সমস্ত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল পশ্চিমবঙ্গের । শুধু সিকিম নয়, ডুয়ার্স ও কালিম্পং সহ একাধিক এলাকার সঙ্গে শিলিগুড়ির যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে । বাগরাকোট-ডামডিমের মধ্যে লাইনে ধ্বস নেমছে । তার ফলে বাতিল হয়েছে আলিপুরদুয়ার ডিভিশনের ৮টি প্যাসেঞ্জার সহ একাধিক ট্রেন । ঘুরপথে চলছে আপ কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেস ।গত ৪৮ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে টানা বৃষ্টি চলছে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় । উত্তরবঙ্গের জন্য ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে এখনও । আর এই বৃষ্টির কারণেই বিভিন্ন এলাকায় ধ্বস নামছে বলে খবর । বৃহস্পতিবার সকালে বৃষ্টির কারণে ১০ ও ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কে ধ্বস নামে । ফলে শিলিগুড়ির সঙ্গে একাধিক এলাকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে । এই ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরেই পশ্চিমবঙ্গ-সিকিমের মধ্যে যাতায়াত চলে । ধ্বস নামার ফলে দু’দিকেই এখন আটকে পড়েছেন বহু পর্যটক । যাঁরা সিকিমে গিয়েছেন, তাঁদের এখনই ফেরার কোনও পথ নেই । একইভাবে সিকিম যাওয়ার জন্যও দ্বার রুদ্ধ পর্যটকদের ।পাশাপাশি ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কেও নেমেছে ধ্বস । সেবক কালিবাড়ির কাছে একাধিক জায়গায় ধ্বস নামার ফলে কালিম্পংয়ের সঙ্গেও শিলিগুড়ির যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে । ডুয়ার্সের পর্যটকরাও সমস্যায় পড়েছেন । কারণ শিলিগুড়ির সঙ্গে ডুয়ার্স যাতায়াতের রাস্তাতেও নেমেছে ধ্বস । এক কথায় শিলিগুড়ি থেকে আপাতত উত্তরবঙ্গ বা সিকিমের যে কোনও জায়গারই যোগাযোগ এখন বড়সড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে । তার উপর আবহাওয়া দফতর উত্তরবঙ্গে বৃষ্টি থামার কোনও ইঙ্গিত দেয়নি । উলটে শনিবার পর্যন্ত উত্তরবঙ্গের একাধিক জায়গায় অতিভারী বৃষ্টি হতে পারে বলে খবর । ফলে ধ্বসের  সম্ভাবনাও বাড়ছে। তবে বৃষ্টি থামলে যে ধ্বস হবে না, তারও কোনও মানে নেই । স্থানীয়দের মতে, বৃষ্টি থেমে গেলেও মাটি আলগা থাকে। ফলে ধ্বসের প্রবণতা থেকেই যায়।
১০ ও ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কে ধ্বস পরিষ্কার করার কাজ শুরু হয়েছে । তবে বিকেলের আগে এলাকায় যান চলাচল স্বাভাবিক হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই । আশঙ্কা, রাস্তা যান চলাচলের উপযোগী করতে রাত গড়িয়েও যেতে পারে । ফলে কতক্ষণে শিলিগুড়ির সঙ্গে সিকিম, কালিম্পং ও ডুয়ার্সের যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হবে, তা নিয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না ।
বুধবার সেবকের কাছে তিস্তায় পর্যটক সহ একটি গাড়ি পড়ে যায় । বিকেলেই উদ্ধারে নামে এনডিআরএফ এর একটি দল । কিন্তু প্রবল স্রোতে বাধা পায় উদ্ধার কাজ । একটি পর্যটন সংস্থার ওই গাড়িতে দুজন ছিলেন বলে জানা গেছে ।   আজ সকালে ফের তল্লাশির কাজে যেতে গেলে সেবকে ধ্বসের জন্য আটকে যায় এনডিআরএফ এর গাড়ি । দার্জিলিং জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ধস সরানোর কাজ শুরু হয়েছে ।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related news