বর্ণপরিচয়ের ভগ্নপ্রায় আঁতুরঘরকে হেরিটেজ ঘোষণা পুরসভার

2 - মিনিট |

বর্ণপরিচয়, কথামালা, বোধোদয় থেকে একালের শুকতারা এবং নবকল্লোল সবই প্রকাশিত হচ্ছে এই বাড়ি থেকেই | বাঙালির এই সাহিত্যর অন্যতম আতুঁড়ঘর মহানগরের বুক থেকে মুছে যাওয়ার উপক্রম হতেই নড়ে চড়ে বসেছে কলকাতা পুরসভা

admin

২১ ঝামাপুকুর লেনের দেড়শো বছরের প্রাচীন বাড়িটিকে হেরিটেজ ঘোষণা করল কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিম| এটি একটি সাধারণ কোনও বাড়ি নয়| অবশ্য হেরিটেজ যখন ঘোষণা করেছে তখনই বোঝা যাচ্ছে যেকোনও সাধারণ বাড়ি এটি নয়| এই বাড়িটি বর্ণপরিচয়-এর আঁতুর ঘর| একসময় নানান রত্নের শোভায় শোভা পেত বর্তমানের ভগ্নপ্রায় প্রাসাদ|

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, পণ্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, রাজশেখর বসু, সুনীতি চট্টোপাধ্যায়, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়দের অবাধ আনাগোনা ছিল এই বাড়িতে| সেকালের বর্ণপরিচয়, কথামালা, বোধোদয় থেকে একালের শুকতারা এবং নবকল্লোল সবই প্রকাশিত হচ্ছে এই বাড়ি থেকেই| বাঙালির এই সাহিত্যর অন্যতম আতুঁড়ঘর মহানগরের বুক থেকে মুছে যাওয়ার উপক্রম হতেই নড়ে চড়ে বসেছে কলকাতা পুরসভা। এই প্রসঙ্গে বুধবার মেয়র বলেন, “ এইসব বাড়ি কলকাতার সম্পদ| কলকাতার ঐতিহ্য, ইতিহাস বয়ে নিয়ে যায় এইসব বাড়ি| তাই এদের রক্ষা করতে তত্পর কলকাতা পুরসভা|”

হাওড়ার পাতিয়ালের জমিদার বরদাপ্রসাদ মজুমদার নেশার ঘোরে সর্বস্ব হারিয়ে ফেলার পর কলকাতার ঝামাপুকুরে এসে ছাপড়াঘরে ১৮৬০ সালে ‘বিপিএম’ প্রেস নামে ছাপাখানা খোলেন। ১৮৯০ সালে এই প্রেসকে বর্ণপরিচয় ছাপার বরাত দেন স্বয়ং ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। ১৮৯১ সালে ঈশ্বরচন্দ্রের মৃত্যুর পর বিপুল দেনার দায়ে বর্ণপরিচয়, কথামালা, বোধোদয়-সহ সমস্ত বই হাই কোর্টের রিসিভারের হাতে চলে যায়। কিছুদিন রিসিভার নিজেই বর্ণপরিচয় ছাপার পর নিলাম ডাকেন। বরদাবাবু দুই পুত্রকে হাই কোর্টে পাঠিয়ে বর্ণপরিচয়-সহ সমস্ত বইয়ের স্বত্ব কিনে নেন। কালক্রমে বিপিএম-এর বদলে দেব সাহিত্য কুটির নাম হয় ১৯২৪ সালে। সেই থেকে ২১ ঝামাপুকুর লেনের বাড়ি থেকে বর্ণপরিচয় প্রকাশ হয়ে আসছে।

 বাঙালির দুই জনপ্রিয় পত্রিকা শুকতারা এবং নবকল্লোল এই বাড়ি থেকেই প্রকাশিত হচ্ছে প্রায় সাত দশক ধরে। কিন্তু যে বাড়ি থেকে বর্ণপরিচয় বা শুকতারা প্রকাশ হচ্ছে সেটি বরদাপ্রসাদের নাতি নীরদ মজুমদারের উত্তরাধিকার হিসাবে সুরভী বসুর মালিকানা ছিল। গত ফেব্রুয়ারি মাসে বাড়িটি অন্য এক মালিকানায় হস্তান্তর হতেই ২১ ঝামাপুকুর লেনের ঠিকানায় বর্ণপরিচয়-সহ সমস্ত স্মৃতি মুছে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। দেব সাহিত্য কুটিরের অধিকর্তা তথা নবকল্লোল ও শুকতারার সম্পাদক রূপা মজুমদার জানান, “বাড়িটি যথোপযুক্ত দাম দিয়ে কিনে নিয়ে বাঙালির নবজাগরণের ইতিহাস সংরক্ষণ করতে চেয়েছিলাম আমরা। কিন্তু সুরভীদেবী রাজি হননি। অন্য ব্যক্তি নিয়ে ঐতিহাসিক এই বাড়িটি ভেঙে দিয়ে বহুতল করতে চাইছেন।”

মেয়র ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে দেখা করে ইতিমধ্যেই বাড়িটি হেরিটেজ ঘোষণার জন্য আবেদন করেছে প্রকাশনা সংস্থা। মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার (উদ্যান) এই প্রসঙ্গে জানান, “পুরসভার নিজস্ব হেরিটেজ কমিটি আছে। মেয়র বাঙালির সাহিত্য ও সংস্কৃতির অন্যতম পীঠস্থান বাড়িটি বাঁচাতে হেরিটেজ ঘোষণার আশ্বাস দিয়েছেন। শীঘ্রই আইনি প্রক্রিয়া শুরু হবে। বর্ণপরিচয়ের ছাপাখানা সংরক্ষণ হবেই|”

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related news