তিন মাসে জন্ম নেওয়া ২১৬টি শিশুর মধ্যে নেই কোনও কন্যা সন্তান

3 - মিনিট |

উত্তরকাশীর তিনটি ব্লকের ১৩৩টি গ্রামের জন্মের পরিসংখ্যানে নড়েচড়ে বসেছে উত্তরাখণ্ড প্রশাসন

কে আর সি টাইমস ডেস্ক

ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অন্যতম স্বপ্ন দেশের মহিলারা সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভাবে স্বনিভর্র হয়ে উঠে নতুন ভারত গঠনে এগিয়ে আসুক। নারীক্তির উত্থানে নমোর অন্যতম প্রকল্প, ‘বেটি পড়াও বেটি বাঁচাও’। কিন্তু তাঁর দেশেরই একটি অংশে কন্যা সন্তান জন্মের হার দেখে চমকে উঠতে হয়। উত্তরকাশী জেলার ১৩৩টি গ্রামে সম্প্রতি জন্ম নেওয়া ২১৬ জনের মধ্যে নেই কোনও কন্যা সন্তান।

ভারতে পুত্র সন্তান জন্মের হার কন্যা সন্তানদের থেকে অনেকটাই বেশি।হাজার পুরুষ প্রতি মহিলাদের সংখ্যা এই দেশে ৯৩০।একমাত্র দক্ষিণের রাজ্য কেরলেই মহিলারা সংখ্যাধিক্য। ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী কেরলে পুরুষে মহিলা অনুপাত ১০০০:১০৮৪। মহিলাদের অনুপাত সবথেক কম হরিয়ানায় (হাজার পুরুষ প্রতি মহিলা সংখ্যা ৮৭৭)। কেন্দ্র শাসিত দমন ও দিউতে এই অনুপাত আরও ভয়াবহ হাজার পুরুষ প্রতি মহিলা সংখ্যা সেখানে মাত্র ৬১৮। তবে যখন দেখা যায় ভারতেরই একটি অঞ্চলে জন্ম নেওয়া ২১৬টি শিশুর প্রত্যেকেই পুরুষ, কোনও কন্যা সন্তানের উপস্থিতি নেই, তখন অবাক হওয়া ছাড়া আর কোনও গতি থাকে না। সম্প্রিত উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশী জেলায় ঠিক এরকম ঘটনাই ঘটেছে।  ওই জেলার স্বাস্থ্য দফতরের একটি রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পর জানা গিয়েছে, গত তিন মাসে উত্তরকাশীর দুন্ডা, ভাটওয়ারি এবং নওগাঁও ব্লকের মোট ১৩৩টি গ্রামে জন্ম হয়েছে ২১৬জন শিশুর। এর মধ্যে কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু ভয়াবহ বিষয়টি হল, রেকর্ড বলছে, এই ২১৬ জন সদ্যোজাত শিশুর মধ্যে নেই কোনও কন্যা সন্তান।

বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পরেই কার্যত নড়েচড়ে বসেছে উত্তরাখণ্ড প্রশাসন। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দুন্ডা ব্লকে গত তিন মাসে ২৭টি গ্রামে ৫১টি সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়েছে, যাদের মধ্যেই সব ক’টিই পুত্র সন্তান। ভাটওয়ারি ব্লকেও একই ঘটনা। সেখানে জন্ম নেওয়া ৪৯টি সদ্যোজাতের মধ্যে একটিও কন্যাসন্তান জন্ম নেয়নি। একই ভাবে নওগাঁও ব্লকের২৮টি গ্রামে জন্ম নেওয়া ৪৭টি সন্তানের মধ্যে সকলেই পুত্রসন্তান।

এমন বিরল ঘটনায় স্বাভাবিক ভাবেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে গোটা দেশ জুড়ে।প্রশ্ন উঠেছে, কী করে সম্ভব হল এটা? এ বিষয়ে প্রথম সন্দেহ প্রকাশ করে উত্তরকাশী জেলা প্রশাসন। এর পরেই এই বিষয় নিয়ে তড়িঘড়ি তদন্তের নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসন। উত্তরাখণ্ডের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জানিয়ে দেন, তাঁরা উত্তরকাশীর গ্রামগুলিতে একটি প্রতিনিধি দল পাঠাবেন, যাদের প্রধান কাজ হবে প্রতিটি পরিবারে ০-৬ বছর বয়স পর্যন্ত কত জন শিশু রয়েছে এবং তাদের মধ্যে কত জন ছেলে, কত জন মেয়ে– সেই বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা। প্রতিনিধি দলের সংগৃহিত তথ্যে যদি দেখা যায়, পুত্র এবং কন্যা সন্তানের মধ্যে সংখ্যার এমন বৈষম্য রয়েছে, তা হলে সেই বিষয়ে পূর্ণ তদন্তের পথে নামবে জেলা প্রশাসন। মুখে না বললেও জেলা প্রশাসনের স্পষ্ট ইঙ্গিত কন্যাভ্রূণ হত্যার দিকে।

দেশ জুড়ে যখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’ প্রকল্পের প্রচার চলছে, তখন তা যে উত্তরকাশীর মানুষজনকে বিশেষ সচেতন করতে পারেনি, সে কথা বলাই যায়। কারণ তিন মাসে গত তিন মাসে উত্তরকাশী জেলার ১৩২টি গ্রামে কোনও শিশুকন্যা জন্মাল না, এটা কার্যত অসম্ভব বলেই মনে করছেন চিকিৎসকেরা।

উত্তরকাশীর জেলাশাসক আশিস চৌহান জানিয়েছেন, শিশু জন্মগ্রহণের ক্ষেত্রে কী কারণে নারী-পুরুষ অনুপাতে এমন বৈষম্য দেখা দিয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এর জন্য বিস্তারিত সমীক্ষা ও গবেষণা প্রয়োজন বলেও জানান তিনি। পাশাপাশি, বিষয়টি নিয়ে একটি বৈঠক করে, ওই অঞ্চলের স্থানীয় ‘আশা’ কর্মীদের নজরদারি বাড়ানোরও নির্দেশ দিয়েছেন জেলাশাসক। তার ভিত্তিতে তাঁদের একটি রিপোর্টও জমা দিতে বলা হয়েছে।

উত্তরকাশীর সমাজকর্মী কল্পনা ঠাকুরের অভিযোগ, “এই যে এতগুলি গ্রামে তিন মাসে কোনও কন্যাসন্তান জন্মায়নি, তা কাকতালীয় হতে পারে না। এর অর্থ, জেলা জুড়ে অবাধে কন্যাভ্রূণ হত্যা চলেছে। এই অপরাধ রুখতে সরকার ও প্রশাসন কোনও কাজ করছে কি না জানি না।”

শুধু ভ্রূণহত্যাই নয়, মেয়ে হওয়ার পরেই সদ্যোজাত সন্তানকে মেরে দেওয়া হচ্ছে, এমন সন্দেহও প্রকাশ করা হয়েছে জেলার নানা স্তরে।

আশিস চৌহান এই প্রসঙ্গে আরও বলেন, “আগামী ৬ মাস আমরা সকলের ওপরে নজর রাখব। পর্যবেক্ষণের মাত্রা বাড়াব। পরিস্থিতি যদি না বদলায়, তা হলে আশাকর্মীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেব। পাশাপাশি কন্যাভ্রূণ হত্যা যারা করছে, সেই পরিবারের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গোটা উত্তরাখণ্ডে গড়ে ১০০০ পুরুষ পিছু মহিলার সংখ্যা গড়ে ৯৬৩। কিন্তু শুধু উত্তরকাশী জেলার ক্ষেত্রে সেই মহিলাদের সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ৯৫৮। নারী-পুরুষ অনুপাতের বিচারে রাজ্যের মধ্যে নবম স্থানে রয়েছে এই জেলা।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related news