আসামের রাষ্ট্রীয় নাগরিক পঞ্জীকরণ সম্পর্কে দু-চার কথা

10 - মিনিট |

৩.১১ কোটি অসমবাসী মানুষের মধ্যে প্রথম খসড়ায় নাম আছে ২.৮ কোট মানুষের অর্থাৎ তালিকা থেকে  চল্লিশ লক্ষ মানুষের বাদ পড়ার কথা যার বেশীরভাগই আবার বাঙালী অধ্যুষিত একটি বিশেষ অঞ্চলের।রাষ্ট্রীয় নাগরিক পঞ্জী  বা The National Register of Citizens of India (NRC)    কী – আমরা জেনে গেছি এতদিনে?

শিশির রায়নাথ

রাষ্ট্রীয় নাগরিক পঞ্জী  বা The National Register of Citizens of India (NRC)    কী – আমরা জেনে গেছি এতদিনে। জেনে গেছি ৩.১১ কোটি অসমবাসী মানুষের মধ্যে প্রথম খসড়ায় নাম আছে ২.৮ কোট মানুষের অর্থাৎ জেনেছি তালিকা থেকে  চল্লিশ লক্ষ মানুষের বাদ পড়ার কথা যার বেশীরভাগই আবার বাঙালী অধ্যুষিত একটি বিশেষ অঞ্চলের, জেনেছি আইনত গ্রহণযোগ্য দলিল-দস্তাবেজের কথা এবং তার ওপর সুপ্রিমকোর্টের নতুন নতুন শর্ত বা নির্দেশিকা আরোপ করার কথা, জেনেছি ভবিষতের কালো আতঙ্কে এখনও পর্যন্ত চৌত্রিশজন মানুষের আত্মহত্যার কথা আর জেনেছি নতুন করে আবেদন বা আপত্তি জানিয়ে তালিকায় নাম তোলার শেষদিন আর মাত্র কয়দিন পরের ১৫ই ডিসেম্বর।আর এও জানা গেছে যে আপডেশানের জন্য জমা পড়া আটষট্টি লক্ষ আবেদন থেকে বাদ পড়া চল্লিশ লক্ষ মানুষের মধ্যে  এখনও পর্যন্ত ওই  অবজেকশান জানিয়ে বা ক্লেম করে ফর্ম জমা দিয়েছেন মাত্র দশলক্ষ মানুষ।

সুতরাং অবধারিত ভাবেই যে প্রশ্নটা উঠে আসে তাহলে বাকী ত্রিশ লক্ষ লোক কেন ফর্ম জমা দেন নি বা দিতে পারলেন না? এবং এই ফর্ম জমা না দেবার ফলে তাদের ভবিষ্যত কি হবে?

ভবিষ্যত কি হবে তা এইমুহূর্তে বলার মত কেউ নেই।

তাদের জন্য মধ্যযুগীয় ভয়াবহ ডিটেনশান ক্যাম্প থাকতে পারে, অস্বচ্ছ ‘ড্র্যাকোনিয়ান’ ফরেন ট্রাইবুনালে ‘বিদেশী’ ঘোষিত হলে তাদের ঠেলে দেশ থেকে বার করে দেওয়া হতে পারে, আবার সিটিজেন এ্যামেন্ডমেন্ট বিলের প্রস্তাব অনুযায়ী হিন্দুদের শরণার্থী এবং মুসলমানদের অনুপ্রবেশকারী বলে ঘোষণা এবং সেই অনুযায়ী দুই ভিন্নধর্মী ব্যবস্থা নেওয়াও হতে পারে।

আবার অন্য কিছু সম্ভাবনার কথাও শোনা যাচ্ছে।ভয়ঙ্কর রক্তস্নানের ভিতর দিয়ে আসাম টুকরো হতে পারে। অথবা শুধুই বাংলা ভাষীদের,ধর্ম নিরপেক্ষ ভাবে, রক্তে ও শবদেহে ভরে যেতে পারে এই প্রদেশ। অথবা এই বিস্তীর্ণ বিহু-ভূখন্ডে দুইদল মানুষ পরস্পরের প্রতি তীব্র জাতিগত ঘৃণা আর অবিশ্বাস নিয়ে আরও কিছুদিন পাশাপাশি বাস করতে পারে  যেখানে মানবিকতা ও সৌভ্রাত্র বলে অবশিষ্ট আর থাকবে না কিছুই বরং সম্ভাবনা থাকবে নেলীর মত আরও কিছু চোরাগোপ্তা গণহত্যা ও রক্তপাতের যার একটা ছোট সূচনা ইতিমধ্যেই সামনে এসেছে।.হতে পারে আরও অনেককিছু…

আমরাও তাই সেই অনির্দিষ্ট ভবিষ্যত নিয়ে এখন কথা না বলে যে প্রশ্নটা নিয়ে এগোতে চাই তা হল এই যে বাকী ত্রিশ লক্ষ লোক কেন ফর্ম জমা দেননি বা  দিতে পারেন নি এখনও।তারা কি সবাই অনুপ্রবেশকারী অর্থাৎ চব্বিশে মার্চ উনিশ’শ একাত্তরের পরে এসেছেন আসামে? যদি তা না হয় – তবে তারা কেন গ্রহণযোগ্য দলিল-দস্তাবেজ  জমা দিতে পারছেন না?

বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম থেকে জানা যাচ্ছে যে সুপ্রিমকোর্টের বেঁধে দেওয়া পদ্ধতির জটিলতাই তাদের নাগরিকত্ব প্রমাণের পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

এই পরিপ্রেক্ষিতে সামান্য সামান্য যে সব  ঘটনা সংবাদ মাধ্যমে উঠে আসছে – তা থেকে এই সমস্যার চরিত্র কিছুটা বোঝা যেতে পারে।তবে শুরুতেই একটা কথা পরিষ্কার করে বলে নেওয়া যাক যে আজকের আলোচনা এই নাগরিকপঞ্জীর যাথার্থ্য বা উদ্দেশ্য বিচার নিয়ে নয়, তার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে নয়, তার সমালোচনাও নয় – শুধুমাত্র এই বিশাল কর্মযজ্ঞের অনেকগুলো পর্যায়ক্রমিক ধাপের ভিতর কোথায় কোথায় সমস্যা বা ‘গ্যাপ’-এর সম্ভাবনা রয়ে গ্যাছে – কোথায় কোথায় আমলাতান্ত্রিক চলন এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়ার ‘বটলনেক’ হয়ে দাঁড়াচ্ছে -যার ফলে বেশ কিছু সত্যিকারের ভারতীয় নাগরিক চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ পড়ে যেতে পারেন- শুধু তার একটা আভাস দেবার প্রচেষ্টা মাত্র।আসামে সত্যিকারেই যে কিছু অনুপ্রবেশকারী বা বিদেশীর অস্তিত্ব আছে তা স্বীকার করেই এই আলোচনা।

সুপ্রীম কোর্টের তত্বাবধানে এই যে নাগরিত্ব প্রমাণের কাজ চলছে তার মূল পদ্ধতিগুলো এরকমঃ কোন ব্যক্তি যে ভারতীয় নাগরিক তা প্রমাণ করতে হলে

১. উনিশ’শ একান্নতে প্রস্তুত নাগরিক পঞ্জীতে তার নাম থাকতে হবে। অথবা

২. উনিশ’শ একান্ন-র নাগরিক পঞ্জীর পরবর্তী কিন্তু ২৪শে মার্চ, উনিশ একাত্তরের মধ্যরাত পর্যন্ত (ডেট লাইন) প্রস্তুত কোন ভোটার লিস্টে নাম থাকতে হবে।

(এছাড়াও আরও কিছু দলিল আছে যার কথা আলোচনায় উঠে আসবে।)

কোন ব্যক্তির যদি তাতে সরাসরি নাম না থাকে, বিশেষ করে পরবর্তী প্রজন্মের ক্ষেত্রে, তাহলে তারা যে এইসব তালিকায় নাম থাকা কোন পুরুষ বা মহিলার পরবর্তী প্রজন্ম- গ্রহণযোগ্য উপযুক্ত দলিল দিয়ে  তা প্রমাণ করতে হবে।

এখানে মনে রাখতে হবে যে ১৯৯৭ সালে প্রায় ছয় লক্ষ বাঙালী হিন্দুকে, নাগরিকত্বের সঠিক প্রমাণপত্র দেখাতে না পারার জন্য, ডি-ভোটার (ডাউটফুল ভোটার) ঘোষণা করা হয়েছে।তাদের কোন ছবি-সম্বলিত ভোটার কার্ড দেওয়া হয় নি – এবং আসামের বিভিন্ন জায়গায় স্থাপিত মধ্যযুগীয় ডিটেনশান ক্যাম্পে রেখে অত্যন্ত ধীর গতিতে  ফরেন ট্রাইবুনালের সামনে পেশ করা হচ্ছে তাদের নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য। এই মানুষদের বেশীর ভাগই তথাকথিত অশিক্ষিত, অক্ষরজ্ঞানহীন, বাস্তববোধ বিবর্জিত (unsophisticated)  নিম্ন আয় বা সর্বহারা শ্রেণীর লোকজন – যারা আসামের বণ্যায় বার বার বাস্তুচ্যূত, স্থানচূত এবং উপার্জনচ্যূত। এদের মধ্যে প্রচুর সংখ্যায় অক্ষরজ্ঞানহীন মহিলা, বিধবা এবং স্বামী পরিত্যক্তার পাশাপাশি শিশু-কিশোরেরাও আছে বলে সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ। আইন অনুযায়ী এই সব ডি-ভোটারদের ফরেন ট্রাইবুনালে নিজেদের প্রমাণ করতে হবে যে তারা ভারতীয় নাগরিক – অন্যথায় তারা ‘বিদেশী’ এবং ‘অনুপ্রবেশকারী’ বলে বিবেচিত হবে।এই অদ্ভুত ব্যবস্থার করুণতম অংশ হল যে এই মানুষদের কোর্টে গিয়ে লড়বার মতবুদ্ধি, বিবেচনা, অর্থ বা লোকবল – কোন কিছুরই সংগতি নেই।সুতরাং অনিবার্য্য ভাবে ‘বিদেশী’ তকমা পাওয়ার অপেক্ষায় ডিটেনশান ক্যাম্পে তিল তিল করে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাওয়া ছাড়া এইসব ‘আন্ডার প্রভিলেজড’ মানুষ-মানুষীদের  আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।এই ডি-ভোটার করার ‘মেশিনারীর’ দক্ষতা আর সদিচ্ছার অভাবের চরম নিদর্শন আমরা ইতিমধ্যেই পেয়েছি কয়েক বছর আগে বরাকের হিন্দু-বাঙালী স্বাধীনতা সংগ্রামী প্রফুল্ল চন্দ্র সাহাকে ‘বিদেশী’ ঘোষণার নোটিশ দেওয়ার ভিতর- যার জন্য তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গোগৈকে ক্ষমা চাইতে হয়েছিল।কোকরাঝাড় ক্যাম্পের রোশ্মিয়ারা বেগমের কথাও আমরা জেনেছি যার পরিবারের সবারই নাম ছিল ভোটার লিস্টে এবং যাদের কেউ কেউ আবার সরকারী চাকুরীরত। সুতরাং এইসব ঘটনার পিছনে ‘মেশিনারি’র গোপনজাতিগত বিদ্বেষের সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিলেও অপদার্থতার ইঙ্গিতকে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না কোনমতেই।

এ হেন পরিস্থিতিতে এই নাগরিক পঞ্জীর ‘আপডেশান’-এর কাজ শুরু হয়েছে।যদিও সুপ্রিম কোর্টের তদারকীতে -তবু এই আপডেশান কাজের মেশিনারীর দক্ষতায় (এবং আমলাতান্ত্রিক চলনের ভিতরের সদিচ্ছার অভাবেও) আমরা প্রথমেই ধাক্কা খাই যখন দেখি তাতে বরাকের খ্যাতনামা স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং আসাম সরকারের প্রাক্তন এম.এল.এ. তারাপদ ভট্টাচার্য্যের ছেলে, আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ভাইস চ্যান্সেলার এবং লেখক, তপোধীর ভট্টাচার্য্যের নাম থাকে না। ৩০শে জুলাইতে  প্রকাশিত নাগরিকপঞ্জীর প্রথম খসড়ায়এরকম আরও লক্ষ লক্ষ নাম না-থাকার ফলে  একটা অবিশ্বাস আর সন্দেহ ঘনিয়ে ওঠার  বাতাবরণ স্বাভাবিক নিয়মেই তৈরী হয়ে যায় – যাতে ঘৃতাহুতি দিয়ে চলেছে নানা গোষ্ঠি এবং রাজনৈতিক দলগুলো – তাদের উগ্র, অবিবেচনাপ্রসূত দাম্ভিক ও উস্কানীমূলক প্রলাপের ভিতর দিয়ে।

এই সব পটভূমিকে মাথায় রেখে আমরা আমাদের মূল বক্তব্যে ফিরি।নাগরিকপঞ্জী আপডেশানের জন্য  কম্প্যুটারের মাধ্যমে ওই এক নম্বর ও দুই নম্বর তালিকাকে ভিত্তি করে এক বিশাল ডিজিটালাইজড ‘ডেটা বেস’ প্রস্তুত করা হয়েছে যার নাম ‘লিগ্যাসি ডেটা’।

আগেই বলেছি উনিশ’শ একাত্তর সালের চব্বিশে মার্চ রাত বারটোর পরে আসামে বসবাসকারী সেই সমস্ত নাগরিকদের, যাদের নাম সরাসরি ওই প্রথমে বর্ণিত এক বা দুই নম্বর তালিকায় নেই (আসামের জনজাতি এবং চা বাগান শ্রমিক ছাড়া), তাদের একটা ‘ফ্যামিলি ট্রি ভ্যালিডেশান’ অর্থাৎ বংশ লতিকার প্রামাণ্যতার ভিতর দিয়ে যেতে হবে। অর্থাৎ তাদের প্রমাণ করতে হবে যে ওই ‘লিগ্যাসি ডেটা’য় থাকা কোন মানুষের(পিতা/মাতা,পিতামহ/মাতামহ,প্রপিতামহ/প্রপিতামহী)তারা পরবর্তী প্রজন্ম অর্থাৎ তারা উত্তরাধিকারসূত্রে আসামে আছেন।। অন্যথায় প্রমাণ করতে হবে তারা ভারতের অন্য কোন প্রদেশ থেকে আসামে এসেছেন (সে তথ্য আবার ভ্যালিডেট করবে অর্থাৎ প্রামাণ্যতা দেবে সরাসরি সেই প্রদেশের সরকার)।

বড় একটা সমস্যার সূত্রপাত এইখান থেকেই। অক্ষরজ্ঞানহীন আন্ডার প্রিভিলেজড এই সব মানুষজনকে গোটা কাজটার জন্য সম্পূর্ণ ভাবে নির্ভর করতে হচ্ছে কোন তৃতীয়ব্যক্তির ওপর – যে এই মেশিনারীর অংশ। সে  সরাসরি সরকারী হতে পারে (NRC Seva Kendra বা NSK)  বা স্বেচ্ছাসেবী কোন একক ব্যক্তি কিংবা সংস্থাও হতে পারে।সুতরাং সমস্ত কাজটাই নির্ভর করেছে সেই তৃতীয় ব্যক্তিবিশেষের জ্ঞান ও দক্ষতার ওপর। ব্যাপারটা বুঝে নেওয়া যাক।

অক্ষরজ্ঞানহীন মানুষেরা বহুক্ষেত্রেই তাদের নাম সঠিক উচ্চারণ করতে পারেন না। ফলে তা লিখিত ভাবে ‘রেকর্ড’ করার সময় প্রায়শই বিকৃত হবার সম্ভাবনা থাকে – বিশেষ করে তা যদি একটু ব্যতিক্রমী নাম হয়।চা বাগান  অঞ্চল এবং গ্রামাঞ্চলে দীর্ঘদিন কাজ করার সুবাদে কিছু প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার কথা এখানে বলা যাক। ক্রিশ্চান নাম ‘ভার্জিনিয়া’ চা বাগানের হাজিরা খাতায় ‘বিরজিনিয়া’, প্রভিডেন্ড ফান্ডের খাতায় ‘বিরিজিনিয়া’, ব্যাঙ্কের খাতায় ‘বাজ্জিনিয়া’ ইত্যাদি আকছার হয়েছে।সম্পূর্ণটাই নির্ভর করছে যিনি লিখছেন তার জ্ঞান ও বিচার বুদ্ধির ওপরে। আসামে এ সমস্যাটা তীব্র মুসলমান নিরক্ষর মহিলাদের ক্ষেত্রে।উচ্চারণ দুষ্ট ‘মেহেরুন্নিসা’ সহজেই হয়ে যায় ‘মেহেরুন নেছা’, ‘রেশ্মীয়ারা’ হয়ে যায় ‘রেছমী আরা’।তারওপর লক্ষ্য করা গেছে যে অনেক লোকেরই ‘শুভ’ নামের পরিবর্তে ‘ডাক’ নাম রেকর্ড হয়ে গ্যাছে।

সঙ্গে আছে পদবীর গোলমাল। বিশেষ করে মুসলমান নিরক্ষর মহিলাদের। তারা কখন খাতুন এবং কখন বেগম বলেন এসম্পর্কে সম্ভবত তাদের নিজেদেরই পরিষ্কার ধারণা নেই। পরিবার বা গোষ্ঠীর মানুষজন তাদের যেভাবে শেখায় – তারা সেভাবেই বলেন। এবং পরিবার বা গোষ্ঠীও বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই সেই একই অক্ষরজ্ঞানহীন জনতা যারা প্রচলিত ধ্যান-ধারণারই অজ্ঞানী-বাহক।ফলে উচ্চারণ-বিকৃতিরও ধারক এবং বাহক।

সমস্যা আরও জটিল হয় যখন এইসব ভুলে ভরা ‘বেসিক ডেটা’কে কম্প্যুটারাইজড করা হয়। সেটা সম্পূর্ণই ম্যানুয়ালী করা হয় অর্থাৎ হাতে টাইপ করে কম্প্যুটারে ভরা হয়। সমগ্র মেশিনারীর এই অংশের আউটপুটের নির্ভুলতাও নির্ভর করে ডেটা এন্ট্রি অপারেটারের নিজস্ব জ্ঞান ও বিচার-বুদ্ধির ওপরে। ভারতীয় ব্যাঙ্কগুলো যখন কম্প্যুটারাইজেশান চালু করে তখন বেসিক ডেটাকে ডিজিটাইজড করার সময়ে দেখা গেছে পদে পদে কত ভুল এন্ট্রি টাইপ হয়ে গেছে। সে সব নির্ভুল করার জন্য বারবার প্রিন্টেড আউটপুট নিয়ে বার বার কারেকশান করতে করতে এগোতে হয়েছে। প্রতিটি কারেকশানের পরেও আবার কিছু নতুন ভুলের জন্ম নিয়েছে। ফলে নির্ভুল ডেটাবেস তৈরী করা একটা  পর্যায়ক্রমিক ধারাবাহিক দীর্ঘ ও জটিল কার্য্যক্রম যা যথেষ্টই সময় সাপেক্ষ।এছাড়া অন্য কোন পথ নেই।আসামের ক্ষেত্রে, যেহেতু এটা একটা টাইম ফ্রেমে বাঁধা ছিল – তাই এই ডেটা বেসের নির্ভুলতা নিয়ে প্রথম থেকেই একটা প্রশ্ন চিহ্ণ আছে।

আসামের ক্ষেত্রে আরও একটা অতিরিক্ত সমস্যা আছে। তা হ’ল উচ্চারণগত সমস্যা। একটা বাঙালী হিন্দু বা মুসলমান নামকে একজন আসামবাসী একটু অন্য ভাবে উচ্চারণ করেন – বিশেষ করে ট,শ,ষ এবং স-র ক্ষেত্রে।ফলে ডেটা এন্ট্রি অপারেটর যদি আসামবাসী হন সেক্ষেত্রে তিনি বেসিক ডেটায় প্রাপ্ত বাংলা নামকে সাধারণত অসমীয়া উচ্চারণেই ‘ফিড’ করবেন। সেক্ষেত্রে আবার ডেটা বিকৃতি ঘটার সম্ভাবনা থেকেই যায়। এরফলে বাঙ্গালী হিন্দু নাম ‘বটকৃষ্ণ’, ইংরাজীতে ‘Batakrishna’  চূড়ান্ত আউটপুটে হয়ে যায় ‘বাতকৃষ্ণ’।

এত কথা বলার উদ্দেশ্য সেই ‘বেসিক লিগাসি ডেটা’ – যা দিয়ে আসামে বসবাসের উত্তরাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।প্রাথমিক পর্যায়ে আমাদের পশ্চিমবঙ্গে ভোটার কার্ড বা এপিক-এর গল্প কমবেশী সবারই জানা আছে।আমি একজন পূর্ণসাক্ষর মানুষ হিসেবে আমার পরিবারের  বেসিক ডেটা ফর্ম নিজে ভর্তি করে জমা দিয়েছিলাম। তা সত্বেও আমার স্ত্রী-র কার্ডে আমাকে দেখানো হয়েছে তার ‘পিতা’ হিসেবে এবং আমার ছেলে ‘নম্রনীল’ হয়েছে ‘নম্রনাল’। সে সব সংশোধন করে নিতে পারা আমার মত একজন পূর্ণসাক্ষর মানুষের পক্ষে সম্ভব।কিন্তু অক্ষরজ্ঞানহীন এবং বাস্তববুদ্ধিবিবর্জিত (unsophisticated) মানুষজন, যারা পড়তে না পারার জন্য নিজেরা জানেই না কোথায় কি ভুল আছে, কি ভাবে নিজেরা এই জাতীয় ভুল ঠিক করবে?তারজন্য তাদের আবার নির্ভর করতে হবে তৃতীয় কোন,ধরে নিলাম স্বেচ্ছাসেবী, মানুষের ওপর – এবং সে সংশোধন আবার নির্ভর করবে সেই তৃতীয় মানুষটির জ্ঞান ও সদিচ্ছার ওপর।

ফলে স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে যে নাগরিকপঞ্জীর যে লিগ্যাসী ডেটা-কে অথেন্টিক এবং স্যাক্রোস্যাঙ্কট ধরে নিয়ে এগোন হয়েছে/হচ্ছে তার গোড়ায় অনেকগুলো ‘গ্যাপ’ থেকে যাবার সম্ভাবনা প্রচুর।

বলা হচ্ছে এই সব ডেটা এবং ফ্যামিলি ট্রি ভেরিফিকেশানের জন্য ফিল্ড লেবেল মেশিনারী তৈরী করা হয়েছে যারা বাড়ি বাড়ি ঘুরে এই জাতীয় ‘গ্যাপ’ সংশোধন করবেন।তা যদিও অনেকটাই কার্য্যকরী প্রচেষ্টা – কিন্তু মূল সমস্যা লিগ্যাসি প্রতিষ্ঠা করার, ডেট লাইনের আগে আসামে অবস্থান/প্রবেশ করার  এবং পরবর্তী সময়ে উত্তরাধিকারী হয়ে জন্মানোর দলিলের প্রামাণ্যতা প্রতিষ্ঠা করা। সংবাদ মাধ্যম থেকে পাওয়া কয়েকটা উদাহরণ তুলে সমস্যার গভীরতা দেখা যাক।

১. আসামের বাক্‌সা জেলার কাটাঝাড় গ্রামের বাসিন্দা সুজিত ঘোষ একজন সব্জী বিক্রেতা। তার বা তার পরিবারের কারও নামই চূড়ান্ত তালিকায় নেই। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে তার মা একজন ডি-ভোটার এবং সুপ্রিম কোর্টের গাইড লাইন অনুসারে কোন ডি-ভোটারের পরিবারের কারো নামই নেওয়া হবে না যতক্ষণ না সেই ডি-ভোটার ফরেন ট্রাইবুনাল থেকে ‘নাগরিক’ স্বীকৃতি পাচ্ছেন। এদিকে ঘটনা হচ্ছে সুজিত ঘোষ তাদের ‘লিগ্যাসি’ হিসেবে দেখিয়েছিলেন তার মা-কে নয় – বাবাকে, যার নাম ডেট লাইনের আগের ভোটার লিস্টে আছে। ইন্ডিয়ান সিটিজেনশিপ আইন অনুযায়ী ২০০৩ সাল পর্যন্ত যারা ভারতে জন্মগ্রহণ করেছে তারা সকলেই ভারতীয় নাগরিক – তারজন্য তার বাবা এবং মা দুজনকেই ভারতীয় নাগরিক হতে হবে – এমন কোন আইন নেই। ফলে তার বাবার উত্তরাধিকারী সূত্রেই সুজিত ঘোষ ও তার পরিবার ভারতীয় নাগরিক হবার যোগ্যতা অর্জন করেছেন।উপরন্তু আজ পর্যন্ত কোনদিনই এই পরিবারকে ন্যাশানাল রিজিস্টার অফ সিটিজেন অথরিটির অফিসে শুনানীর জন্য ডাকা হয় নি।  তবু তার  মা ডি-ভোটার এই অপরাধে তাদের নাম বাদ।এটা স্পষ্টতই ভারতীয় সংবিধান বিরোধী এবং সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশিকার আমলাতান্ত্রিক অপব্যাখ্যা।

২. ঠ্যালা চালক আজিজুর রহমানের নাম থাকলেও তার বিবি এবং দুই বাচ্চার নাম নেই। তার দুই ছেলের জন্য যে বার্থ রেজিস্ট্রেশান সার্টিফিকেট দিয়েছেন – তাও গ্রাহ্য হবে কিনা তা সন্দেহের উর্ধে নয় কেননা ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর ফর ক্লেইম এ্যান্ড অব্জেকশান বা সোপ (SOP) ’-এ সুপ্রিমকোর্ট যে নতুন গাইড লাইন দিয়েছে তাতে ৩রা আগষ্ট,২০১৫-র পরে ইস্যু করা কোন ‘লিঙ্কেজ ডকুমেন্ট’ গ্রাহ্য নয়। উপরন্তু জন্মের এক বছর পরে ইস্যু করা বার্থ সার্টিফিকেট ‘সাব্জেক্ট টু রিগোরাস স্ক্রুটিনি’। আজিজুরের বাচ্চারা বাড়িতেই জন্মে ছিল এবং তাদের শুধু মাত্র পোলিও ইম্যুনাইজেশানের কার্ড ছিল। এনআরসির স্থানীয় পর্যায়ে তা গ্রাহ্য হয়েছিল যেহেতু আজিজুর এবং তার বাচ্চারা পরিচিত ছিল। কিন্তু পরবর্তী ধাপে তা গ্রাহ্য না হওয়ায়  আজিজুর এখন ওই ইম্যুনাইজেশান রেকর্ডের ভিত্তিতে তাদের বার্থ সার্টিফিকেট বানিয়েছে – কিন্তু তা শেষ পর্যন্ত গ্রাহ্য হবে কিনা তা এই মুহূর্তে কারো জানা নেই।

আজিজুরের বিবি তার সঙ্গে তার বাবার ‘লিগ্যাসি’ প্রমাণ করার জন্য যে গ্রাম-পঞ্চায়েতের সার্টিফিকেট দিয়েছিল তা বাতিল হয়েছে।আজিজুর এখন বিবির বাবার র‍্যাশন কার্ড দিয়ে ওই গ্রাম-পঞ্চায়েতের সার্টিফিকেট-এর প্রামাণ্যতা প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় আছেন।

গৌহাটি হাইকোর্ট ২০১৭-তে এই জাতীয় গ্রাম-পঞ্চায়েতের সার্টিফিকেটকে লিঙ্কেজ ডকুমেন্ট হিসেবে সরাসরি বাতিল করেছিল। সুপ্রিমকোর্ট যদিও তাকে মান্যতা দিয়েছে তবুও এনআরসি অথরিটিকে তার প্রামাণ্যতা কঠোরভাবে পরীক্ষা করে নির্দেশ দিয়েছে। এনআরসি অথরিটি শুধু এই বিষয়টাই পরীক্ষা করে দেখার জন্য স্পেশাল অফিসার নিয়োগ করেছে।এনআরসি-র অফিসারদের ইঙ্গিত অনুসারে এক অবিশ্বাস্য সংখ্যায় এইসব সার্টিফিকেট  বাতিল হয়েছে।। সিটিজেনশিপ লিস্ট-এর একজন স্থানীয় রেজিস্ট্রার সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন যে এই অবিশ্বাস্য সংখ্যায় বাতিল করাটা হয়েছে এমনকি সামান্যতম ‘ভেরিফাই’ না করেই।এই ঘটনাকে শুধু মাত্র আমলাতান্ত্রিক ঔদাসীন্য বা সদিচ্ছার অভাব বলে মেনে নেওয়া কঠিন।

এইসব মহিলারা এখন র‍্যাশন কার্ড দিয়ে বাবার সঙ্গে লিগ্যাসি প্রমাণ করার শেষ চেষ্টা করছেন কেননা ‘সোপ’ অনুসারে কোন নতুন দলিল গ্রাহ্য নয়। ওদিকে র‍্যাশন কার্ড একটি অতি দুর্বল দলিল এবং পূর্বোক্ত রেজিস্ট্রারের বয়ান অনুসারে তার সেবাকেন্দ্রে একটাও র‍্যাশান কার্ড গ্রাহ্য হবার কথা তিনি মনে করতে পারেন না।

৩. বরপেটার গোবর্ধন গ্রামের ইমান আলি একজনকে ছশ টাকা দিয়েছিল তার ছেলের বার্থ-সার্টিফিকেট বানিয়ে দেবার জন্য।সেই সার্টিফিকেট ‘জাল’ বলে প্রমাণিত হয়েছে।সে এখন ছেলের স্কুলের থেকে ‘অথেন্টিকেটেড’ সার্টিফিকেট নিয়ে আবার জমা দিতে গিয়েছিল। কিন্তু ‘সোপ’-এর নতুন নির্দেশ অনুসারে কোন নতুন দলিল গ্রাহ্য নয়।তা হলে ইমান আলি এখন কি করবে?

৪. সুরুজ আলি ও তার পরিবার ‘তাহের আলি’ বলে একজনকে তাদের  ঠাকুর্দা হিসেবে পরিচয় দিয়ে ‘লিগ্যাসী’ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল।সুরুজের বাবা সুরুজের  খুব ছোট বেলাতেই মারা যান এবং তার মা অপ্রকৃতিস্থ। কেউ তাকে বলেছিল তাদের ঠাকুর্দার নাম তাহের আলি।ফ্যামিলি ট্রি ভেরিফিকেশানের সময় দেখা গেল এই তাহের আলির সঙ্গে তাদের পরিবারের কোন সম্পর্ক নেই।এটা নিঃসন্দেহে বড় ভুল। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে সুরজ আলির নিজের বাবা ‘ফজল আলি’-র নাম ১৯৬৬ সালের ভোটার তালিকায় আছে।কিন্তু সুরুজ আলির এখন কিছুই করার নেই কারন ‘সোপ’-এর নতুন নির্দেশ অনুসারে নতুন কোন মানুষকে ‘লিগ্যাসী পার্সেন’ হিসেবে দেওয়া যাবে না।

৫. প্রায় একই রকম ঘটনা গৌহাটি থেকে মাত্র সত্তর কিলোমিটার দুরের গোরাইমারী গ্রামের রহিমুদ্দীন আর তার দাদা রবিউলের। তাদের পরিবারের চোদ্দ জনের নাম ওঠে নি তালিকায় কেননা তারা লিগ্যাসি পার্সেন হিসেবে তাদের বাবা মুসা শেখের যে কোড দিয়েছিল ভেরিফিকেশানের সময় দেখা গেল সে অন্য মুসা শেখ।বাবার সঙ্গে লিগাসি প্রমাণ করার জন্য তাদের কাছে আর কোন দলিল নেই।। কিন্তু দেখা যাচ্ছে ১৯৫১-র লিগ্যাসি তালিকায়  তার ঠাকুরদা হায়দর আলীর নাম আছে। কিন্তু তারাও ‘সোপ’-এর নতুন নির্দেশ অনুসারে নতুন কোন মানুষকে ‘লিগ্যাসী পার্সেন’ হিসেবে দিতে পারবে না।

৫. ফুলমতি হরিজন এবং তার স্বামীর নাম তালিকায় থাকলেও তার তিন সন্তানের কার নাম ওঠে নি। ফুলমতি তাদের জন্য স্কুলের সার্টিফিকেট জমা দিয়েছিলেন কিন্তু তা গ্রাহ্য হয় নি।। ফুলমতির বক্তব্য – আমরা রোজ-মজুরে। কামাই করে ছেলেদের মুখে ভাত জোগাবো না রোজ রোজ দৌড়ে দৌড়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করবো যে এই বাচ্চাগুলোকে আমিই পেটে ধরেছি।

খবরের কাগজ থেকে পাওয়া এইসব টুকরো টুকরোঘটনাগুলো হিমশৈলের চূড়া মাত্র। আগেই বলা হয়েছে আসামের প্রতি বছরের বন্যায় লক্ষ লক্ষ মানুষবহুবার বাস্তুচ্যূত হয়েছেন, ধ্বংস হয়েছে তাদের বহু মূল্যবান দলিল, দস্তাবেজ – যার মধ্যে যেমন জমির দলিল পত্র আছে তেমনি আছে বার্থ-সার্টিফিকেট থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজের জরুরী সার্টিফিকেট ইত্যাদি। ফলে যে সমস্ত লিঙ্ক ডকুমেন্ট দিয়ে উত্তরাধিকারী প্রমাণ করা যায় – তার কোনকিছুই তাদের হাতে নেই।এইসব বাস্তব সমস্যাগুলোর কারণেই বাদ গেছে চল্লিশ লক্ষ মানুষের বেশীরভাগই।

আবার, বন্যায় শুধু মাত্র ব্যক্তিগত সর্বনাশই হয় নি – বহু স্কুল, কলেজ এবং সরকারী প্রতিষ্ঠানেরও প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল/ হয়ে চলেছে। তার মধ্যে পুরানো রেকর্ড নষ্ট হয়ে যাওয়াও আছে। সঠিক সংরক্ষণের অভাবেও প্রচুর পুরোন রেকর্ড নষ্ট হবার সম্ভাবনাও আছে। সুতরাং জমা দেওয়া বার্থ-সার্টিফিকেট, স্কুল-কলেজের সার্টিফিকেট, জমির দলিল ইত্যাদি যখন ভেরিফিকেশানের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয় – তখন কিসের ভিত্তিতে তা ‘ভেরিফাই’ করা হয়েছে তা কে বলবে। সেই ভেরিফিকেশান যে সঠিক – তা্কে ‘চেক এ্যান্ড গাইড’ করার কোন মেশিনারী কি ‘সেট আপ’ করা হয়েছে? যে সংস্থার দলিল-দস্তাবেজ বন্যায় নষ্ট হয়ে গেছে – তার ভিত্তিতে বা অন্য কোন কারণে যদি ভেরিফিকেশানের সময় কেউ কোন দলিলকে ইচ্ছাকৃত বা অপরাগ হয়ে  ‘সঠিক’ বা ‘জাল’ বলে দেননি – তা নির্ণয় হবে কী ভাবে?

এতসব গ্যাপ এবং ল্যাকুনার মধ্যে দিয়ে নাগরিকত্ব-র মত অতি সংবেদনশীল এই যে প্রক্রিয়া চলছে- জরুরী ভিত্তিতে সেসব মেরামত করা প্রয়োজন বলে আমার মনে হয়।

এই মুহূর্তে জানা গেল যে সুপ্রিমকোর্ট ‘ আবেদন এবং আপত্তি’ জানানোর শেষ দিন আরও কিছুদিন বাড়াবার চিন্তাভাবনা করছে – যা অত্যন্ত আনন্দের কথা। কিন্তু সঠিক ভাবে নাগরিকত্ব নির্মাণ এবং আমলাতান্ত্রিক কর্মপদ্ধতির – বিশেষ করে কাগজ ও দলিলের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা – এই দুই-এর জটিল এবং গভীর সম্পর্ককের ভিতর থেকে উঠে আসা এই সব স্পর্শকাতর বিষয়কে অত্যন্ত বাস্তবোচিত দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার না করতে পারলে সমস্যার সমাধান হওয়া মুশকিল । যে আন্ডার প্রিভিলেজড মানুষগুলো নাগরিকত্ব প্রমাণের ক্ষেত্রে  অজ্ঞানত বশত ভুল করেছে– ‘ন্যাচারাল জাস্টিস’ অনুসারেমাননীয় সুপ্রিমকোর্ট সেই সব ভুলকেঠিক করার দ্বিতীয় সুযোগ দেবে না – একথা আমি বিশ্বাস করি না। তাই আমলাতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গীতে আটকে পড়া এইসব মানুষদের সমস্যা অনতিবিলম্বে মাননীয় সুপ্রিমকোর্টের গোচরে আনতে পারাটা সংশ্লিষ্ট মানুষজনের প্রথম ও  প্রধান কাজ বলে আমি মনে করি।

আইনের জগতে একটা কথা ব্যাপক প্রচলিত  আছে – প্রমাণের অভাবে একজন অপরাধী যদিওবা ছাড়া পেয়ে যায় একজন নির্দোষ মানুষ যেন কখনই সাজা না পায়। কথাটাকে একটু পালটে আমি বলতে চাই – মিথ্যা প্রমাণ দিয়ে একজন অনুপ্রবেশকারী যদিও বা পার পেয়ে যায় একজনও সত্যিকারের ভারতীয় নাগরিক যেন ‘অনুপ্রবেশকারী’ ঘোষিত না হয় – এটাই আমার কামনা।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *