স্থানীয় স্তরে নির্দিষ্ট কোনো একটি চিকিৎসা পরিষেবা না থাকলে সাধারণত আমরা অনেকেই চলে যাই দক্ষিণ ভারতে বা অন্য অঞ্চলে
সৌমিত্র শংকর চৌধুরী
শিলচর : স্থানীয় স্তরে নির্দিষ্ট কোনো একটি চিকিৎসা পরিষেবা না থাকলে সাধারণত আমরা অনেকেই চলে যাই দক্ষিণ ভারতে বা অন্য অঞ্চলে। আমি আমার এক নিকট আত্মীয়কে পায়ের ধমনীর বাইপাস সার্জারি করাতে শিলচর থেকে চলে গেলাম পাশের বাড়ি আগরতলায়। আগরতলার সুপরিচিত কার্ডিওথোরাসিস অ্যান্ড ভাস্কুলার সার্জন ড: কনক নারায়ণ ভট্টাচার্য যিনি আমার পরম মিত্র তাঁর চিকিৎসা স্নেহস্পর্শ পেতে।
জানতে পারলাম, সরকারি হাসপাতালে তারিখ পেতে খানিকটা দেরি হবে, তাই আগরতলার এক সুপরিচিত কর্পোরেট হাসপাতালে ডক্টর কনক নারায়ণ ভট্টাচার্যের অধীনে রোগীকে ভর্তি করিয়ে অপারেশন করিয়ে পাঁচদিনের মাথায় রোগীকে সুস্থ করে শিলচরে ফিরে এলাম।
রোগী নিজের পায়ে হেঁটে তিনতলায় তাঁর বাড়িতে পৌঁছোলেন। আমরা অনেকদিন ধরেই চাইছি শিলচরেও সি.টি.ভি.এস ( কারডিওথোরাসিস অ্যান্ড ভাসকুলার সার্জারি ) সেট-আপ যেন গড়ে তোলা যায়। অনেক সি.টি.ভি.এস ডক্টরদের সাথে নিজেদের উদ্যোগে আমরা কথাবার্তা বলে আসছি, অনেকে সম্মতিও দিয়েছেন শিলচরে স্থায়ীভাবে আসবেন বলে, আশা করি সেই শুভদিন বেশি দূর নয়।
যাইহোক ফিরে যাচ্ছি পূর্ব প্রসঙ্গে, আগরতলার সেই কর্পোরেট হাসপাতালের প্রায় প্রতিজন যুবক-যুবতীরা যারাই বিভিন্ন ভাবে রোগীর সেবায় এসেছেন তাদের প্রত্যেকের ব্যবহার এবং কাজের প্রতি নিষ্ঠা দেখে আমরা অভিভূত। রোগীকে ভর্তি করানোটাই শুধু ছিলো আমাদের দায়িত্ব, বাকি সব তাদের, বলতে গেলে রিলিজ নেয়া অব্দি।
কর্পোরেট হাসপাতালে রিসিপশন কাউন্টারের সামনে দেখলাম বড় বড় করে ডিসপ্লে করা আছে, ইন্সুরেন্স হেল্পডেস্ক, কর্পোরেট হেল্পডেস্ক, আয়ুষ্মান ভারত হেল্পডেস্ক প্রভৃতি। আমাদের রোগী যখন ভর্তি হলেন তখন উনাকেও জিজ্ঞেস করা হলো আপনার কি কোনো ইনস্যুরেন্স আছে, যদি থাকে তাহলে পাশের কাউন্সিলিং রুমে চলে যান, ওখান থেকে আপনাকে পরবর্তী পদক্ষেপ সম্বন্ধে গাইড করা হবে, ক্যাশলেস বা রিইনভার্সমেন্ট বিষয়ক।
পাশে বসা আয়ুষ্মান কার্ড হোল্ডার একজন রোগীকেও সেই ভাবেই পরামর্শ দেওয়া হলো। অর্থাৎ অনেকটা এমন ভাবে মনে হলো যে, উনারাই যেনো রোগীর কাছ থেকে জানতে চাইছেন কোনো ইন্সুরেন্স কাভারেজ আছে কিনা, যদি থাকে তাহলে তারা খুশি মনে তাঁদেরকে সেই সুবিধা পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় উপদেশ দিয়ে যেতেও প্রস্তুত। বিপিএল শ্রেণীভুক্ত রোগীদেরকে দেখলাম কর্পোরেট হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে, খানিকটা এই ধরনের ব্যবস্থা নাকি আগে থেকেও ছিলো, অর্থাৎ আর্থিকভাবে দুর্বল শ্রেণীর জন্যও আলাদা প্যাকেজ, এমনটাই জানালেন সেই হাসপাতালের একজন কর্মচারী।
যাইহোক, আমরা চাই, সমস্ত বরাক জুড়ে সব হাসপাতালে ইন্সুরেন্স এবং আয়ুষ্মান ভারত হেলপ ডেস্ক লেখা থাকুক বড় বড় হরফে রিসেপশন কাউন্টারের সামনে। যারা ইতিমধ্যেই ডিসপ্লে করে রেখেছেন তাদের জন্য নয়, যারা এখনো রাখেননি তাদের প্রতি আমাদের এই বিনীত অনুরোধ। যাই হোক, সবকিছু মিলিয়ে বেশ ভালই অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরে এসেছি। পাশের বাড়ির ছেলেটি যখন ভালো রেজাল্ট করে তখন যেমন নিজেদের মন জুড়িয়ে যায়, ঠিক সেই মনোভাব নিয়েই পাশের বাড়ির গল্পটি সবার সঙ্গে ভাগ করে নিতে ইচ্ছে, তাই লিখছি।
আগরতলা শহরটি বেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, আগেও ছিল এখনো বেশ আছে। একে ধরে রাখা এবং আরো ভালো করে তোলাটাই চ্যালেঞ্জ। আমি যখনই যেখানে যাই, সেখানে গিয়ে মনে হয় শিলচরকে বরাককে নিয়ে কিছু করার আছে কি ! যাইহোক, আমার রোগীর অপারেশনের পরের পরের দিনই চলে গেলাম বাংলাদেশ অ্যাসিস্ট্যান্ট হাইকমিশনার অফিসে। দেখা করলাম এসিস্ট্যান্ট হাই কমিশনারের সঙ্গে, আলোচনা করলাম, আগরতলা হয়ে প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে আসামের বরাক উপত্যকার ব্যবসায়িক আদান প্রদান কিভাবে কি করা যায় এবং বরাক হয়ে গোটা উত্তর পূর্বে।
উনাকে অনুরোধ করলাম, শিলচরে বাংলাদেশ ভিসা অফিস খোলার বিষয়ে, কয়েক মাস আগে গুয়াহাটিস্থ বাংলাদেশ অ্যাসিস্ট্যান্ট হাইকমিশনার কেও একই অনুরোধ করার সুযোগ পেয়েছিলাম আমাদের সংগঠন থেকে। বেশ ভালো আলোচনা করার সুযোগ পেলাম সেদিন আগরতলায়ও। পরের দিন গেলাম আগরতলায় স্টেট সেক্রেটারিয়েট অফিসে, মনে ইচ্ছে ছিলো যদি ত্রিপুরার মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর খানিকটা সাক্ষাৎ পাওয়ার সুযোগ হয়।
মুখ্যমন্ত্রী সেক্রেটারিয়েট অফিসে ছিলেন না। যাইহোক, সেখানে উপস্থিত অন্যান্য উচ্চপদস্থ সরকারি অফিসারদের সাথে খানিকটা আলোচনা করার সুযোগ হওয়ায় আমাদের ভাবনা তুলে ধরলাম তাঁদের কাছে। আসামের শিলচরে ত্রিপুরা ভবন এবং আগরতলায় আসাম ভবন খোলার প্রয়োজনীয়তা সবিস্তারে তুলে ধরার চেষ্টা করলাম।
বোঝাবার চেষ্টা করলাম, এতে করে আসামের বরাক অঞ্চলের সাথে ত্রিপুরার ঘনিষ্ঠতা অনেকটা বাড়বে। ব্যবসায়িক বিনিয়োগ সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান, পর্যটন শিল্পের বিস্তার, চিকিৎসা সুবিধা প্রভৃতি নানা ক্ষেত্রে একে অন্যের আরো কাছে আসার সুযোগ হবে। ত্রিপুরার অনেক মানুষ চিকিৎসার জন্য শিলচরে আসেন, শিলচরে ত্রিপুরা ভবন থাকলে সেইসব লোকেরা যেমন পাবেন প্রপার গাইডেন্স, তেমনি সুস্থ হয়ে ফিরে যাবার সময় ত্রিপুরা ভবনের গাইডেন্সে দেখে যাবেন খাসপুর রাজবাড়ি, এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম বিল শনবিল, সিপাহী বিদ্রোহের মালেগর টিলা প্রভৃতি আসামের বরাকের অনেক পর্যটন স্থল, বিস্তার ঘটবে মেডিকেল ট্যুরিজমের।
পাশাপাশি আগরতলার আসাম ভবন থেকে অনেক ধরনের গাইডেন্স গাইডেন্স, সহযোগিতা পাবেন বরাকের ব্যবসায়িক মহল, সাংস্কৃতিক সমাজ, রোগী এবং পর্যটকরাও। স্থানীয় অর্থনীতির বিস্তার ঘটবে সব দিকে। বেশ মন দিয়ে উনারা শুনছিলেন সেদিনের আলোচনা। যাইহোক, পরবর্তীতে, সংশ্লিষ্ট দুই রাজ্যের দুই মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আরও বিস্তারিত ভাবে ভাবনাগুলো তুলে ধরার সুযোগের অপেক্ষায় থাকবো।