৬৪ সালে ভারতে এসেও বিদেশি মোহনলাল দাস ও তার পরিবার!
হয়রানির শিকার হচ্ছেন বাঙালি হিন্দুরা।কাটিগড়ার একই পরিবারের ৫ সদস্যেকে বিদেশি ঘোষণা করে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া রায় নিয়ে প্রশ্ন তুলল গুয়াহাটি হাইকোর্ট।এই পরিবারের বিরুদ্ধে কাটিগড়ার চার নম্বর ট্রাইব্যুনাল মামলা চলছিল।গত২১-৫-২২ তারিখে এই মামলার রায়ে ট্রাইবুনাল বিচারপতি এই পরিবারের সদস্য মোহনলাল দাস, তার স্ত্রী প্রমীলা বালা দাস, তার ছেলে শ্রীদাম দাস ও সাধু দাস এবং মেয়ে সুমন দাসকে বিদেশি শনাক্ত করে রায় দেন।
এই রায় কে চ্যালেঞ্জ করে দরিদ্র এই পরিবারের পক্ষ থেকে গুয়াহাটি হাইকোর্টে আপিল করা হয়। গুয়াহাটি হাইকোর্ট রায় বিবেচনা করে বলেছে, ট্রাইবুনাল তাদের বিদেশী ঘোষনা করলেও রায়ে উল্লেখ করা হয়নি ,এই পরিবার ১৯৬৪ সালের পরে বা ৭১ সালে অথবা এর পরে অবৈধভাবে কোন বৈধ কাগজপত্র ছাড়া ভারতে এসেছে।
তাই আদালত আবেদনকারীদের কাছাড়ের বর্ডার এসপির কাছে হাজিরা দিতে নির্দেশ দিয়েছে। একইসঙ্গে পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই পরিবারকে দেশের মাটি থেকে উৎখাত করা যাবে না এই নির্দেশও দিয়েছে গুয়াহাটি হাইকোর্ট। এখন আবেদনকারীদের বর্ডার এসপির অফিসের এলাকার ভিতরে থাকতে হবে।
গুয়াহাটি হাইকোর্টের এই নির্দেশের পরে বিদেশী ঘোষিত এই পরিবার কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে। কিন্তু গুয়াহাটি হাইকোর্টে আইনজীবী জোগাড় করা থেকে শুরু করে মামলা চালানো ,অনেক টাকা খরচ হয়ে গেছে।
একটি দরিদ্র পরিবারের পক্ষে এই টাকা যোগাড় করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। গুয়াহাটি হাইকোর্ট এই মামলার সমস্ত নথিপত্র চেয়েছে। বিদেশি ঘোষণা করা হলেও এই নির্ধারিত সময়ে পরিবারটি যেখানে আসেনি সেটা ট্রাইব্যুনালের রায়ে উল্লেখ করা হয়নি। তাই হাইকোর্ট বিষয়টি ফের যাচাই করছে।
মোহনলাল দাসের বাড়ি সৈয়দপুর আমতলার । আশ্চর্য এই দুর্গম এলাকার একটি পরিবার হাইকোর্টে গিয়ে মামলা লড়ছে? নিজেকে ভারতীয় প্রমাণ করতে।ভাবতেই আশ্চর্য লাগে। মোহনলাল জানালেন ,তারা ভারতে এসেছেন ১৯৬৪ সালে।
১৯৬৭ সালের জমির দলিল তাদের কাছে আছে। ৬৬ সাল থেকেই তারা ভোট দিয়ে আসছেন। তাহলে তিনি কিভাবে বিদেশী হয়ে গেলেন। ৬৪ সালের হকারের লাইসেন্স তার কাছে আছে।
সত্যিই তো ৬৪ সালে ভারতে এসে কিভাবে তিনি বিদেশী হয়ে গেলেন? আসাম চুক্তি মতে একাত্তরের পর যারা এসেছে তারা বিদেশি। ১৯৮৫ সালের সংশোধিত নাগরিক আইন এই কথাই বলছে। ৬৪ সাল থেকে ৭১ সাল পর্যন্ত যারা এসেছেন তাদের দশ বছর ভোটাধিকার থাকবে না। কিন্তু তারা বিদেশি বলে গণ্য হবেন না।
এটাইতো আইন বলছে। কিন্তু যে কোন কারণেই হোক কাটিগড়ার চার নম্বর বিদেশি ট্রাইবুনাল এই পরিবারের সব সদস্যদের বিদেশি ঘোষিত করে। অথচ যাবতীয় নথিপত্র তাদের কাছে আছে। মোহনলাল জানাচ্ছেন এনআরসির চূড়ান্ত খসড়া তালিকায় তাদের নাম উঠেছে। তারা এই রায়ের বিরুদ্ধে গুয়াহাটি হাইকোর্টে আবেদন করেন।
গুয়াহাটি হাইকোর্ট ট্রাইব্যুনালের রায় নিয়ে প্রশ্ন তুলে যাবতীয় নথিপত্র চেয়েছে। ট্রাইব্যুনালের রায়ে ভুল থাকায় আজকে তাদের এই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অথচ এই পরিবারের কোন দোষ নেই। ৬৬ সালের আগেই তারা এ দেশে এসেছেন। আসাম চুক্তি মেনে নিলে তারা এ দেশের নাগরিক।
৬৬ এর আগে এসেছেন। ৬৭ সাল থেকে ভোট দিচ্ছেন। ৬৭ সালের জমির দলিল আছে। অর্থাৎ আইনগত সমস্ত কিছুই তাদের আছে। তারপরও তারা বিদেশি হয়ে গেলে ন। এখন হাইকোর্টে গিয়ে মামলা লড়তে হচ্ছে। একটি গরীব পরিবারের কাছে এর চাইতে বেশি যন্ত্রণার কি হতে পারে ।এভাবে আইনের যাতাকলে পড়ে কত পরিবার হয়রানির শিকার হচ্ছে তার ইয়াত্তা নেই।
অতি কষ্টে মোহনলাল জানালেন তার দুর্গতির কথা। অনেক দুঃখে নির্যাতনের শিকার হয়ে পূর্বপুরুষের ভিটা ছেড়ে সর্বস্ব হারিয়ে এদেশে এসেছেন। ভেবেছিলেন এটা হিন্দুর দেশ আর কোনো চিন্তা নেই। কিন্তু হঠাৎ একদিন বিদেশি নোটিশ এল। তারপর নিজেকে ভারতীয় প্রমাণ করতে অক্লান্ত পরিশ্রম।
এখন একমাত্র ভরসার জায়গা হাইকোর্ট। সমস্ত কিছুর বিনিময়েও হাইকোর্টে মামলা লড়ে নিজেকে ভারতীয় প্রমাণ করে যাবেন এই পরিবার। এই দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ে পাশে পাননি কাউকেই। স্বাধীনতা ও দেশভাগ ৭৫ বছর পরেও উদ্বাস্তুদের সমস্যাটা কিন্তু থেকেই গেল। তাই আজও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে মোহনলালদের মত হাজার হাজার পরিবারকে।