১,২১,০০০ মেট্রিক টন প্লাস্টিকজাত বর্জ্য বিদেশ থেকে আমদানি হয়েছে ভারতে

2 - মিনিট |

বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকেই এসেছে ৫৫,০০০ মেট্রিক টন

কে আর সি টাইমস ডেস্ক

ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক নিয়ে সমস্যায় জর্জিরত গোটা দেশ। ফেলে দেওয়া ব্যবহৃত প্লাস্টিক পরিবেশ দূষণে মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। অন্যান্য বর্জ্য পদার্থের মতো নিম্নমানের প্লাস্টিক মাটিতে মিশে যায় না বা পুড়িয়ে দেওয়ায় যায় না। ফলে ক্রমশ প্লাস্টিকের স্তূপে পরিণত হচ্ছে গোটা দেশ। কমে যাচ্ছে নদী বা সমুদ্রের নব্যতা। জলাশযগুলি প্লাস্টিকে ভর্তি হয়ে যাওয়ায় জল ধরে রাখতে পারছে না। পাশপাশি নিকাশি নালাগুলির খোলা মুখে জল জমে যাচ্ছে। জমা জল থেকে ছড়াচ্ছে নানা ধরণের রোগ সেই সঙ্গে পরিবেশ দূষণও। আর এ সবের ফলে অল্প বৃষ্টিপাতেই ভেসে যাচ্ছে গ্রাম থেক শহর। পাড় ভাঙছে নদী বা শহর। জমা জলে মশাদের কাছে ডিম পাড়ার জন্য আদর্শ জায়গা। ফলে বাড়ছে ডেঙ্গু-ম্যালেরিয়ার মতো মশাবাহিত রোগের প্রকোপ। প্রশাসনও অবশ্য চুপ করে নেই। প্লাস্টিকজাত দ্রব্যের ব্যবহার বন্ধের উদ্দেশ্যে তারাও নানা কর্মসূচি নিচ্ছে। চলছে নিয়মিত প্রচার, এমন কি প্লাস্টক ব্যবহারের ওপর জরিমানাও ধার্য করা হয়েছে। এর ফলে কিছুটা হলেও সচেতন হয়েছে মানুষ, ক্রমশ কমছে প্লাস্টিকের ব্যবহার। কিন্তু দেশের মানুষ সচেতন হলেই এই সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে, এই ধারণা পুরোপুরি ভুল। কারণ ১,২১,০০০ মেট্রিক টন প্লাস্টিকজাত বর্জ্য বিদেশ থেকে আমাদানি হয়েছে ভারতে। আর এই আমদানির পরিমাণ ক্রমশ বেড়েই চলেছে। আর আমদানির বেশিরভাগটাই হয়েছে দুই পড়শি দেশ বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের থেকে।

সম্প্রতি এরকমই একটা ভয়ানক তথ্য উঠে এসেছে একটি গবেষণার পর। পণ্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায নামক একটি এনজিও তাদের গবেষণার পর এই পরিসংখ্যান তুলে ধরেছে। তারা জানিয়েছে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে ৫৫,০০০ মেট্রিক টন প্লাস্টিকজাত বর্জ্য এই দেশে এসেছে। এনজিওটির গবেষণায় জানা গিয়েছে এই দুই প্রতিবেশী দেশ ছাড়াও মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ ও আমেরিকা সহ মোট ২৫টি দেশ থেকে নিয়মিত ভাবে এই আমদানি চলছে। আর এই ধরণের আমদানির পিছেন অধিকাংশ হল দেশের সেই সব সংস্থাগুলি, যারা বর্জ্য পদার্থের পুনর্জাতকরণ করে । এর পাশাপাশি রয়েছে প্লাস্টিক কম্পানিগুলিও। তারা বাতিল হয়ে যাওয়া বোতল-জার সহ অন্যান্য প্লাস্টিকের বর্জ্য এদেশে আমদানি করছে দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া অবস্থায় । এর সঙ্গে ব্যবহৃত জলের বোতল, জার সহ প্লাস্টিকের নানারকম বর্জ্য নদী, সমুদ্র, মাঠে-ঘাটে, যেখানে-সেখানে ফেলে দেওয়া হচ্ছে।

এনজিওটি এই গবেষণা চালিয়েছে এপ্রিল ২০১৮ থেকে ফেব্রুয়ারি ২০১৯-এর মধ্যে। গবেষণার রিপোর্ট অনুযায়ী, শুধুমাত্র রাজধানী দিল্লিতেই আমদানি হয়েছে ১৯,০০০ মেট্রিক টন প্লাস্টিক বর্জ্য।

গবেষণা সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, দুমড়ানো মুচড়ানো অবস্থায় প্লাস্টিকজাত বর্জ্য আমদানির খরচ স্থানীয় ভাবে সংগ্রহ ও পুনর্জাতকরণের থেকে অনেকটাই কম। তাই স্বাভাবিক ভাবে প্লাস্টিকের সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীরা আমদানির পথেই হাঁটছেন। এনজিওিটর রিপোর্টে বলা হয়েছে, এরকমটা চলতে থাকলে প্লাস্টিক দূষণে কোনও ভাবেই নিয়ন্ত্রণ আনা যাবে না। পুনর্জাতকরণের সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীরা যদি আমদানি বন্ধ না করে, তাহলে দেশের নানা জায়গায় জমতে থাকা   প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণও বাড়তে থাকবে, যা বাড়িয়ে দেবে পরিবেশ দূষণের মাত্রাও। সরকারের প্লাস্টিক দূষণ নিয়ে কর্মসূচিগুলিও এর ফলে বিঘ্নিত হবে। তাই প্রশাসনকে নজর দিতে হবে আমদানি নিয়ন্ত্রণে।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *