পরিবেশ রক্ষার্থে ২০ সেপ্টেম্বর পালিত হবে ‘জলবায়ু ধর্মঘট’

3 - মিনিট |

২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে প্রকাশিত ‘ইন্টার গভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ’-এর বিশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০৩০ থেকে ২০৫২ সালের মধ্যে শক্তিশালী শিল্পায়ন পর্বের তুলনায় তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়বে

কে আর সি টাইমস ডেস্ক

আগামী ২০ সেপ্টেম্বর ‘জলবায়ু ধর্মঘট’ সফল করার ডাক দিল ভারতের বিভিন্ন বিজ্ঞান সংগঠনের মোর্চা ‘অল ইন্ডিয়া পিপলস সায়েন্স নেটওয়ার্ক’| এ রাজ্যে তাদের শরিক ‘পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ’ শুক্রবার এই অভিনব আন্দোলন নিয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলন ডাকে|

জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ পরিণতির দিক নির্দেশ করে সুইডেনের ১৬ বছরের ছাত্রী গ্রেটা থুনবার্গ সারা বিশ্বের নজর কেড়েছে| গত বছর নির্বাচনের প্রাক্কালে সে স্কুলে অনুপস্থিত হয়ে দেশের সংসদের বাইরে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কিছু করার দাবি তুলে প্রতিবাদ ধরনায় বসে| ধীরে ধীরে সে দেশের মানুষের এবং শেষে গোটা বিশ্বের নজর কেড়েছে| পরিবেশ রক্ষার সেই ভাবনা তৃনমূল স্তরে ছড়িয়ে দিতে ‘জলবায়ু ধর্মঘট’-এর ডাক| মানববন্ধন, পদযাত্রা, আলোচনাসভা প্রভৃতির মাধ্যমে সবাইকে বোঝানোর চেষ্টা হবে, কিভাবে পায়ে পায়ে এগিয়ে আসছে শেষের সে দিন|

ওই দিন অর্থাৎ আগামী ২০ তারিখে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পড়ুয়ারা এবং শিক্ষক-শিক্ষিকারা বিভিন্ন পোস্টার ও আবেদনপত্র নিয়ে দূষণমুক্ত বিশ্বের অঙ্গীকার করবে| এদিন কলকাতা প্রেসক্লাবে ‘পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ’-র সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ মহাপাত্র বলেন, আমরা তাদের পাশে দাঁড়াবো উপস্থিত হব| মূল যে ৯ দফা দাবিতে ‘জলবায়ু ধর্মঘট’ ডাকা হয়েছে, সেগুলো হল, ১) জলবায়ু পরিবর্তন রোধে রাষ্ট্রগুলিকে ব্যবস্থা নিতে হবে, ২) দূষণমুক্ত পরিবেশ আমাদের অধিকার, ৩) আমাদের একটাই পৃথিবী আসুন একে রক্ষা করি, ৪) হিমবাহ গুলির বরফ গলছে সুন্দরবনের দ্বীপ দেশের সরকার ব্যবস্থা নাও, ৫) একটি গাছ লক্ষ প্রাণ উষ্ণায়ন প্রতিরোধে গাছ লাগান, ৬) প্রতিরোধ করো বিশ্ব উষ্ণায়ন, ৭) অপ্রচলিত শক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে, ৮) আমাদের প্রজন্ম শেষ নয়, আওয়াজ তোলো বিশ্বময়, ৯) ব্যবস্থাকে বদলাও জলবায়ুকে নয়|

প্রদীপ মহাপাত্র বলেন, “বিশ্বের তাপমাত্রা বাড়ছে| গত মে মাসে এর প্রতিবাদে সফলভাবে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় ছাত্র ধর্মঘট হয়| এ ব্যাপারে প্রতিবাদী দেশের সংখ্যা বাড়ছে| এখন ১৬৯ টি দেশে এ ব্যাপারে আন্দোলন সংগঠিত হয়েছে| নতুন প্রজন্মের দাবি, দুষণমুক্ত পরিবেশ তৈরির জন্য পর্যাপ্ত সতর্কতা এখনই নিতে হবে|

‘পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ’-র সহ সভাপতি তপন মিশ্র বলেন, ২০১৫-র ডিসেম্বর মাসে পরিবেশ নিয়ে প্যারিস কনভেনশনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে অনেক আলোচনা হয়| কিন্তু ইজরাইল, ব্রাজিল, কানাডা প্রভৃতি রাষ্ট্র ইতিমধ্যে ওই অঙ্গীকার থেকে সরে গিয়েছে| ভারত চুক্তিবদ্ধ দেশ| কিন্তু গত চার বছরে এই দেশে এক কোটি এক লক্ষ গাছ কাটার অনুমতি দেওয়া হয়েছে প্রকাশ্যেই| এই তথ্য কেন্দ্রীয় সরকারের| যারা চুক্তি করেছে এই অঙ্গীকার পত্রে, তাদেরই যদি এরকম হয় তাহলে ভবিষ্যতে অবস্থা সংকটজনক হয়ে পড়বে| সমানে জলাভূমি বোজানো হচ্ছে| এ ব্যাপারে সর্তকতা দরকার|

‘অল ইন্ডিয়া সায়েন্স নেটওয়ার্ক’-এর আহ্বায়ক অরুনাভ মিশ্র বলেন, দেশের ৪২ টি  বিজ্ঞান সংগঠন  এই মোর্চার অধীনে থেকে বিজ্ঞান আন্দোলনকে সঞ্চালিত করছে| গত পাঁচ বছর বিশ্বের উষ্ণতম বছর হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে| ‘ইউনাইটেড নেশনস এনভিরণমেন্ট প্রোগ্রাম’ দাবি করেছে, অনেক কথা হয়েছে| এখন আমরা কাজ চাই| পরিবর্তন রোখার ব্যবস্থা করুন| পরিবেশ নয়, বদল করুন পদ্ধতি| আমরা অন্তত দুহাজার স্কুলে পড়ুয়াদের মধ্যে এই বার্তা পৌঁছে দিতে চাই|  

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য সিদ্ধার্থ দত্ত বলেন, মাথাপিছু কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন উন্নত দেশে বেশি| এই দূষণের জন্য দায়ী মানুষ| মানুষকেই তা ঠেকাতে হবে|কার্বন ডাই অক্সাইড, মিথেন এবং ক্লোরোফ্লুরোকার্বন গ্যাস বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য মূলত দায়ী| কয়লার মত জ্বালানিকে প্রতিস্থাপিত করতে হবে সারা বিশ্বে| তাহলে কার্বন ডাই অক্সাইডের নির্গমন কমবে| মিথেন উৎপন্ন হয় জমিতে| ধান কাটার পর ওইসব জায়গায় অর্থাৎ ক্ষেতে এই গ্যাসের জন্ম হয়| তৃতীয় বিশ্বের দশ গুলিকে তাই যথেষ্ট সতর্ক হতে হবে| সেচের জন্য দরকার আধুনিক ব্যবস্থা| ক্লোরোফ্লুরো কার্বন নির্গমনের জন্য তৃতীয় বিশ্বের দেশ গুলিকে বাড়তি সময় বরাদ্দ করতে হয়েছে|

‘পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ’-র সহ সম্পাদক সৌরভ চক্রবর্তী বলেন, পরিবেশ নিয়ে নানা সময় দেশে-বিদেশে অনেক চুক্তি হয়েছে| কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি| বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলস্বরূপ নাসার তথ্য অনুযায়ী গ্রিনল্যান্ডে প্রতিবছর 290 গিগা টন বরফ গলছে| ২০১০  থেকে ২০১৮-র  মধ্যে আন্টার্টিকায় প্রতি বছর ১৪৭ গিগা টন বরফ গলেছে| যে হারে বরফ গলছে, তার মাত্রা বিগত দশকের তিনগুণ| হিমালয়, আন্দিজ, আলাস্কাতে হিমবাহগুলি গলছে| ফলে বিগত ১৪৩ বছরে প্রায় ২৭৪  মিলিমিটার সমুদ্রের জলে ডুবে যাচ্ছে আমাদের সুন্দরবনের দ্বীপ|

২০১৮  সালের অক্টোবর মাসে প্রকাশিত ‘ইন্টার গভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ’-এর বিশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০৩০  থেকে ২০৫২  সালের মধ্যে শক্তিশালী শিল্পায়ন পর্বের তুলনায় তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়বে| ইতিমধ্যে এক ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গিয়েছে| ‘ইন্টার গভর্নমেন্টাল সাইন্স পলিসি বায়ো ডাইভারসিটি এন্ড ইকোসিস্টেম সার্ভিসেস’-এর প্রতিবেদন বলছে, এটি প্রকৃতির নজিরবিহীন অবক্ষয়| প্রজাতি বিলুপতির হার দ্রুত বাড়ছে| ১০ লক্ষ প্রজাতি বিলুপ্তির পথে| বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং বলেছিলেন, এ বিশ্ব বাসযোগ্য থাকবে বড়জোর ১০০ বছর| আমাদের ভবিষ্যৎ ঘিরে অতিকায় এক প্রশ্নচিহ্ন ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে|

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related news