২০১৫ সালের ২৭ নভেম্বর গঠন করা হয়েছিল গঠন করা হয়েছিল ষষ্ঠ বেতন কমিশন
পে কমিশন যা সুপারিশ করেছে, মেনে নেব বলে শুক্রবার ঘোষণা করে দিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । তিনি জানান, ষষ্ঠ বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর করতে বাড়তি ১০ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে । আজ নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে তৃণমূলের কর্মচারী ফেডারেশনের সাংগঠনিক সমাবেশ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘ আজ পে কমিশনের প্রথম পর্যায়ের রিপোর্ট পেয়েছি । পে কমিশন যা যা সুপারিশ করবে আমরা তা মেনে নেব।’কেন্দ্রের পেনশন স্কিম নিয়েও সমালোচনা করেন তিনি ।
ডিএ বৃদ্ধি নিয়ে তিনি বলেন, ‘গত আট বছরে সরকারি কর্মচারীদের ৯৩% ডিএ বৃদ্ধি করেছে রাজ্য সরকার। ‘ওই সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ‘রাজ্যের কর্মীদের ন্যূনতম বেসিক মাইনে বেড়ে করা হল ১৭ হাজার ৯৯০ । ৬ লক্ষ টাকা থেকে বেড়ে গ্র্যাচুইটি হল ১০ লক্ষ টাকা । আমি জানি আপনাদের সবার মধ্যে আশা কাজ করে । কেউ কেউ তো লিখেও দেয় । আমি আগে লিখে দিলাম । একটা রিপোর্ট জমা পড়ে, তার পর সেটা স্টাডি করতে হয়, তার পর ক্যাবিনেটে পাশ করাতে হয়, তার প্রসেস করতে হয় । আমি দ্বায়িত্বজ্ঞানহীন নই । আমি আজকেই বলে দিতে পারতাম । আমি আজকেই যেটা করতে পারতাম । তা আরও কয়েকদিনের জন্য অপেক্ষা করছি। ’
এদিন মমতা বলেন, ‘ষষ্ঠ বেতন কমিশনের রিপোর্টের প্রথম অংশের রিপোর্ট পেয়েছি আজ । আমি নীতিগতভাবে বলছি, ওনারা যে সুপারিশ করেছেন, আমরা মেনে নেব । যা যা সুপারিশ করেছে, নিউ পে ম্যাট্রিক্স সুপারিশ করা হয়েছে । ব্যান্ড পে এবং গ্রেড তুলে দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে ।
আমি অর্থনীতিটা কম বুঝি । ডিএ প্লাস বেতন কমিশন, আগে ১০০ টাকা বেসিক পে ছিল, ডিএ যুক্ত হলে আপনি পেলেন ১২৫ । এরপর ডিএ ও পে কমিশন মার্জার হলে তখন এটা হবে ২৫৭ । অর্থাৎ ১২৫ থেকে ২৫৭-য় দাঁড়াবে । ওনারা যেটা করেছেন, নূন্যতম বেসিক পে ৭০০০টাকা ছিল, সেটা বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৭,৯৯০ । এছাড়াও এইচআরও, হাউস রেন্ট এসব আমার উপরে ছেড়ে দিন । পে কমিশন চলবে । আমি কমাবো না । সুপারিশ মানতে গেলে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ হবে।’ তিনি জানান, ‘গ্র্যাচুইটি ৬ লাখ থেকে বাড়িয়ে মিনিমাম আট লাখ টাকা করা হয়েছে।’
সরকারি কর্মচারীদের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আশ্বস্ত করেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর করব । পয়লা জানুয়ারি থেকে নতুন বেতন কাঠামো চালু করার চেষ্টা করব । মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণাকে হাততালি দিয়ে স্বাগত জানান সরকারি কর্মচারীরা । মুখ্যমন্ত্রী জানতে চান, কী খুশি তো ? জবাব আসে, হ্যাঁ । বলেন, ২৩ তারিখ ক্যাবিনেট মিটিং আছে । তারপর প্রসিডিওর আছে । এরমধ্যে কোর্টের কেসটাও দেখে নেব । যখন বলেছি করব এবং সুপারিশ মানব, আপনারা ভরসা রাখুন । আমি চেষ্টা করব ১ জানুয়ারি থেকে এটা বাস্তবায়নের জন্য । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করিয়ে দেন, প্রতিবছর কিন্তু আপনাদের মাইনে বাড়ে । সরকারকে যত দেবেন, এই সরকার আপনাদের ঢেলে দেবে । আপনারা সরকারের বড় স্তম্ভ । ভরসা রাখুন ।
২০১৫ সালের ২৭ নভেম্বর গঠন করা হয়েছিল গঠন করা হয়েছিল ষষ্ঠ বেতন কমিশন । কিন্তু সুপারিশ পেশের মেয়াদ কয়েকবার বাড়ায় রাজ্য সরকার । পাঁচ দফায় বাড়ানো হয়েছে মেয়াদ । দীর্ঘদিন ধরে বেতনবৃদ্ধি ঝুলে থাকায় ক্ষোভ বাড়ছিল সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে । লোকসভা ভোটেও সেই ক্ষোভের প্রতিফলন দেখা গিয়েছে । পোস্টাল ব্যালটে সব জায়গাতেই শাসক দলের চেয়ে এগিয়ে ছিল বিজেপি । সরকারি কর্মীরা অভিযোগ করেছিলেন, ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার সময় দ্বিগুণ বেতন বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস । বেতন কমিশনের সুপারিশ তো বটেই, বকেয়া রয়েছে মহার্ঘ ভাতাও । কর্মীদের ক্ষোভের কথা বুঝেই এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করিয়ে দেন, বাম জমানায় মহার্ঘ ভাতা বেড়েছিল ৩৫ শতাংশ । তাঁর ৮ বছরে বেড়েছে ৯২ শতাংশ । একইসঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের পেনশন প্রকল্প নিয়েও তোপ দেগেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । দাবি করেছেন, কর্মীদের টাকা কেটেই ডিএ পুষিয়ে দিচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার ।
বেতন কাঠামো নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সরব সিপিএমের ছাতার তলায় থাকা কর্মচারী সংগঠন কোঅর্ডিনেশন কমিটি, কংগ্রেসের কনফেডারেশন অব স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ বা বিজেপির সরকারি কর্মচারী পরিষদ । গত ২০১৫ সালের নভেম্বরে এই বেতন কমিশন গঠিত হয়েছিল । তার মেয়াদ বাড়াতে বাড়াতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ২০১৯-এর শেষ পর্যন্ত । দেশের ইতিহাসে কোনও বেতন কমিশনের কার্যকাল এত দীর্ঘায়িত হয়নি ।