প্লাস্টিক বন্ধে চাই সচেতনতা

2 - মিনিট |

রণে বনে জলে জঙ্গলে সর্বত্র বিরাজ করছে একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক। সস্তা নির্ভরযোগ্য এবং পরিবেশবান্ধব বিকল্প প্যাকেজিং ছাড়া এর থেকে মুক্তির কোনও পথ নেই। এগুলির বিপদ সম্পর্কে সাধারণ মানুষ মোটেই সচেতন নন।আইন করে এর ব্যবহার বন্ধ করা ছাড়া বিকল্প পথ কোথায়? তাছাড়া উপায়ই বা কী?

শ্রীজীব

প্লাস্টিক যেখানে পরিবেশ দূষণের মূল কারণ সেখানে এই প্লাস্টিককে কোনোমতেই বাগে আনা যাচ্ছে না। নানা সতর্কতা ও নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও। অবশেষে কিনা ‘একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক’নিয়ে খোদ প্রধানমন্ত্রীকে লালকেল্লা থেকে লড়াইয়ের ডাক দিতে হল।

শুধু ক্যারিব্যাগই নয়, বোতল, জলের গেলাস, খাওয়ার প্লেট ইত্যাদি নানা রূপে একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক আমাদের সামনে এসে হাজির হয়। প্রয়োজন মিটলেই যত্রতত্র ফেলে দিই। আর তা পরবর্তীতে হয়ে ওঠে ভয়ংকর।তুচ্ছ এই প্লাস্টিক সামগ্রীটিকে বাগে আনতে বাদ সাধছে আমাদের বদভ্যাস, আমাদের সচেতনতার অভাব। শহর-গ্রাম-মফস্বলের বর্জ্যের সিংহভাগই এখন এই একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিকের দখলে।পরিমাণে এতটাই বেশি যে সেটা বর্জ্যের সামগ্রিক চরিত্রটাই বদলে দিচ্ছে।আমাদের চলতি সাফাই ব্যবস্থা ও নিকাশি পদ্ধতি কোনোকিছুর সঙ্গেই না-মিশতে-চাওয়া ও দ্রুত ছড়িয়ে যাওয়া এই ধরনের বর্জ্যগুলির সমস্যার মোকাবিলা করতে পারছে না।কারণ, আমাদের প্লাস্টিক বর্জ্যের বেশিরভাগই হল পলিব্যাগ ওপান-গুটখা, বিড়ি, পানমশলা এবং খাবারদাবারের মাল্টি লেয়ারড পাউচ। এই সামগ্রীগুলির বেশিরভাগই লো ডেনসিটি পলি এথিলিন। আর এগুলি মূলত ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকেই আসে। আমাদের দেশের প্লাস্টিক বর্জ্যের ৬৬ শতাংশই এসব জিনিস। অনেক রাজ্যে প্লাস্টিক নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও বহাল তবিয়তে রয়েছে ক্যারিব্যাগ। তাই সমস্যাও রয়েছে। 
এমনিতেই আমাদের দেশের বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থা জড় হওয়া জঞ্জালের পরিমাণের তুলনায় দুর্বল। নাগরিক বদভ্যাস তা আরও ব্যাপকতর করে তুলেছে।নিজেদের অসচেতনতার বলি হচ্ছি আমরা নিজেরাই। 
কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ এই অবস্থার মোকাবিলার ব্যাপারে একটা রোড ম্যাপ তৈরিও করেছে।কীভাবে কার্যকর করা যায় ইতিমধ্যে তা নিয়ে বেশ কয়েকটা বৈঠকও হয়ে গেছে।কিন্তু কোনও সমাধান সূত্র কই! গ্রাম-শহরে ছড়িয়ে থাকা অসংগঠিত ক্ষেত্রের মানুষ ও শিল্প এই গোত্রের প্লাস্টিকের একটা বড় অংশ। লক্ষ করলেই দেখা যাবে, ট্রেনে রাস্তায় পাড়ার বাজারে নানা সাইজের পাতলা প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগে বিক্রি হচ্ছে সবজি ফল ফুল মাছ পুরি তেলেভাজা।পাড়ার মুদির দোকান থেকে জিনিস আনতে সেই ক্যারিব্যাগই ভরসা। মদের ঠেক থেকে ফুটপাথের হোটেল সর্বত্র প্লাস্টিকের বোতল গেলাস প্লেটের রমরমা। কাজেই সমাজের সবস্তরের মানুষের এধরনের প্লাস্টিক সামগ্রী ব্যবহার বন্ধের কর্মসূচির আওতায় না আনলে এই সমস্যা কোনোমতেই মিটবে না। সমস্যা মেটাতে ইন্ডাস্ট্রি ও সরকারকে বিকল্প প্যাকেজিংয়ের ব্যবস্থার কথা ভাবতেই হবে। 
এই সমস্যা শুধু আমাদের দেশের নয়, গোটা বিশ্বের।সারা বিশ্বের ৪৭ শতাংশ প্লাস্টিক বর্জ্যই মূলত মাল্টিলেয়ারড পাউচ।একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিকের সমস্যা সবচেয়ে বেশি আমাদের এই এশিয়াতে।এমনিতেই সব প্লাস্টিক বর্জ্যগুলির মাত্র ৯ শতাংশ পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তোলা যায়।১২ শতাংশ প্লাস্টিক জ্বালিয়ে দেওয়া হয় এবং ৭৯ শতাংশ মাটিতে মেশে। সেগুলি পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তোলা, সংশোধন করা কোনোটাই এখানে তেমনভাবে হয় না। আমেরিকা-সহ বহু উন্নত দেশের তুলনায় তা অনেক কম।কিন্তু বাদ সেধেছে জনসংখ্যা।১৩৫ কোটি জনসংখ্যার দেশে বর্জ্যের পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে প্রতিদিন ২৫ হাজার ৯৪০ টন।

বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থার দুর্বলতা, প্রয়োজনীয় পরিকাঠামোর অভাব এবং মানুষের সচেতনতার অভাব সমস্যা ক্রমশ বাড়াচ্ছে।দেশের শহরতলিতে প্রতিদিন তৈরি হচ্ছে ১৫ হাজার মেট্রিক টন প্লাস্টিক বর্জ্য।
দেশের প্রায় ৪০ শতাংশ প্লাস্টিক বর্জ্য তো সংগ্রহই করা যায় না।সেগুলি পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তোলার সমস্যাও রয়েছে দেশে সবথেকে বেশি প্লাস্টিক জমে দিল্লি এবং কলকাতায়।দুই শহরেই একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিকের ব্যবহার রোখার সত্যিই একটা বড় সমস্যা। এগুলোকে চালু রাখার জন্য একশ্রেণির ব্যবসায়ীমহলও সমান সক্রিয়।কারণ, প্যাকেজিংয়ের খরচ কম, মুনাফাও বেশি। 

কাজেই রণে বনে জলে জঙ্গলে সর্বত্র বিরাজ করছে একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক। সস্তা নির্ভরযোগ্য এবং পরিবেশবান্ধব বিকল্প প্যাকেজিং ছাড়া এর থেকে মুক্তির কোনও পথ নেই। এগুলির বিপদ সম্পর্কে সাধারণ মানুষ মোটেই সচেতন নন।আইন করে এর ব্যবহার বন্ধ করা ছাড়া বিকল্প পথ কোথায়? তাছাড়া উপায়ই বা কী?

শুধু ক্যারিব্যাগ বন্ধ করার কথা বললে কোনও কাজ হবে না।বলতে হবে পরিবেশ বান্ধবনির্ভরযোগ্য বিকল্পের কথা, দেখতে হবে তার দাম যেন মানুষের নাগালের মধ্যে থাকে। না-হলে তা ব্যবহারে কেউ উৎসাহী হবেন না। পাট, মাটির পাত্র ও ভাঁড়, শালপাতা, কলাপাতা, কচুরিপানার মতো প্রাকৃতিক সম্পদনির্ভর পরিবেশবান্ধব বিকল্প প্যাকেজিংয়ের কথা না-ভাবলে একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে লড়াই নেহাত কথার কথাই থেকে যাবে।  শুধু সিদ্ধান্ত নয়, চাই আইনি ব্যবস্থা, গণসচেতনতা।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related news