অব্যাহত ভূস্বর্গ সন্ত্রাস!

2 - মিনিট |

অবরুদ্ধ কাশ্মীরে যখন দেশের নেতানেত্রীরা ব্রাত্য ঠিক তখন বাংলার পাঁচ শ্রমিককে নৃশংসভাবে খুন করার দিনেই নরেন্দ্র মোদি সরকারের বদান্যতায় কাশ্মীর সফর করলেন একঝাঁক বিদেশি প্রতিনিধি!

শ্রীজীব


কাকতালীয় হলেও সত্যি! অবরুদ্ধ কাশ্মীরে যখন দেশের নেতানেত্রীরা ব্রাত্য ঠিক তখন বাংলার পাঁচ শ্রমিককে নৃশংসভাবে খুন করার দিনেই নরেন্দ্র মোদি সরকারের বদান্যতায় কাশ্মীর সফর করলেন একঝাঁক বিদেশি প্রতিনিধি।আর এই ঘটনাটি ঘটল আর্ন্তজাতিক ‘বিজনেস ব্রোকার’ রহস্যময়ী ম্যাডি শর্মার ব্যবস্থাপনায়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের আটাশজন প্রতিনিধি ছিলেন তিনদিনের এই ভারত সফরে। কিন্তু কাশ্মীরে গিয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে তেইশজন। বাকি পাঁচজন কেন দিল্লি এসেও কাশ্মীরে সরকারি কন্ডাকটেড ট্যুরে গেলেন না! প্রশ্ন উঠছে, কাশ্মীরে যখন দেশের তাবড় নেতানেত্রী এমনকী সাধারণ মানুষই যাওয়ার ছাড়পত্র পাচ্ছেন না, তখন সেখানে কেন্দ্রের সমর্থনে বিদেশি ট্যুর করিয়ে ‘সব ঠিক হ্যায়’ গোছের একটা পরিবেশ তৈরি করাই কি সরকারের উদ্দেশ্য? কাশ্মীর ভারতের একান্ত সার্বভৌম অংশ। যেখানে কোনও বিদেশি শক্তির হস্তক্ষেপ আমরা মানব না বলে বারংবার বিশ্বমঞ্চে জানান দেওয়া হয়েছে।তাহলে হঠা্ৎই কেন বিশেষ উদ্দেশ্যপূরণে তা লঙ্ঘন করা হল?


ভিনরাজ্য থেকে কাজের টানে যেসব শ্রমিক কর্মচারী কাশ্মীরে আছেন তাঁদের উপর আক্রোশের মূল কারণ নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। তবে কি ৩৭০ ধারার অবলুপ্তি? বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের পর একটা ধারণার সৃষ্টি হয় যে ভিনরাজ্যের লোকজন এবার কাশ্মীরের স্থাবর সম্পত্তি কিনে তার মালিক হতে পারবেন। এতদিন তা হত না। কিন্তু নতুন ব্যবস্থা কার্যকর হওয়ার পর উপত্যকার জমি কেনায় আর কোনও বাধা রইল না। এতে সাধারণ কাশ্মীরিরা গোটা উপত্যকার জনসংখ্যা ও জনভিত্তির পরিবর্তনের আশঙ্কায় ভীত হয়ে উঠছে। তারই জেরে একের পর এক কাশ্মীরের বুকে ভিনরাজ্যের শ্রমিকদের উপর বর্বরোচিত জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটছে। শেষটায় ঘটল বাঙালিদের উপর।
এর থেকেই স্পষ্ট, ৩৭০ ধারার অবলুপ্তির পর কাশ্মীরে জঙ্গিরা নতুন পথ বেছে নিয়েছে। জন্ম নিয়েছে নতুন ধরনের ঘৃণা ও আক্রোশের। যার সবচেয়ে খারাপ দৃষ্টান্ত অপহরণ করে নৃশংসভাবে পশ্চিমবঙ্গের পাঁচ অসহায় শ্রমিকের নির্মম হত্যা। সংবিধানই দেশের প্রত্যেক নাগরিককে স্বাধীকার দিয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীরের এই নয়া সাংবিধানিক পরিবর্তন সেখানকার অসহায় শ্রমিকদের সেই অধিকারই কি কেড়ে নিতে চলেছে?
এক পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ভিনরাজ্যের প্রায় দশ লক্ষেরও বেশি শ্রমিক কাশ্মীরে এই মুহূর্তে কর্মরত। মূলত পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাব ও রাজস্থানের শ্রমিকরা কাশ্মীরে কর্মরত। অথচ পরিবারগুলো ভয়ঙ্কর এক বিপন্নতা ও আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছে। অথচ বর্তমান সরকারের লক্ষ্য, ৩৭০ ধারার অবলুপ্তির পর কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করা। এবং উন্নয়ন। সেমতো সরকারিভাবে পূর্ণরাজ্য জম্মু ও কাশ্মীর ভেঙে দুটি পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের জন্মও হয়ে গিয়েছে। দুজন লেফটেন্যান্ট গভর্নর শপথ নিয়ে কাজও শুরু করে দিয়েছেন। কিন্তু কাশ্মীর কি স্বাভাবিক! সেখানকার সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ কি ভালো আছেন? অজানা আশঙ্কা ও আতঙ্ক আর নিরাপত্তাহীন বিপন্ন জীবন কাশ্মীরে নব অধ্যায় সূচনা করবে নাতো?
এদিকে বহু ছোট ব্যবসায়ী অসহায় দিনযাপন করছেন। পর্যটন শিল্প মুখ থুবড়ে পড়েছে। মুখ থুবড়ে পড়েছে কৃষি ও হস্তশিল্পও।বাড়ছে কাশ্মীরি-অকাশ্মীরি বিভেদ।তবে আগামী দিনে ভূস্বর্গে সন্ত্রাস নতুন চেহারায় সামনে আসবে না তো!এমন আশঙ্কাই অমূলক নয় কি?

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related news