কার্বন মৌলটি দিনে দিনে হয়ে উঠছে আক্ষরিক অর্থেই বহুরূপী!
আবার ভানুমতীর খেল দেখাল কার্বন মৌল! তাকে দেখা গেল অবিকল আংটির মতো। এমনভাবে আগে কখনও তাকে দেখা যায়নি। স্বপ্নেও ভাবা যায়নি তাকে এমনভাবে। উসকে দিল বহু প্রশ্ন, এমনকী কৌতূহল। তবে কি বহুরূপী কার্বন ক্রমশ ‘ঈশ্বর’ হয়ে উঠছে? যত দিন যাচ্ছে,ততই অচেনা-অজানা রূপে দেখা দিচ্ছে প্রাণসৃষ্টির প্রথম ও প্রধান মৌলটি।
এমনটা দেখা দিল সুইজারল্যান্ডের জুরিখে আইবিএমের গবেষণাগারে। যেখানে আংটির মতো সেই অদ্ভুত রূপে ধরা দিল কার্বনের অণু। যা তৈরি হয়েছে উনিশটি কার্বন পরমাণু দিয়ে। দেখা গেল, কার্বনের সেই অণুর মধ্যে দিয়ে কোনও বাধা ছাড়াই বিদ্যুৎশক্তির পরিবহণে আর অপচয়ের আশঙ্কা থাকবে না। কিন্তু প্রশ্ন থেকে গেল, যদি সেই ধরনের কার্বন অণু দিয়ে কোনও পরিবাহী তার আগামী দিনে বানানো সম্ভব হয়। এমনটি সম্ভব হলে কোনও দিন হয়তো মরুভূমির সৌরবিদ্যুৎকেও পৌঁছে দিতে পারে বহু বহু দূরে। কোনও অপচয় ছাড়াই, অনেকটাই সুলভে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালেয়র অধ্যাপক লরেল স্ক্রিভেনের কথায়, ‘খুব বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি গবেষণাগারে আমাদের বানানো কার্বন অণুর সেই অদ্ভুত রূপ।কিন্তু সেই অল্প সময়ের মধ্যেই কার্বনের সেই নতুন রূপ দেখিয়ে দিয়েছে তার অতিপরিবাহিতা ধর্ম। যা আগামী দিনে অপচয় ছাড়া বিদ্যু্ৎশক্তি পরিবহণে বড় ভূমিকা নিতে পারে। সহায়ক হয়ে উঠতে পারে একটু অণুর আকারের ট্রানজিস্ট তৈরির ক্ষেত্রেও।‘ কার্বনের এই ধর্মকে বলা হয় ‘ক্যাটিনেশান প্রপার্টি‘। যার জন্য একটি কার্বন পরমাণু অন্য একটি কার্বন পরমাণুর সঙ্গে হাত মেলায় দ্রুত। আর সেই বন্ধনকে চট করে ভাঙাও সম্ভব হয় না। অক্সিজেন, সালফার, ফসফরাস, সিলিকনের মতো আরও কয়েকটি মৌলের এই ধর্ম রয়েছে। তবে কার্বন তাদের সকলকেই ছাপিয়ে গিয়েছে।
কার্বন পরমাণুর থাকে চারটি হাত। সেই হাতগুলি দিয়ে তারা দু-পাশের অন্য কার্বন পরমাণুর হাত ধরে লম্বা শৃঙ্খল তৈরি করতে পারে। আর সেটা পারে বলেই বড় বড় অণুর জন্ম দিতে পারে কার্বন পরমাণু। প্রাণসৃষ্টিও সম্ভব হত না কার্বন পরমাণুরা সেই লম্বা লম্বা শৃঙ্খল তৈরি করতে না পারলে।
কার্বন মৌলটি দিনে দিনে হয়ে উঠছে আক্ষরিক অর্থেই বহুরূপী!যা বিদঘুটে কালো হলে, কখনও তা জ্বলে ওঠে হিরের দ্যুতিতে। যেমন তাকে ছাড়া কাটা যায় না কাচ, তেমনই কখনও তা পেনসিলের সিসের মতো হয়ে ওঠে ঝুরঝুরে এবং নরম। কখনও যদি তার চেহারাটা হয় ফুটবলের মতো, তাহলে কখনও তা দেখতে হয় চোঙের মতো! এভাবেই উত্তরোত্তর ভাইয়ের সংখ্যা বাড়ছে কার্বনের।
যাইহোক, আগের কোনও রূপের সঙ্গেই কার্বনের এই রূপের কোনও মিল নেই। কারণ, এখানে একটি কার্বন পরমাণু তার একপাশের অন্য একটি কার্বন পরমাণুকে ধরে রয়েছে আর একটি কার্বন পরমাণুকে। যা এর আগে দেখা যায়নি। সবিশেষ এটি এক যুগান্তকারী আবিষ্কার। কার্বন কা খেল।