‘টনিক’ হল এমন এক চলচ্চিত্র যা প্রবীণ নাগরিকদের স্বপ্ন দেখতে সাহায্য করে : পরিচালক অভিজিৎ সেন এবং অভিনেতা দেব
এক অধিকারসর্বস্ব ও কর্তৃত্বমূলক সন্তান তাঁর প্রবীণ নাগরিক পিতাকে বিভিন্ন নিয়মের বেড়াজালে বেঁধে রেখে মনে করে যে সে যা করছে সেটাই তার পিতার পক্ষে সবথেকে ভাল। একজন পিতা যাঁর অপূর্ণ স্বপ্ন পূরণের চাহিদা রয়েছে তিনি একটি টনিক চান যা সুখী জীবনযাপনের ওষুধ। “যদি তোমার কাছে সেই টনিক থাকে তাহলে তুমি পৃথিবী জয় করতে পার” – যা একজন প্রবীণ নাগরিক পিতা বলে থাকেন।
বাংলা চলচ্চিত্র ‘টনিক’ ৫৩তম ভারত আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব (আইএফএফআই)-এর প্যানোরামা বিভাগে প্রদর্শিত হয়। চলচ্চিত্রের প্রধান চরিত্র, যাকে প্রতীকী অর্থে ‘টনিক’ বলা হচ্ছে যেহেতু একজন প্রবীণ নাগরিককে আনন্দময় জীবন উপভোগ করতে সে আস্থা এবং সহায়তা যোগাচ্ছে।
আজ গোয়ায় আইএফএফআই-এর ‘টক টেবিল’ সেশনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রাক্তন এফটিআইআই অ্যাকাডেমিক ইনচার্জ এবং সত্যজিৎ রায় ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট (এসআরএফটিআই)-এর স্নাতক পরিচালক অভিজিৎ সেন বলেন, এই ছবির মূল বিষয় হল, সুখী জীবনযাপনের স্বার্থে প্রত্যেক ব্যক্তির অবলম্বন প্রয়োজন। ছবিটির একটি আকর্ষণীয় নামকরণ করেছেন তিনি যাতে করে দ্ব্যর্থহীনভাবেই মূল বিষয়টি তুলে ধরা যায়। এজন্যই তিনি ছবির নামকরণ করেছেন ‘টনিক’।
এই ছবির নায়ক টনিক, যার চরিত্রায়ন করেছেন অভিনেতা দেব, এই ‘টক টেবিল’ সেশনে উপস্থিত ছিলেন। দেব মনে করেন, এই ছবিটি মানব সম্পর্কের ওপর নির্মিত। “আজকের আত্মসচেতন এবং আত্মমুখী প্রজন্ম যাঁরা তাঁদের পিতা-মাতার চাহিদা, স্বপ্ন ও আশা-আকাঙ্ক্ষাকে উপেক্ষা করেন এই ছবিতে তা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে” – বলে তিনি মন্তব্য করেন।
অভিনেতা দেব জানান যে এই ছবিটি গত বছর কোভিড পরবর্তী সময়ে টানা ১১১ দিন বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে দেখানো হয়েছে। কোভিড পরবর্তী সময়ে খুব কম ছবিই এই সাফল্য পেয়েছে।
আইএফএফআই-এর মতো এক বিরাট মঞ্চ, যেখানে অনেক নামকরা ছবি দেখানো হয় এবং প্রবাদপ্রতীম ব্যক্তিত্বদের দেখা মেলে, সেখানে এই ছবির প্রদর্শনকে ‘টনিক’ ছবিটির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা সৌভাগ্য বলে মনে করে।
ফিল্ম মিডিয়া সম্পর্কে বলতে গিয়ে দেবের মত হল ওটিটি-র মাধ্যমে ভারতীয় আঞ্চলিক ছবিগুলি আন্তর্জাতিক দর্শক পেয়েছে। মনে মনে প্রত্যেক চলচ্চিত্রকারই চান, একদিনের জন্য হলেও তাঁর ছবি বড় পর্দায় প্রদর্শিত হোক! “সিনেমা ৭২ মিলিমিটারের জন্য। সিনেমা বড় পর্দার জন্য তৈরি হয়।”
‘টনিক’ ছবিটি সম্পর্কে
বছর ৭০-এর অবসরপ্রাপ্ত জলধর সেন তাঁর স্ত্রী, পুত্র, পুত্রবধূ এবং নাতনিকে নিয়ে বসবাস করেন। তাঁর সন্তানের অতিরিক্ত অধিকার সচেতনতা ও কর্তৃত্বমূলক স্বভাবের জন্য সংসারে ঝঞ্ঝাট সৃষ্টি হয়। জলধরবাবু বিদেশ সফরের পরিকল্পনা করেন এবং টনিক নামে এক ট্র্যাভেল এজেন্টের সঙ্গে তাঁর পরিচয় ঘটে। তাঁর জীবনে এই ব্যক্তি এক অলৌকিক পরিবর্তন নিয়ে আসে। বিদেশ সফর যখন বাতিল করতে হয়, এই বৃদ্ধ দম্পতি দার্জিলিং যাওয়ার এক পরিকল্পনা করেন পুত্রকে না জানিয়েই। কিন্তু জলধরবাবু সেখানে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন।