বিশ্বকাপে সোনাজয়ী অয়ন কুণ্ডু ও রিক্সা পরিব্রাজক সত্যেন দাসের উপস্থিতি ছিল বাড়তি পাওনা
দেরাদুন চালের ভাত, গন্ধরাজ লেবু, সোনা মুগ ডাল, বেগুনি, ইলিশ মাছ ভাজা, ইলিশ মাছের মাথা দিয়ে কচু শাক, ইলিশের পাতুরি, সর্ষে ইলিশ, ইলিশের টক, রাজভোগ- ইলশেগুড়ি বৃষ্টির মধ্যে গঙ্গার ছোটছোট ঢেউ লঞ্চে এসে ভাঙছে, দোল দোল দুলুনি, খাওয়ার টেবিলে আমার পার্শ্বস্থ সহচর ক্যারাটে বিশ্বকাপে সোনাজয়ী অয়ন কুণ্ডু, সামনে রিক্সা পরিব্রাজক সত্যেন দাস, যিনি রিক্সা চালিযে গোটা দেশ তো ভ্রমণ করেছেনই, সেই সঙ্গে দু’বার ঘুড়ে এসেছেন লাদাখ। বরফাবৃত রাস্তায় রিক্সা চালানোর অভিজ্ঞতার গল্প শোনার সঙ্গে সঙ্গে ইলিশে রসনাতৃপ্তি- ক’জন বাঙালির ভাগ্যে এরকম অভিজ্ঞতা হয়!
এমনিতেই এবার বর্ষা আর ইলিশ মুখ ঘুরিয়েছে বাংলা থেকে। বাজারে যেটুকুও বা ইলিশ আসছে, তার দাম মধ্যবিত্ত বাঙালির ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাই মনটা ইলিশ ইলিশ করলেও রসনা তৃপ্তির উপায় নেই। এর মধ্যেই এল গোয়িং অন হলিডেস-এর কর্ণধার মিত্রদার ডাক। গঙ্গা বক্ষে ইলিশের আয়োজন করছেন তিনি। এর আগে তাঁর সংস্থার পরিচলানায় বেশ কিছু জায়গায় ঘোরার অভিজ্ঞতা থাকায়, ভালোমতোই জানাতাম তাঁর আতিথেয়তা-আন্তরিকতার কথা। সিদ্ধান্ত নিতে বিন্দুমাত্র দেরি করিনি। রবিবাসরীয় (৪ আগস্ট) সকাল ন’টাতেই হাজির মিলেনিয়াম পার্কের মেন গেটের সামনে। মিত্রদা হাসি মুখে সেখানে তখন অতিথি আপ্যায়নে ব্যস্ত। মোটামুটি সবাই হাজির হতেই সটান গঙ্গায় অপেক্ষারত লঞ্চের দোতলায়। হাতে তুলে দেওয়া হল গরম গরম চা, লঞ্চের দুলুনিতে চায়ের কাপ টলায়মান। এরমধ্যেই হাজির গরম লুচি আলুর দম মিষ্টি সহযোগে। গঙ্গার হাওয়ায় তখন ইলিশ মাছ ভাজার গন্ধ। জিভে জল আটকানো অসম্ভব।
লঞ্চের দোতলার একদিকে সাজানো হয়েছে মঞ্চ। ইতিমধ্যেই লঞ্চ যাত্রা শুরু করেছে ব্যারাকপুরের পথে। হাওড়া ব্রিজ, দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়ি, বেলুর মঠ ছুঁয়ে লঞ্চ চলছে ধীরগতিতে। মঞ্চে চলছে নাচ-গান, হাস্যকোতুক, কুইজ, মহিলাদের মিউজিক্যাল চেয়ার। দিনটিকে অন্য মাত্রা দিল অয়ন কুণ্ডু ও সত্যেন দাসের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ার অয়ন জানালেন চাকরি ছেড়ে ক্যারাটেকে বেছে নেওয়ার জন্য একদিন বাড়ি থেকেও তীব্র বাধা এসেছিল। কিন্তু দৃঢ়চেতা অয়ন সব বাধা টপকে আজ বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। আর সত্যেন দাস শোনালেন, সামান্য এক রিক্সাচালক কী ভাবে সমাজের বুকে অনন্য হয়ে উঠতে পারেলন ইচ্ছাশক্তি আর সদিচ্ছা নিয়ে। ছোটখাটো সত্যেনবাবু পুরীতে হানিমুন করতে গিয়েছিলেন রিক্সা চালিয়েই। লাদাখে গিয়ে তিনি ‘থ্রি ইডিয়েটস’ খ্যাত সোনাম ওয়াংচুকের স্কুলে গিয়ে দেখেছিলেন, সেখানে শুধুমাত্র ভর্তি নেওয়া হয় ফেল করা ছাত্রদের।
এই ভাবেই কখন যে বিকেল পাঁচটা বেজে গিয়েছে বুঝতেই পারিনি। লঞ্চ এসে ভিড়েছে মিলেনিয়াম পার্ক সংলগ্ন ঘাটে। গোয়িং অন হলিডেস-এর দুই প্রাণপুরুষ মিত্রদা ও অভীক মণ্ডল যে ঐকান্তিকতা আর ভালোবাসা দিয়ে সম্গ্র অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করলেন তা এক কথায় ‘লা জবাব’।