নবরূপে নবদুর্গা

5 - মিনিট |

শৈলপুত্রী, ব্রহ্মচারিণী, চন্দ্রঘণ্টা, কুষ্মাণ্ডা, স্কন্দমাতা, কাত্যায়নী, কালরাত্রী, মহাগৌরী, সিদ্ধিদাত্রী

শ্রীজীব

দেবী দুর্গা মানে দশভুজা, দেবী দুর্গা মানে মহাশক্তি, মহামায়া, দেবী দুর্গা মানে মাতৃরূপী, শক্তিরূপী, বিপদতারিণী স্নেহময়ী জননী। দেবী দুর্গা শরৎকালে পূজিত হলেও ভক্তের ডাকে দেবী দুর্গা বিভিন্ন রূপে মর্তলোকে আবির্ভূতা হন। সব রূপেই দেবী মহাশক্তির আধার। প্রতি রূপেই দেবী মাতৃরূপা, কল্যাণময়ী, অশুভ শক্তি বিনাশিনী। দেবীর অনেক রূপের মাঝে নটি রূপ বিশেষভাবে, বিশেষ লগ্নে পূজিত হয়ে থাকেন। দেবী দুর্গা আর নবদুর্গা আদ্যাশক্তিরই অন্যরূপ। মাতা পার্বতীও আদ্যাশক্তি পরমা প্রকৃতি দেবী দুর্গা, তাঁর অসংখ্য সহস্রকোটি রূপ, সেই রূপের মধ্যে কিছু রূপ প্রকট ও কিছু প্রচ্ছন্ন।

নবদুর্গা হল দুর্গার নটি রূপ। প্রতিটি রূপের এক-একটি মাহাত্ম্য আছে। মা দুর্গা এই নবদুর্গা রূপ সৃষ্টি করেছিলেন সৃষ্টির রক্ষা তথা পালনের ও মঙ্গলের জন্য। শাস্ত্রে আছে, মা দুর্গার এই নয় রূপের পূজা যাঁরা নদিন ধরে পালন করেন তাঁরা সর্বদিক দিয়ে জয়ী হন, সর্ব রোগ-শোক-বাধা অপসারিত হয়, এমনকী নবগ্রহের কু-প্রভাব পীড়নের হাত থেকেও রক্ষা পাওয়া যায়। নবগ্রহকে এই দেবীরাই নিয়ন্ত্রণ করেন। শরৎকালে যেমন দুর্গাপুজোর সঙ্গে সঙ্গে নবদুর্গার পূর্জাচনা করা হয়, তেমন বসন্তকালেও বাসন্তী পুজোর সঙ্গে নদিন ধরে চলে নবদুর্গার পূজা। শুক্লপক্ষের প্রতিপদ থেকে নবমী পর্যন্ত এই পুজোর নিয়ম। প্রতিদিন এক এক দুর্গার পূজা হয়।

প্রথমং শৈলপুত্রীতি, দ্বিতীয়ং ব্রহ্মচারিণী।/তৃতীয়ং চন্দ্রঘণ্টেতি, কুষ্মাণ্ডেতি চতুর্থকম॥/ পঞ্চমং স্কন্দমাতেতি, ষষ্ঠং কাত্যায়নী তথা।/সপ্তমং কালরাত্রীতি,মহাগৌরীতি অষ্টামম॥/নবমং সিদ্ধিদাত্রীতি, নবদুর্গাং প্রকীর্তিতার।/উক্তান্যেতানি নামানি ব্রহ্মনৈব মহাত্মন॥

অর্থাৎ শৈলপুত্রী, ব্রহ্মচারিণী, চন্দ্রঘণ্টা, কুষ্মাণ্ডা, স্কন্দমাতা, কাত্যায়নী, কালরাত্রী, মহাগৌরী, সিদ্ধিদাত্রী—নবদুর্গার নটি রূপ, মার্কণ্ডেয় পুরাণের দেবীকবচে ব্রহ্মা দেবী দুর্গার এই নটি রূপের বর্ণনা করেছেন।

শৈলপুত্রী কুর্মপুরাণে শৈলপুত্রীর কাহিনি রয়েছে। দক্ষালয়ে সতী শিবের নিন্দা শুনে দেহত্যাগ করলে মহাদেব দেবীকে নিয়ে তাণ্ডব করতে লাগলেন। সেই তাণ্ডব নিবারণের জন্য নারায়ণ সুদর্শন চক্র দিয়ে দেবীর দেহ খণ্ডিত করলেন ও মহাদেব শান্ত হয়ে গিরিশিখরে গিয়ে মহাসমাধিতে মগ্ন হলেন। এদিকে দৈত্যরাজ তারকাসুরের অত্যাচারে দেবগণ অসহায় হয়ে পড়লেন ও সবাই একত্রিত হয়ে ভাগবতীর শরণাপন্ন হলেন।অন্যদিকে পর্বতরাজ হিমালয়ও দেবীকে ধ্যানের দ্বারা তুষ্ট করেছিলেন। তখন ভগবতী অভয় দিয়ে বলেন যে, তিনি পুনরায় গিরিরাজ হিমালয়ের ঘরে জন্মগ্রহণ করবেন ও দেবাদিদেব শঙ্করকে পতিরূপে বরণ করে তাদের বিপদ হতে উদ্ধার করবেন। হিমালয় অর্থাৎ শৈলশিখরে জন্মগ্রহণ করেন বলে তিনি শৈলপুত্রী নামে খ্যাত। শুক্লপক্ষের প্রতিপদে বেলপত্র, জবা, মিষ্টান্ন, ফল, নৈবদ্য ইত্যাদি বিভিন্ন উপাচার অর্পণ করে মায়ের পূজা করা হয়। এই রূপে দেবীর বাঁহাতে থাকে প্রস্ফুটিত পদ্মফুল আর মাথায় থাকে অর্ধচন্দ্র। তাঁর ডানহাতে থাকে ত্রিশূল। দেবীর বাহন বৃষ। দেবী মঙ্গলময়ী, ভক্তবৎসল। দেবী সন্তুষ্টা হলে ভক্তকে সমস্ত বিপদ, ভয় থেকে সর্বদা রক্ষা করেন।

ব্রহ্মচারিণী শিবের সঙ্গে বিয়ের আগে এই রূপে দেবী যোগিনী অথবা তপস্বিনী। দেবীর বাঁহাতে থাকে কমণ্ডল এবং অঙ্গভূষণ হল রুদ্রাক্ষ। তাঁর ডানহাতে থাকে পদ্মফুল। ব্রহ্ম শব্দের অর্থ তপস্যা। ব্রহ্মচারিণী অর্থাৎ তপশ্চারিণী বা তপ আচরণকারিণী এই দেবীর এই দেবীর রূপ জ্যোতিতে পূর্ণ, অতি মহিমামণ্ডিত। নারদের পরামর্শে শিবকে পতিরূপে লাভ করার জন্য তিনি কঠিন তপস্যা করেন। তাই, তাকে তপশ্চারিণী বা ব্রহ্মচারিণী বলা হয়। তিনি সহস্র বর্ষ ধরে মাত্র ফলমূল আহার করে, তারপর শতবর্ষ মাত্র শাক আহার করে জীবন ধারণ করেছিলেন। কিছুকাল কঠিন  উপহাসে থেকে খোলা আকাশের নীচে বর্ষা ও গ্রীষ্মের দাবদাহে কাটিয়েছেন। এরপর তিন হাজার বছর শুধুমাত্র গাছ থেকে মাটিতে ঝরে পড়া একটি বেলপাতা আহার করে অহনিশ ধ্যান করেছেন। তাই, তার অন্য একটি নাম হয় ‘অপর্ণা’। এরপর সেই শুষ্ক বেলপাতাও আহার করা ত্যাগ করে কয়েক হাজার বছর নির্জলা, নিরাহারে থেকে তপস্যা করতে লাগলেন। এতে দেবী অতি কৃশকায় হয়ে ক্ষীণ হয়ে গেছিলেন। তাই দেখে মা মেনকা বলে ওঠেন, ‘উ মা, না ওরে আর না’। তখন থেকে দেবীর নাম হয় ‘উমা’।ত্রিলোকের সকলে এই তপস্যাকে অভূতপূর্ব পুণ্যকাজ বলে ধন্য ধন্য করতে লাগলেন।অবশেষে পিতামহ ব্রহ্মা দেবীকে বর দেন যে, শিবকে তিনি পতিরূপে পাবেন। দেবী এই রূপে ভক্ত ও সিদ্ধদের অনন্ত ফল প্রদান করে। তাঁর উপাসনা দ্বারা মানুষের স্বভাবে তপ, ত্যাগ, বৈরাগ্য, সদাচার, সংযম বৃদ্ধি পায়। জীবনের কঠিন সংঘর্ষেও ভক্তের মন কর্তব্যে বিচলিত হয় না। সাধকের মন ‘স্বাধিষ্ঠান’ চক্রে স্থিত হয়। এই চক্রে চিত্ত প্রতিষ্ঠা যোগী দেবীর কৃপায় ও ভক্তিলাভে সর্বদা সিদ্ধি ও বিজয় প্রাপ্তি হয়।

চন্দ্রঘণ্টা  ‘ঘণ্টা’ অর্থাৎ দেবীর মুখ চাঁদের মতোই সুন্দর ও স্নিগ্ধ আলোয় উজ্জ্বল, তাই, দেবীর এরূপ নাম। তাঁর দর্শনেই সকলের মন ভালো হয়ে যায়। এই রূপে দেবী যুদ্ধোদ্যত। ভক্তদের রক্ষা করতে ‘দশভুজা’ দেবীর আটটি হাতে অস্ত্রধারণ করেছেন ও বাকি দুহাতে বরাভয় মুদ্রা। তাঁর মস্তকে থাকে অর্ধচন্দ্র, হাতে থাকে কমণ্ডল, তরোয়াল, গদা, ত্রিশূল, ধনুর্বাণ, পদ্ম, জপমালা এবং তাঁর শরীরের রং সোনার মতো উজ্জ্বল। দেবীর বাহন সিংহ। দেবী তাঁর ঘণ্টার ন্যায় প্রচণ্ড চণ্ডধ্বনিতে দুরাচার। অর্ধচন্দ্র, রাক্ষস, দানব, দৈত্যদের প্রকম্পিত করে। ত্রিনয়নী দেবী খুবই মোহময়ী ও উজ্জ্বল।

কুষ্মাণ্ডা ‘কু’, ‘উষ্ণ’ এবং ‘অণ্ড’ এই তিনটি ভাগে ‘কুষ্মাণ্ডা’ শব্দটিকে ভাগ করা হয়।’কু’ অর্থাৎ স্বল্প, ‘উষ্ণ’ অর্থাৎ গরম এবং ‘অণ্ড’ অর্থাৎ বিশ্বজগৎকে বোঝানো হয়েছে। দেবী নিজ হাসি এবং হাতের পাত্রের রক্ত দিয়ে সৃষ্টি করেন আলোকিত ব্রহ্মাণ্ড। এই রূপে দেবীর গাত্রবর্ণ সূর্যের কিরোনের মতো উজ্জ্বল। আটিট হাত দেবী কমণ্ডলু, ধনুক, বাণ, পদ্ম, অমৃতকলস, চক্র, গদা এবং জপমালা, ধারণ করেন। অমৃত এখানে ব্রহ্মের রূপক। দেবী অমৃতপূর্ণ কলস অর্থাৎ ব্রহ্মজ্ঞানের আধার হাতে নিয়ে বসে রয়েছেন। যোগ্য সাধক আপন তপোবল ও কৃচ্ছ্রতা দ্বারা মহামায়াকে প্রসন্না করতে পারলে তবেই মা সেই অমৃতভাণ্ডের অমৃতধারায় সাধককে স্নান করিয়ে তৃপ্ত করবেন অর্থাৎ ব্রহ্মজ্ঞান প্রদানে কৃতার্থ করবেন। দেবীর সিদ্ধমন্ত্রে মন্ত্রিত জপমালা অষ্টসিদ্ধি ও নবনিধি দান করতে সমর্থ। ভক্ত তার রুচি অনুযায়ী যা চাইবে, কল্পতরু দেবী সেই অনুসারেই বাঞ্চা পূর্ণ করবেন। যে সিদ্ধি ও সিদ্ধা চাইবেন দেবী তাকে তাই দেবেন, আবার, যে পার্থিব সম্পদে অনীহা প্রকাশ করে অমৃতপূর্ণ কলস অর্থাৎ ব্রহ্মজ্ঞান চাইবে, দেবী তাকেও তাই দিয়ে সন্তুষ্ট করবেন। দেবী ত্রিনয়নী ও সিংহবাহিনী। শাস্ত্রে কথিত যে, বলিদানের মধ্যে কুমড়ো বলি মায়ের অধিক প্রিয়। কুমড়োকে সংস্কৃতে ‘কূষ্মাণ্ড’ বলে। তাই কুষ্মাণ্ডপ্রিয় দেবী ‘কুষ্মাণ্ড’ নামে স্তুতা। এছাড়াও আরও একটি সুগভির অর্থ রয়েছে- ‘কুৎসিত উষ্মা সন্তাপস্তাপত্রয় রুপো যস্মিন সংসারে।/স সংসারে অণ্ডে উদর রুপায়াং যস্যাঃ॥ অর্থাৎ সংসারে তাপযুক্ত, ত্রিবিধ তাপে জরজর। সেই সংসারে যিনি ভক্ষণ করেন, তিনিই ‘কুষ্মাণ্ডা’। ‘কু’ অর্থাৎ কুৎসিত, উষ্মা সন্তাপত্রয়ে পূর্ণ জগৎ যাঁর অণ্ডে (উদরে) বিদ্যমান, তিনিই ‘কুষ্মাণ্ডা’। ‘অচ্চভুজা’ ছাড়াও দেবীকে ‘কৃষ্ণমাণ্ড’ নামেও ডাকা হয়। মহাপ্রলয়ের পরে যখন সর্বত্র শুধু নিশ্চিদ্র অন্ধকার ছেয়ে রয়েছে, তখন এই ভগবতী দেবী ঈষৎ হাস্য করে ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি করেছিলেন।তাই ইনিই আদ্যাশক্তি। দেবীর বাসস্থান সৌরমণ্ডলে। ভিন্ন মতে, ভীমা পর্বতেও দেবী নিবাস করেন।

স্কন্দমাতা কার্তিকের আরেক নাম ‘স্কন্দ’। পশ্চিমভারতে কার্তিকেয়র মাতা হিসেবে এই ত্রিনয়নী, চারহাতবিশিষ্টা ‘স্কন্দমাতা’ পুজিতা হন। ডানদিকের ওপরে রয়েছেন শিশু কার্তিক  এবং নীচের হাতে রয়েছে প্রস্ফুটিত পদ্ম। এই দেবীর কোনো বাহন নেই, তিনি প্রস্ফুটিত কমলে বসে থাকেন। ছান্দোগ্য উপনিষদে কথিত, জ্ঞানীগণ যাঁর, উদরে জন্মগ্রহণের অভিলাষ করেন, সেই শুদ্ধ দেবীই ‘স্কন্দমাতা’। স্বর্ণোজ্জ্বল গাত্রবর্ণের দেবী পদ্মের ওপর উপবিষ্টা বলে তাঁকে ‘পদ্মসনা’ও বলা হয়।

কাত্যায়নী  পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে, বৈদিক যুগের ঋষি কাত্যায়নের এক পুত্রসন্তান থাকায় একটি কন্যাসন্তান লাভের আশায় দেবীর তপস্যা করেন। দেবী তুষ্ট হয়ে কন্যারুপে জন্মগ্রহণ করেন বলে নাম হয় ‘কাত্যায়নী’। আরেকটি মতে, মহিষাসুরের অত্যাচার বন্ধ করার জন্য ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর ও অন্যান্য দেবতারা মিলে তাঁদের তেজ দিয়ে তৈরি করেন দেবীকে। দেবী দশমীর দিন মহিষাসুর বধ করেন। অন্য মতে, ঋষি কাত্যায়ন নিজের মানস থেকে দেবীকে সৃষ্টি করেছিলেন বলে তাঁর অপর না ‘কাত্যায়নী’। দেবীর আট হাতে রয়েছে শ্ত্রু নিধনের জন্য মারণাস্ত্র। দেবী ত্রিনয়নী ও সিংহবাহিনী।

কালরাত্রি ‘কালরাত্রি’ অর্থাৎ সর্বনাশক কালেরও নাশিকা রাত্রি। তিনি বিপদকালে সকল কিছু বিনাশ করেন। তিনি প্রলয়কালকেও বিনাশ করতে পারেন। ভয়ংকর রূপিনী দেবীর গায়ের রং নিকষ কালো, মাথার চুল খোলা। আলুলায়িত কেশে তিনি শত্রুর দিকে ধাবিত হন। তাঁর কন্ঠে বিদ্যুতের মালিকা। ত্রিনয়নী দেবীর শ্বাস-প্রশ্বাসে বেরিয়ে আসে আগুনের হলকা। ভীষণদর্শনা দেবীর তিন হাতে অস্ত্র, এক হাতে ভক্তদের প্রতি বরাভয়। এই রূপেই তিনি কালিকা হিসেবে পূজিত হন। তবে, এই রূপেও দেবী ভক্তের শুভ করেন। তাই, অন্যদিকে তিনি ‘শুভঙ্করী’। দেবীর বাহন গদর্ভ।

মহাগৌরী কারও কারও মতে, হিমালয়কন্যা ছিলেন কৃষ্ণা, আবার কেউ কেউ বলেন, আট বছর বয়সি দেবীর গাত্রবর্ণ শঙ্খ, চাঁদ অথবা জুঁইফুলের মতো সাদা। শুধু গাত্রবর্ণই নয়, তাঁর পরিধেয় বস্ত্র, অলঙ্কারও শ্বেত-শুভ্র। শিবকে স্বামীরূপে কামনা করে কঠোর তপস্যা করেছিলেন দেবী পার্বতী। তাতে তাঁর গায়ের রং কৃষ্ণবর্ণ হয়ে ওঠেন। তখনই তার নাম হয় ‘মহাগৌরী’। দেবীর হাতে থাকে ডমরু। দেবীর বাহন ষাঁড়। দেবী ত্রিনয়নী, চতুর্ভুজা। দেবীর এক হাত শোভিত বরাভয় মুদ্রায়, পদ্ম এবং ত্রিশূল অন্যান্য হাতে শোভিত। প্রচলিত বিশ্বাস, নবরাত্রির অষ্টম রাতে তাঁর পুজো করলে সিব পাপ ধুয়ে যায়।

সিদ্ধিদাত্রী সিংহবাহিনী দেবীর চার হাতে আশীর্বাদী মুদ্রা। তিনি সিদ্ধিদান অরেন অর্থাৎ তাঁর উপসনায় সংসারে আসে সুখ এবং সমৃদ্ধি। সবাইকে বরাভয় দেন এই মাতৃকামূর্তি। দেবী ভগবৎ পুরাণে আছে, স্বয়ং মহাদেব দেবী দুর্গাকে ‘সিদ্ধিদাত্রী’ রূপে পুজো করেছিলেন। সিদ্ধিলাভ করার পরে দেবী মহাশক্তির ইচ্ছায় শিবের দেহের অর্ধেক নারিত্ব লাভ করে, যে কারণে শিব ‘অর্ধনারিশ্বর’ রূপে বিখ্যাত। চতুর্ভুজা, সিংহবাহিনী দেবীর মুখশ্রীতে সর্বদা সন্তুষ্টির ছাপ দেখা যায়। দেবী মোক্ষদান করেন। অনিমা, মহিমা, গরিমা, লখিমা, প্রাপ্তি, প্রকাম্য, ঈষিত্ব, ভাষিত্ব— এই আটটি সিদ্ধি দেবী পূরণ করেন। এই রূপে দেবী স্নিগ্ধা, গন্ধর্ব, যক্ষ, অসুর এবং দেবতাদের দ্বারা পূজিত হন।

   নব্দুর্গা যে রূপেই মর্তলোকে আসুন না কেন, তিনি তাঁর ভক্তদের কাছে কামনীয় ও মঙ্গলময়। দেবী তাঁর রূপে ও গুণে তাঁর ভক্তদের রক্ষা করেছেন সকল অশুভ শক্তির কাছ থেকে।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *