সত্যজিৎ রায়,ঋত্বিক ঘটক,শম্ভু মিত্রর স্মৃতিবিজড়িত বালিগঞ্জ গভর্নমেন্ট স্কুল এক সময় স্কুলের শেষ পরীক্ষায় ছিল আলোচনার বিষয়
সত্যজিৎ রায়,ঋত্বিক ঘটক,শম্ভু মিত্রর স্মৃতিবিজড়িত বালিগঞ্জ গভর্নমেন্ট স্কুল এক সময় স্কুলের শেষ পরীক্ষায় ছিল আলোচনার বিষয়।
গত শতকের পাঁচ ও ছয়ের দশকে এ শহরের এলিট স্কুল বলতে আমজনতা বুঝতেন অনেকটাই হিন্দু-হেয়ার-বালিগঞ্জ গভর্নমেন্টকে। ভাল ফলের ছড়াছড়ি। প্রাক্তনী কৃতীরা ছড়িয়ে পড়েছেন বিশ্বময়। আজ সে সব ইতিহাস। পর্ষদের পরীক্ষা সরকারি স্কুল আজ যেন ব্রাত্য।
নম্বরে রেকর্ড হয়েছে। রেকর্ড হয়েছে পাশের হারেও। এ বছরের মাধ্যমিকের মেধা-তালিকায় প্রথম ১০টি স্থানে জায়গা পেয়েছে ৫১ জন পরীক্ষার্থী। কিন্তু তাদের মধ্যে দু’টি সরকারি স্কুলের পড়ুয়া আছে মাত্র তিন জন। সরকারি স্কুলের ফল আশানুরূপ হয়েছে বলে মনে করছেন না বেশ কয়েকটি সরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষকেরা। তাঁদের মতে, ফল আরও ভাল হওয়া দরকার ছিল।
হিন্দু স্কুলের প্রধান শিক্ষক শুভ্রজিৎ দত্ত জানান, হুগলি কলিজিয়েট স্কুল ও বাঁকুড়া জেলা স্কুলের তিন জন ছাত্র প্রথম দশের মধ্যে আছে। বাকি সরকারি স্কুলগুলি থেকে কোনও পরীক্ষার্থীই প্রথম দশের তালিকায় আসেনি। ‘‘এই ফলাফলে আমরা বেশ নিরাশ। সরকারি স্কুলে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা আছে। পড়াশোনাও ভাল হয়। কী করে এই ফল আরও ভাল করা যায়, তার পথ খুঁজতে আমরা শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনায় বসব,’’ বললেন শুভ্রজিৎবাবু।
বালিগঞ্জ গভর্নমেন্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক প্রবাল সেনগুপ্ত ‘হিন্দুস্থান সমাচার’-কে বলেন, “সমস্যাটা দীর্ঘদিনের। কয়েক দশক আগে অবস্থাপন্ন পরিবারের পড়ুয়ারা সরকারি স্কুলে আসত। এখন তারা সবাই ঝুঁকছে ইংরেজি মাধ্যমের দিকে।” প্রবালবাবুর হিসাবে, রাজ্যে সরকারি স্কুলের সংখ্যা ৪১। এর মধ্যে এবার মাধ্যমিকে হুগলি কলেজিয়েট, বাঁকুড়া জেলা স্কুল, বালিগঞ্জ গভর্নমেন্টের সর্বোচ্চ নম্বর যথাক্রমে ৬৮৬, ৬৮৩ এবং ৬৭৮। আরও দু-একটি সরকারি স্কুল এ রকম ভাল করেছে। এগুলো কিন্তু ঘোষিত টপারের নম্বরের কাছাকাছি।
বেথুন স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শাশ্বতী অধিকারীর মতে,
‘‘মেধা-তালিকায় সরকারি স্কুলের বেশি পড়ুয়া না-থাকলেও সামগ্রিক ফল ভালই হয়েছে।’’ কলকাতার এই দুই প্রধান শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষিকার মতে, সরকারি স্কুলগুলিতে লটারির মাধ্যমে ভর্তি নেওয়া হয়। তাই বেছে নেওয়ার সুযোগ মেলে না। সব ধরনের পড়ুয়াকে গড়ে তুলতে হয় তাঁদেরই। সরকারি বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৌগত বসুর মতে, সরকারি স্কুলে অজস্র পদ খালি। প্রশাসনিক অনেক পদেও লোক নেই। তার মধ্যে ফল সার্বিক ভাবে সন্তোষজনক। তবে আরও ভাল দরকার ছিল। বিশেষত ‘এএ’ (৯০ থেকে ১০০ নম্বর) পাওয়া উচিত ছিল আরও বেশি পরীক্ষার্থীর।
মেয়েদের নামী সরকারি স্কুল সাখাওয়াত মেমোরিয়ালের প্রধান শিক্ষিকা পাপিয়া নাগ এই প্রতিবেদককে বলেন, “আমাদের ৮০ জন মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৮ জন ‘ডাবল এ’ পেয়েছে। শূন্য পদের সমস্যা দূর হলে পঠনপাঠনে আরও একটু ভাল করার চেষ্টা করা যেতে পারে। মর্নিং ও ডে মিলিয়ে গোটা ১৬ শিক্ষিকার পদ ফাঁকা।“
বালিগঞ্জ গভর্নমেন্টে ১২০ জন মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর মধ্যে এবার ৫ জন ‘ডাবল এ’ পেয়েছে। সি গ্রেডের সংখ্যা কমলেও ৯ জন ওই পর্যায়ে আছে। “এটাও বাঞ্ছনীয় নয়“— স্বীকার করলেন প্রবালবাবু। শূন্য পদের সমস্যা এখানেও। স্থায়ী প্রধান শিক্ষক অবসর নিয়েছেন। সকাল-দুপুর দুই বিভাগেই কিছু খালি পদ। অন্তত ছ’বছর ধরে কোনও গ্রন্থাগারিক নেই এখানে।