শেষ পর্যন্ত টনক নড়েছে সরকারের। সমস্ত বই ত্রুটিমুক্ত করতে তাই কাজ শুরু করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের দিয়ে ওই বইগুলি খুঁটিয়ে দেখানো হচ্ছে। সেই কাজ চলছে জোরকদমে
শহিদ ক্ষুদিরামকে সন্ত্রাসবাদী বানিয়ে দেওয়া হয়েছে সরকারি বইয়ে। মঙ্গলবার বিষয়টি নিয়ে তুমুল হইচই হয় বিধানসভা অধিবেশনে। এর জেরে সরকার পাঠ্যপুস্তক কমিটির বদলের কথা ঘোষণা করল।
এ দিন অধিবেশনের শুরুতেই সিপিএমের প্রদীপ সাহা ‘পয়েন্ট অফ ইনফরমেশনে’ একটি বই অধ্যক্ষকে দেখিয়ে বলেন, ক্লাস এইটের ‘ইতিহাস ও ঐতিহ্য’-র এই বইয়ে ১১২ নম্বর পৃষ্ঠায় বিপ্লবী-সন্ত্রাসবাদ অধ্যায়ে ক্ষুদিরামকে সন্ত্রাসবাদী বলা হয়েছে। কী করে এ রকম লেখা হয় সরকারি বইতে? অবিলম্বে এটা পাল্টানোর ব্যবস্থা করুন। অধ্যক্ষ বইটি জমা চান। বলেন, নিশ্চয়ই বিবেচনা করা হবে। কংগ্রেসের অসিত মিত্র প্রদীপবাবুকে সমর্থন করে অধিবেশনে বলেন, এর প্রতিবাদ করছি। ইতিহাস বইয়ে কেন এ রকম লেখা থাকবে?
এরপর বইটি অধ্যক্ষ মারফত যায় শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে। অধিবেশনে তিনি বসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে একই সারিতে। মুখ্যমন্ত্রীও বইটি দেখেন, দু’জনে আলোচনা করেন। পরে পার্থবাবু অধিবেশনে বলেন, এটা অত্যন্ত দুঃখের। দফতরের বিশেষজ্ঞ কমিটিকে জানানো সত্বেও সংশোধন হয়নি। তারা কী করে এই রকম অনুমোদন দিল? আমার দফতর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, জীবন মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে কমিটি তৈরির। কয়েকজন শিক্ষাবিদ এবং প্রধান শিক্ষক থাকবেন কমিটিতে। বইয়ের লেখা চূড়ান্ত করার আগে এই কমিটি দেখে নেবে। তিন মাসের মধ্যে ওরা এ ব্যাপারে একটা রিপোর্ট দেবে।” উল্লেখ করা যেতে পারে, নতুন বই তৈরি করার পর থেকেই একাধিক ভুল-ত্রুটি ধরা পড়েছিল। তা নিয়ে বারেবারে শিক্ষা দফতরে অভিযোগও জমা পড়ে। এমনকী শিক্ষামন্ত্রীর কাছেও নালিশ করা হয়। কিন্তু এতদিন সেই ভুল-ত্রুটি সংশোধন করার কাজ হয়নি বলেই অভিযোগ। যা নিয়ে ক্রমশ অসন্তোষ বাড়ছিল শিক্ষামহলে। শেষ পর্যন্ত টনক নড়েছে সরকারের। সমস্ত বই ত্রুটিমুক্ত করতে তাই কাজ শুরু করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের দিয়ে ওই বইগুলি খুঁটিয়ে দেখানো হচ্ছে। সেই কাজ চলছে জোরকদমে।
প্রাথমিক, উচ্চ-প্রাথমিক এবং মাধ্যমিকের বইগুলি নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞানের বইগুলিতে বেশ কিছু ভুলভ্রান্তি ছিল। কিছু ক্ষেত্রে তা ছাপার ভুল হলেও, অনেক শিক্ষকই অভিযোগ করেছেন, বহু বানান তো ভুল আছেই, তার সঙ্গে বেশ কিছু শব্দের ভুল মানে রয়েছে। প্রতি বছরই নতুন করে বই ছাপানো হচ্ছে। কিন্তু সেই ভুলগুলি থেকেই গিয়েছে। আর বছরের পর বছর সেই ভুল-ত্রুটি নিয়েই পড়াশোনা করছিল পড়ুয়ারা। ব্যাপারটি যে আদতে ক্ষতিই করছিল বাচ্চাদের, তা অবশেষে বুঝতে পেরেছেন শিক্ষাকর্তারা। তাই প্রথমে বিষয়ভিত্তিক বিশেষজ্ঞদের দিয়ে ভুলগুলি বের করে রিপোর্ট দিতে বলা হয়। তারপর আরেক দফা সেগুলি ভালো করে খুঁটিয়ে দেখা শুরু হয়। বর্তমানে সেই কাজই হচ্ছে।