চব্বিশঘন্টা পর মুক্ত লিপিকাগৃহে অবরুদ্ধ বিশ্বভারতীর উপাচার্য এবং অন্যান্য আধিকারিকরা

2 - মিনিট |

চব্বিশঘন্টা পর লিপিকাগৃহে অবরুদ্ধ বিশ্বভারতীর উপাচার্য এবং অন্যান্য আধিকারিকরা মুক্ত হলেন

কে আর সি টাইমস ডেস্ক

চব্বিশঘন্টা পর লিপিকাগৃহে অবরুদ্ধ বিশ্বভারতীর উপাচার্য  এবং অন্যান্য আধিকারিকরা মুক্ত হলেন।  জানা গেছে, ভর্তির ক্ষেত্রে হাজার টাকা কমানোর শর্তে আন্দোলন প্রত্যাহার করেন পড়ুয়ারা।  তবে পাশাপাশি, সার্ক অন্তভূক্ত ও বিদেশি পড়ুয়াদের ভর্তির ফি সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা হবে বলেও আশ্বাস দেন কর্তৃপক্ষ। তবে কর্তৃপক্ষ তাদের দাবি না মানলে ফের বৃহত্তর আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দেয় পড়ুয়ারা।  

প্রায় চব্বিশ ঘন্টা টানা অবরুদ্ধ থাকার ফলে অধ্যাপিকা আশা মুখোপাধ্যায়  এবং অংকু ভট্টাচার্য অসুস্থ বোধ করেন। তাঁদের বাইরে বের করে নিয়ে যাওয়ার সময় বাক বিতণ্ডা ও ঠেলাঠেলি হয়। পরে অ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া  হয়। গোটা ঘটনার জেরে বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত কর্মসচিব সৌগত চট্টোপাধ্যায় বিশ্বভারতীর আন্দোলনরত পড়ুয়াদের আচরণের তীব্র সমালোচনা করে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে বলেন, পড়ুয়াদের আচরণের জেরে ২২ তারিখের নির্ধারিত সেমিস্টার পরীক্ষা বন্ধ রাখা হল।  অন্যদিকে, বর্তমান উপাচার্য বিদ্যুৎ কুমার চক্রবর্তী  বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলে বলেন,    “ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বলছি গতকাল থেকে বিশ্বভারতীর পড়ুয়ারা মাস্টার মশাইদের সঙ্গে যে ব্যবহার করল,  যে তাণ্ডব চালালো, তা আমি দেখিনি। আমরা ওদের কথা মানছি। তবে দুঃখের কথা হল, আমরা কিন্তু ওদের কথা মানছি। কিন্তু  বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জায়গায় যেভাবে আমাদের সহকর্মীকে ধাক্কা মেরে ফেলা হল, তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হল। এই আচরণের মধ্যে না ছিল সভ্যতা, না ছিল ভব্যতা, না ছিল শ্রদ্ধা। আমি কথা বলার অবস্থার মধ্যে নেই”। প্রাক্তন উপাচার্য সবুজ কলি সেন অবশ্য  বলেন, পড়ুয়ারা কোথাও বুঝতে ভুল করছে। যতটা বাড়বে ভাবছে ততটা না। ২০১১ সালের পর থেকে আমাদের ফিজ বাড়ে নি। কোন মারধরের ঘটনার কথা অস্বীকার করে সবুজ কলি সেন বলেন, কালকে সন্ধ্যেয় ওদের চারজন অসুস্থ হওয়ায় বেড়িয়ে গেছে। আজকে আমাদের দুজন  অসুস্থ অধ্যাপিকা বাইরে বেরোবের সময় ধাক্কা লাগে, তাঁদের অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। একটা মব থাকলে, কখন কার গায়ে হাত লেগে যায় সেটা বলা যায় না। তাই আমরা কোন ছাত্রকে দোষারোপ করছি না। তারা আমাদের পুত্রের মত। সমাধানের পথ বেরোবে। তাঁরা আমাদের পরিবারের মত।

অভিযোগ, বিশ্বভারতীতে ভর্তির ক্ষেত্রে এই বছর থেকে সাধারণ পড়ুয়াদের ফি দ্বিগুণ,  সার্ক অন্তভূক্ত দেশের পড়ুয়াদের ফি পাঁচ গুণ ও বিদেশি পড়ুয়াদের ফি দশ গুণ বৃদ্ধি করেছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। এরপরেই বর্ধিত ফি কমানোর দাবিতে আন্দোলনে নামে পড়ুয়ারা। বেশ কয়েক দিন আন্দোলনের পর এদিন বিশ্বভারতীর লিপিকা প্রেক্ষাগৃহে আলোচনায় বসেন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীসহ বিভিন্ন বিভাগের অধ্যক্ষরা। বিকেল ৩টে এই আলোচনা শুরু হয়। কিন্তু, দুপক্ষই সিদ্ধান্তে অনড় থাকায় লিপিকা প্রেক্ষাগৃহ গেট বন্ধ করে চলছে আন্দোলন। পড়ুয়াদের দাবি, যতক্ষণ না কর্তৃপক্ষ বর্ধিত ফি কমাবে ততক্ষণ এই আন্দোলন চলবে। এমনকি, সিদ্ধান্ত না হওয়ায় পর্যন্ত উপাচার্য সহ আধিকারিকদের আটকে রাখা হবে বলেও জানান পড়ুয়ারা। তবে অতীতে উপাচার্যদের বিভিন্ন দাবিতে ঘেরাও হয়েছে। সেক্ষেত্রে বিদ্যুত ও জল সরবরাহ বন্ধ থাকায় অনেককে ভুগতে হয়। এবার অবশ্য সেই অসুবিধা ছিল না, বলে সূত্রের খবর।  প্রায় ২৪ ঘন্টা পর ঘেরাও বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীসহ বিভিন্ন বিভাগের অধ্যক্ষ, আধিকারিকেরা মুক্ত হওয়ার পর, কর্তৃপক্ষের তরফে পড়ুয়াদের আশ্বাস দেওয়া হয়, ভর্তির ক্ষেত্রে ১০০০ টাকা পর্যন্ত পড়ুয়াদের ছাড় দেওয়া হবে। এছাড়া, সার্ক ভুক্ত দেশ গুলি ও বিদেশি পড়ুয়াদের ভর্তির বর্ধিত ফি প্রসঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। পড়ুয়ারা জানায়, আমাদের আন্দোলন আংশিক সাফল্য হয়েছে। আমাদের দাবি না মানলে ফের বৃহত্তর আন্দোলনের পথে যাব। উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী বলেন, “ছাত্রছাত্রীরা আমাদের সন্তানের মত। তাদের দাবি মত আমরা বিবেচনা করেছি।”

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related news