জিন, কোষ, ডিএনএ-র মেলবন্ধনে নতুন যুগের ‘নেক্সট জেনারেশন সিকুয়েন্সিং’ সারিয়ে তুলবে জটিল রোগ

2 - মিনিট |

কী ভাবে এই কাজ করা হয় তা জানালেন সিএসআইআর-এর ইন্ডিয়ান রিসার্চ অফ কেমিক্যাল বায়োলজির প্রাক্তন বিজ্ঞানী ডক্টর কুণাল রায়।

কে আর সি টাইমস ডেস্ক

কোষ এবং জিন—মানব দেহ তৈরি ও তার কার্যকারিতায় এই দুইয়ের ভূমিকাই সবথেকে বেশি। এই দুইয়ের গঠনের উপরেই নির্ভর করে মানুষের শারীরিক ও মানসিক গঠন। কোষ ও জিনগত কোনও সমস্যা দেখা দিলে শরীরের ভারসাম্য যায় নষ্ট হয়ে। অথচ এই জিন ও কোষে বদলের মাধ্যমেই নাকি সেই সব সমস্যার সমাধান সম্ভব। কিন্তু কী ভাবে জিন ও কোষের বদলের মাধ্যমে সমস্যা মেটানো যায়। তার উত্তর মিলল ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল সায়েন্স ফেস্টিভ্যালে।
এই দুটি প্রক্রিয়ার নাম জিন থেরাপি ও সেল থেরাপি। পুরোটাকে একসঙ্গে বলা হয় ‘হিউম্যান জেনম প্রজেক্ট’। মানবদেহের কোষের মধ্যে থাকে ডিএনএ। এই ডিএনএ-কে সিকুয়েন্স অনুযায়ী সাজালে তার পরিমাণ এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকার ২০০ ভলিউমের সমান। অথচ এই ডিএনএ-কে সাজিয়েই নাকি সব রোগের ওষুধ পাওয়া যায়। কী ভাবে এই কাজ করা হয় তা জানালেন সিএসআইআর-এর ইন্ডিয়ান রিসার্চ অফ কেমিক্যাল বায়োলজির প্রাক্তন বিজ্ঞানী ডক্টর কুণাল রায়।

ধরা যাক কারও চোখে সমস্যা হয়েছে। অর্থাৎ আর পাঁচটা সাধারণ মানুষ যা দেখতে পাচ্ছে তিনি তা পাচ্ছেন না। কিংবা কেউ খুব মোটা হয়ে যাচ্ছেন। ওয়ার্কআউট করছেন, ডায়েট করছেন, কিন্তু কিছুতেই মেদ ঝড়ছে না। সব কিছুরই উপায় হচ্ছে জিন এডিটিং টেকনোলজি। এই টেকনোলজির মাধ্যমে যে কোষের জন্য এই সমস্যা হচ্ছে সেই কোষগুলিকে প্রথমে চিহ্নিত করা হয়। তারপর তার মধ্যে থাকা ডিএনএ-কে চিহ্নিত করা হয়। তারপর সেই ডিএনএ-কে নির্দিষ্ট সিকুয়েন্সে সাজিয়ে ফেলতে পারলেই সেরে যাবে রোগ। এমনটাই জানাচ্ছেন বিজ্ঞানী কুণাল রায়। 

 এই জিন এডিটিং টেকনোলজির মাধ্যমে নাকি এইচআইভি, প্যারালিসিসের মতোই রোগও সারানো সম্ভব। কারণ সব রোগের কারণই নাকি থাকে ডিএনএ-র সিকুয়েন্সে গড়বড় হয়ে যাওয়া। সেই সিকুয়েন্স বুঝে তা ঠিক করে দিতে পারলেই রোগ সারানো সম্ভব বলে জানাচ্ছে বিজ্ঞানমহল। 

 শুধুমাত্র রোগ সারানোই নয়, যাতে কোনও রোগ বা সমস্যা না হয়, তাও নাকি এই জিন এডিটিং থেরাপির মাধ্যমে সম্ভব। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, অনেক সময় গর্ভবতী অবস্থায় ঘুমের বা অন্য কোনও সমস্যা থাকলে যদি ডাক্তার ঘুমের ওষুধ দেন তাহলে তার সাইড এফেক্ট হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বাচ্চার জন্ম থেকেই কোনও সমস্যা দেখা দিতে পারে। কিন্তু যদি সেই মহিলাকে আগে থেকেই তার জিনের পরীক্ষা করে ডিএনএ-র সিকুয়েন্স দেখা যায় তাহলে বোঝা যাবে কোন ওষুধ খেলে সাইড এফেক্ট হবে আর কোন ওষুধ খেলে হবে না। ফলে তখন বাচ্চার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেবে না। এই পদ্ধতিকে বলা হয় ‘নেক্সট জেনারেশন সিকুয়েন্সিং।‘ বর্তমানে উন্নত দেশে এই পদ্ধতির অবলম্বন করে থাকেন কেউ কেউ। 

 কুণালবাবু জানাচ্ছেন, বিজ্ঞানের এই নতুন পদ্ধতি গত কয়েক বছরে ধীরে ধীরে তৈরি করা গেছে। তবে এখনও এই থেরাপির ক্ষেত্রে বেশ কিছু ডেভেলপমেন্টের প্রয়োজন। সেই বিষয়ে পরিশ্রম করে চলেছেন বিজ্ঞানীরা। এই নেক্সট জেনারেশন সিকুয়েন্সিং-ই যে ভবিষ্যতে সমস্ত দূরারোগ্য অসুখ মেটানোর হাতিয়ার হয়ে উঠবে সে বিষয়ে নিশ্চিত বিজ্ঞানীরা।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related news