জুনিয়র চিকিত্সকদের সঙ্গে রোগীর পরিজনদের হাতাহাতি শুরু হয়ে যায়| সময় যত বাড়তে থাকে পরিস্থিতি ততই খারাপ হতে থাকে| হাসপাতালে জড়ো হতে থাকেন মৃত রোগীর আত্মীয়-পরিজনরা| অভিযোগ, মারমুখী জনতার কবলে পড়ে গুরুতর আহত হন দু’জন ইন্টার্ন পড়ুয়া
চিকিত্সায় গাফিলতিতে রোগীমৃত্যুকে কেন্দ্র করে তীব্র উত্তেজনা ছড়াল নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে| পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত হাসপাতালের চিকিত্সা পরিষেবা প্রায় স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে| বাইরে থেকে আসা কোনও রোগীকে হাসপাতালে ভিতরে ঢুকতেই দেওয়া হচ্ছে না, বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে হাসপাতালের মূল ফটক| যে সমস্ত রোগীরা হাসপাতালে চিকিত্সাধীন রয়েছেন, তাঁদের আত্মীয় ছাড়া কাউকেই হাসপাতালের ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না| গণ্ডগোলের সূত্রপাত, ট্যাঙরার বি বি বাগানের বাসিন্দা মহম্মদ সাহিদ নামে এক রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে| সামান্য অসুস্থতার কারণে গত রবিবার রাতে এনআরএস হাসপাতালে ভর্তি করা হয় মহম্মদ সাহিদ নামে ওই রোগীকে| হাসপাতালে চিকিত্সাধীন অবস্থায় সোমবার রাতে এনআরএস হাসপাতালে মেডিসিন ওয়ার্ডে তাঁর মৃত্যু হয়|
পরিজনদের অভিযোগ, চিকিত্সায় গাফিলতির কারণেই মৃত্যু হয়েছে মহম্মদ সাহিদের| এরপর পরিস্থিতি ক্রমশই খারাপ হতে থাকে| জুনিয়র চিকিত্সকদের সঙ্গে রোগীর পরিজনদের হাতাহাতি শুরু হয়ে যায়| সময় যত বাড়তে থাকে পরিস্থিতি ততই খারাপ হতে থাকে| হাসপাতালে জড়ো হতে থাকেন মৃত রোগীর আত্মীয়-পরিজনরা| অভিযোগ, মারমুখী জনতার কবলে পড়ে গুরুতর আহত হন দু’জন ইন্টার্ন পড়ুয়া| মোট ছ’জন জুনিয়র চিকিত্সককে মারধর করা হয়, তাঁদের মধ্যে দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক| হাসপাতাল সূত্রের খবর, মারধরের ঘটনায় আহত দুই জুনিয়র ডাক্তার আইসিইউতে ভর্তি রয়েছেন| হাসপাতালে সিকিউরিটি অ্যালার্ম ব্যবস্থা ও মার্শাল আর্ট প্রশিক্ষণের পরও এমন দুঃখজনক ঘটনা ঘটল|
এরপর সোমবার গভীর রাত থেকেই নিরাপত্তার দাবিতে জুনিয়র ডাক্তাররা অবস্থান বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকেন| বিক্ষোভের জেরে হাসপাতালের পরিষেবা কার্যত স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে| আউটডোর বন্ধ| মঙ্গলবার সকালেই হাসপাতালের মূল গেটে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে| জুনিয়র চিকিত্সকদের দাবি, নিরাপত্তা যতক্ষণ না পর্যন্ত সুনিশ্চিত করা হবে ততক্ষণ এই অবস্থান চলবে| চিকিত্সা পরিষেবা স্তব্ধ হওয়ার ফলে দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীরা চিকিত্সা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন| ক্ষুব্ধ ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলতে এদিন সকালেই হাসপাতালে আসেন স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র| ডাক্তারদের অবস্থান তুলে নেওয়ার আবেদন জানান তিনি| কিন্তু, চিকিত্সকরা জানিয়েছেন, রোগীর মৃত্যু হলেই চিকিত্সায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে ডাক্তারদের মারধর করা হয়| প্রতিবারই এমন ঘটছে| তাই নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার দাবিতে অবস্থান চালিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা|