সম্প্রতি আমেরিকান কলেজ অফ কার্ডিওলজি জার্নালে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে গবেষকেরা জানিয়েছেন ১৮ থেকে ৪৯ বছর বয়সি ধূমপায়ী মহিলাদের ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা ১৩ গুণ বেড়ে যায়
ধূমপান বহুদিন ধরেই আর শুধুমাত্র পুরুষদের কুক্ষিগত নেই। মহিলারাও আসক্ত হয়ে পড়েছেন ধূমপানে। আর সমাজও সেটা মেনে নিয়েছে। ভারতের মহিলাদের প্রকাশ্যে ধূমপান করার দৃশ্য কয়েক বছর আগেও খুব একটা দেখা যেত না। তবে ইদানীং প্রকাশ্য রাস্তায পুরুষদের সঙ্গেই সমানতালে ধূমপান চালিয়ে যাচ্ছেন মহিলারা। এতে দৃশ্য দূষণের অভিযোগ খুব একটা না উঠলেও, যে অভিযোগটা উঠে আসছে সেটা হল, পুরুষদের তুলনায় ধুম্রপায়ী মহিলাদের ক্ষতির আশঙ্কাটা অনেক বেশি। এর মধ্যে হয়তো অনেকেই পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবের ইঙ্গিত খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করবেন। কিন্তু বাস্তবটা হল, এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে রীতিমতো গবেষণা চালিয়েই। গবেষণাজাত তথ্য বলছে, পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের হৃদরোগের সম্ভাবনা কয়েক গুণ বেশি বাড়িয়ে দেয় নিয়মিত ধূমপান। সেই সঙ্গে প্রসূতিদের ক্ষেত্রে সমস্যাটা তো আরও বেশি। মায়ের ধূমপান ত্রুটিপূর্ণ সন্তানের জন্মের সম্ভাবনা আবশ্যিক ভাবেই বাড়িয়ে দেয়। চিকিৎসকদের অভিমত, ধূমপান আরও বেশি ক্ষতিকর ৫০ বছরের কম বয়সি মহিলাদের ক্ষেত্রে।
ধূমপান মাত্রেই শারীরিক ক্ষতি, আমরা সবাই জেনেশুনেই এই বিষপান করে চলেছি। কিন্তু ধূমপানের অভ্যেসের সঙ্গে লিঙ্গবৈষম্য ওতোপ্রোত ভাবে জড়িত, এই কথাটা কিছুতেই মানতে চান না মহিলা ধূমপায়ীরা। সম্প্রতি আমেরিকান কলেজ অফ কার্ডিওলজি জার্নালে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে গবেষকেরা দাবি করেছেন, ১৮ থেকে ৪৯ বছর বয়সি ধূমপায়ী মহিলাদের ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা ১৩ গুণ বেড়ে যায় নন-স্মোকারদের তুলনায়।
রিপোর্টটির সহ-লেখক ডক্টর এভার গ্রেচ জানিয়েছন, “ধূমপানের ঝুঁকি নিয়ে গবেষণা ও সমীক্ষা করতে গিয়ে এই তথ্যটা পেয়েছি আমরা। ধূমরান বড়সড় হৃদরোগের ঝুঁকি পুরুষ-মহিলা নির্বিশেষে অনেকটা বাড়িয়ে দিচ্ছে, এবং সে ঝুঁকির তীব্রতা কম-বয়সি মহিলাদের উপর অনেক বেশি।” সাউথ ইয়র্কশায়ারের কার্ডিওথোরাসিক সেন্টারের কার্ডিওলজিস্ট গ্রেচ সেই সঙ্গে বলেছেন, “আমি আশা করছি, এই রিপোর্টটা মানুষের মধ্যে জন্মানো ভুল ধারণাকে ভাঙবে, যে কেবল বয়স বাড়লেই হৃদরোগের সম্ভাবনা বাড়ে।”
পাশাপাশি রিপোর্টে গবেষকরা জানিয়েছেন, কোনও মহিলা ধূমপায়ী যখন ধূমপান ছেড়ে দেন, তখন তাঁর হৃদরোগের সম্ভাবনা এক ঝটকায় অনেকটাই কমে প্রায় নন-স্মোকারদের মতোই হয়ে যায়। চিকিৎসক গ্রেচ মনে করছেন, এই তথ্য জানার পরে নিশ্চই বহু মহিলা ধূমপান করা ছাড়বেন। তাঁর বক্তব্য, “অনেকেই ছাড়তে চাইলেও, যা ক্ষতি হওয়ার তো হয়েই গেছে– এই ভেবে আর অভ্যাস ত্যাগ করেন না। কিন্তু তাঁদের এটাই বলার, গবেষণা কিন্তু বলছে, আপনার ক্ষতি হওয়া থেমে যাবে ধূমপান বন্ধ করলেই। ফলে দীর্ঘ জীবনের কথা ভেবে প্রতিটি মানুষের, বিশেষত মহিলাদের উচিত মুহূর্তে ধূমপান বন্ধ করা।”
আমেরিকান কলেজ অফ কার্ডিওলজি হাসপাতালে করোনারি আর্টারি ব্লকেজ নিয়ে আসা রোগীদের মধ্যে সমীক্ষা করে মহিলাদের ক্ষতির পরিমাণের বিষয়টি সর্বসমক্ষে এনেছেন গ্রেচ ও তাঁর সহকর্মীরা। তিন হাজার ৩৪৩ জন এরকম রোগীর তথ্য নিয়ে তিন বছর ধরে গবেষণা করে তাঁরা জানিয়েছেন, ধূমপানের সঙ্গে হার্টের এই সমস্যা ভীষণ ভাবে সমানুপাতিক। এবং এই হার্টের সমস্যার ঝুঁকি আবার মহিলাদের ক্ষেত্রে বেশি। তথ্য বলছে, পুরুষদের ক্ষেত্রে নন-স্মোকারদের তুলনায় স্মোকারদের হৃদরোগের সম্ভাবনা যেখানে চার গুণ বেশি, মহিলাদের ক্ষেত্রে সেটাই সাড়ে ছ’গুণের চেয়েও অধিক বেশি। এবং এই অঙ্ক আবার বিপজ্জনক ভাবে বদলে যাচ্ছে ৫০ বছরের নীচের মহিলাদের ক্ষেত্রে। তাঁদের ক্ষেত্রে এই আশঙ্কাটি ১৩ গুণেরও বেশি অধিক। এটাই পুরুষদের ক্ষেত্রে ৫০ বছরের নীচে হলে সাড়ে আট গুণ বেশি।
গবেষণায় উঠে এসেছে মহিলা ধূমপায়ীদের বেশি ক্ষতি হওয়ার পিছনের কারণও। প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, স্মোকিংয়ের সময়ে মহিলাদের শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোনের উপর এর প্রভাব পড়ে। ফলে ইস্ট্রোজেন হরমোন মহিলাদের শরীরের যে ভালো দিকগুলির খেয়াল রাখে, তা অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরই অনেকগুলি প্রভাবের মধ্যে একটি হল হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা বাড়া।