বাঙালি বিজ্ঞানীর হাত ধরেই দেখা মিলবে কৃত্রিম কিডনির

3 - মিনিট |

কৃত্রিম কিডনি। বিশ্বাস হচ্ছে না! সব কিছু ঠিক থাকলে এই ১৯ -এ দেখা মিলবে এই বিষয়ে কিডনির। তাও আবার বাঙালি বিজ্ঞানীর হাত ধরেই। কিডনির সমস্যায় কষ্ট পাচ্ছেন যারা , চিন্তিত হবেন না। আর কয়েকদিনের মধ্যেই মিটে যাবে আপনার সমস্যা

কে আর সি টাইমস ডেস্ক

দুরারোগ্য ক্যান্সার ও হৃদরোগের সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে কিডনি আক্রান্তদের  সংখ্যাও। কিডনির চিকিৎসা যে শুধু ব্যয়বহুল তাই নয় তা অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়কও। এমনকি রোগ পুরোপুরিভাবে  নির্মূল করতেও  বার্থতাই সম্বল  আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞনের ।  ডায়ালিসিস বা কিডনি প্রতিস্থাপন যেমন খরচ সাপেক্ষ তেমনি অনিশ্চিত।  তবে এই নিয়ে আশা জাগলেন এক বাঙালি বিজ্ঞানী।

আকারে মানুষের হাতের মুঠোর সমান। আসল কিডনি প্রতিস্থাপনের তুলনায় এই কৃত্রিম কিডনি বসানোর খরচ অনেক কম। বাংলাদেশি বিজ্ঞানী শুভ রায়ের আবিষ্কার করা এই কৃত্রিম কিডনির বিশ্ববাজারে বহি:প্রকাশ ঘটবে ২০১৯-এর মধ্যেই।

কেবলমাত্র ভারতেই প্রত্যেক বছর খুব কম করে হলেও আড়াই লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয় কিডনির বিভিন্ন অসুখে। এই কৃত্রিম কিডনি বাজারে এলে বিশ্বের লক্ষ লক্ষ মানুষ ও তাঁদের পরিবার পরিজনদের দুশ্চিন্তার দিন চিরতরে শেষ হবে। সেই স্বপ্নই দেখতেন বিজ্ঞানী শুভ রায়।

আমেরিকা প্রবাসী এক বাঙালি বিজ্ঞানী শুভ রায়। নিজেকে বলেন বায়ো-ইঞ্জিনিয়ার। বছর কয়েক আগেই সারা বিশ্ব জুড়ে আলোড়ন ফেলে দিয়েছিলেন, বিশ্বে প্রথম কৃত্রিম কিডনি আবিষ্কার করে। ঢাকার বিখ্যাত  চিকিৎসক অশোকনাথ রায়ের পুত্র শুভ। জন্ম ঢাকায়, ১৯৬৯ সালের ১০ নভেম্বর। আদি বাড়ি ছিল চট্টগ্রাম জেলার রোসাংগিরিতে। ছোটবেলা থেকেই শুভ ছিলেন কল্পনাপ্রবণ। পাঠ্যপুস্তকের বাইরের বিষয় তাঁকে বেশি আকর্ষণ করত। ঢাকার একটি নার্সারি স্কুলে পড়াশুনোর শুরু হলেও শুভর পাঁচ বছর বয়সে, চিকিৎসক অশোকনাথ রায়কে কর্মসূত্রে চলে যেতে হয়েছিল আফ্রিকার উগান্ডা। বাংলাদেশ ছেড়ে ছোট্ট শুভ ভর্তি হয়েছিলেন উগান্ডার জিনজা সিনিয়র সেকেন্ডারি স্কুলে। সেখানেই স্কুল জীবন শেষ করে, আমেরিকা পাড়ি দেন শুভ।

ওহাইও’র মাউন্ট ইউনিয়ন কলেজ  থেকে একই সঙ্গে  স্নাতক হন কম্পিউটার সায়েন্স, ফিজিক্স ও গণিতে । এর পর ওয়েস্টার্ন রিজার্ভ ইউনিভার্সিটি থেকে  ১৯৯৫ সালে ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং ও অ্যাপ্লায়েড ফিজিক্সে মাস্টার ডিগ্রি করেন। ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং ও কম্পিউটার সায়েন্সে পিএইচডি করেন ২০০১ সালে।

১৯৯৮ সালে ওহাইও’র ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের  বায়ো মাইক্রো ইলেক্ট্রো মেকানিক্যাল সিস্টেমস ল্যাবরেটরির অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর পদে যোগ দেন ডঃ শুভ রায়। মানুষের শরীরের অপার রহস্য তাঁকে তখন থেকেই ভাবাতে শুরু করে।

চাকরির সঙ্গে সঙ্গে ডঃ শুভ রায় বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াতে থাকেন ক্লিভল্যান্ড স্টেট ইউনিভার্সিটিতে। ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং  ও কম্পিউটার সায়েন্স পড়াতে থাকেন কেস ওয়েস্টার্ন রিজার্ভ ইউনিভার্সিটিতে। ২০০৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত মলিকুলার মেডিসিন পড়িয়েছিলেন লার্নার কলেজ অব মেডিসিনে।

এরপর, ২০০৯ সালে তিনি ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের নেফ্রোলজি বিভাগের দায়িত্বে আসেন। তখনই তিনি নিজের চোখে, খুব কাছ থেকে দেখেছেন কিডনির অসুখে ভুগতে থাকা মানুষদের। জীবন ও মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা কিছু মানুষের মুখ তাঁকে রাতদিন ভাবাতো। দিনের শেষে ঘরে ফিরে কোনও কাজে মন বসাতে পারতেন না।

সারাক্ষণ ভাবতেন  কীভাবে সারা বিশ্বে কিডনির অসুখে ভোগা মানুষগুলির মুখে হাসি ফোটানো যায়। কীভাবে আরও কিছুদিন তাদের আয়ু বাড়িয়ে দেওয়া যায়। রাতের পর রাত জেগে মানুষের কিডনির সূক্ষাতিসূক্ষ্ম অংশগুলি ও তাদের কাজ নিয়ে পড়াশুনা করতেন মানুষটি।

এরপর মানুষের কল্যাণে শুরু করলেন এক দুঃসাহসিক প্রচেষ্টা। বায়ো-ইঞ্জিনিয়ার ডঃ শুভ রায়, ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়াতে বায়োইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড থেরাপিউটিক সায়েন্স পড়িয়ে আসছিলেন ২০০৮ সাল থেকে। সেখানেই শুরু হল তাঁর বিশাল কর্মযজ্ঞ। ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির ৪০ জন অধ্যাপক ও গবেষককে নিয়ে শুরু করেছিলেন বায়োআর্টিফিসিয়াল কিডনি প্রোজেক্ট, অর্থাৎ কৃত্রিম কিডনি তৈরির কাজ। সেটা আজ থেকে প্রায় ১০ বছর আগের ঘটনা। গবেষক দলে ছিলেন বিশিষ্ট নেফ্রোলজিস্ট উইলিয়াম এফ ফিসেল।

দিনের পর দিন,ঘন্টার পর ঘন্টা চলেছিল নিরলস গবেষণা। একদিন, ডঃ রায় আবিষ্কার করে ফেললেন সিলিকন ন্যানোপার মেমব্রেনস (এসএমএন)। এটি সিলিকন নির্মিত সূক্ষ্ম ছিদ্রযুক্ত একটি পর্দা, যা রক্তকে নিখুঁত ভাবে ছেঁকে ফেলতে সক্ষম। বাকিটা ইতিহাস।

৪১ জন নাছোড়বান্দা বিজ্ঞানীর নিরলস পরিশ্রমে তৈরি হয়ে গেল কৃত্রিম কিডনি। আমাদের দু’টি কিডনি রক্তস্রোত থেকে দূষিত পদার্থগুলিকে ছেঁকে নেয়। জীবন্ত কিডনি কোষ দিয়ে তৈরি বায়ো রিঅ্যাক্টর এবং সূক্ষ্ম পর্দার (এসএনএম) মাধ্যমে  কৃত্রিম কিডনি একইভাবে রক্ত শোধনের কাজ করতে পারে।

আমাদের তলপেটের পিছনদিকে কিডনি দু’টি থাকে। সেখানেই যেকোনও একদিকে, কফির কাপের মতো দেখতে এই কৃত্রিম কিডনি বসিয়ে দেওয়া হয়। হৃদপিন্ড থেকে দূষিত রক্ত আসবে কৃত্রিম কিডনিতে। সেই রক্তকে ছেঁকে নিয়ে বিশুদ্ধ করে দেবে কৃত্রিম কিডনি।

একইসঙ্গে কৃত্রিম কিডনি নজর রাখবে গুরুত্বপূর্ণ হরমোনগুলির উৎপাদন ও ক্ষরণের ওপরেও। আসল কিডনির মতই রক্ত শোধন করা ছাড়াও এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ  ও ভিটামিন ডি তৈরি করবে।

কৃত্রিম এই কিডনি আমেরিকার কয়েক হাজার রোগীর দেহে পরীক্ষামূলকভাবে বসানো হয়েছিল। সে পরীক্ষায় সাফল্যই জুটেছে। ডঃ শুভ রায় ও তাঁর টিম এখন ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ)-এর চুড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায়। অনুমোদন হয়তো মিলে যাবে চলতি বছরের শেষেই। তারপর বিশ্ব বাজারে কৃত্রিম কিডনির জোগান কেবলমাত্র সময়ের অপেক্ষা। কারণ দ্রুত উৎপাদনের পরিকাঠামো পুরোপুরি তৈরি হয়ে গিয়েছে।

তবে কৃত্রিম কিডনির সঠিক দাম কত হবে, এখনও জানা যায়নি। যতদূর জানা গিয়েছে, অসহায় পরিবারদের কিডনি রোগীর নিয়মিত ডায়ালিসিস করাতে, সব শেষে কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য যে বিরাট অঙ্কের টাকা জোগাড় করতে হয় তার তুলনায় কৃত্রিম কিডনি বসানোর খরচ অনেক কম হবে।,

ডঃ শুভ রায় এখন মগ্ন রয়েছেন কৃত্রিম অগ্নাশয় (ইমপ্ল্যান্টেবেল বায়ো-আর্টিফিশিয়াল প্যাংক্রিয়াস তৈরিতে।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related news