আইএমডিটি তুলে নেওয়ায় কাল হয়েছে

3 - মিনিট |

অসমে বাঙালি নিপীড়নে মুখোশের আড়ালের মুখ

চিত্ত পাল

আগামি দশ অক্টোবর অসমের সীমা নির্দ্ধারণের মামলা সুপ্রীম কোর্টের খণ্ড বিচারপীঠে পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। বিধানসভা কেন্দ্র গুলির ডিলিমিটেশান করা হবে। ওদিকে, আগামি ১লা নভেম্বর সুপ্রিমকোর্টের পাঁচ জন বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চে নাগরিকত্ব ও ভিত্তিবর্ষ সংক্রান্ত মামলার শুনানিও অনুষ্ঠিত হবে।

বলাবাহুল্য, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত তরুণ গগৈ, প্রাক্তন কেন্দ্ৰীয় প্রতি মন্ত্রী বিজয়া চক্রবর্তী ও রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শরৎ বরকটকী তাঁরা যোরহাট শহরে ছাত্র জীবনে সহপাঠী ছিলেন। প্রয়াত গগৈ ২০০১ সালে রাজ্যের শাসন ক্ষমতায় বসে ছিলেন। পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল কুমার মহন্ত সরকারের গুপ্তহত্যার পাশাপাশি তাঁর অপশাসনের দরুণ কংগ্রেস সরকার সে বছর শাসন ক্ষমতায় আসে।

অনেকের ধারণা, ওই নির্বাচনে আলফার একটা বড় ভূমিকা ছিলো। যার দরুন উজনি অসমের অসমিয়া জনগোষ্ঠীর মানুষেরা একচেটিয়া ভাবে কংগ্রেস দল কে ভোট দিয়েছিলেন। আহোম সম্প্ৰদায়ের বলিষ্ঠ নেতা হওয়া সত্বেও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত হিতেশ্বর শইকীয়া কে অসমিয়া জনগোষ্ঠীর মানুষেরা বিন্দু মাত্রও সমর্থন করেন নি। বরঞ্চ, তাঁকে “জাতি শত্রু” বলে উপাধি দেওয়া হয়েছিলো।

বিজ্ঞাপন

প্রসঙ্গত উল্লেখনীয়, প্রয়াত গগৈ মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর সশস্ত্র আন্দোলন কারী হাগ্ৰামা মহিলারি কে প্রথম আলোচনার টেবিলে আনতে সক্ষম হন। শোনামতে, এ কাজে তাঁকে সহায় করেছেন তদানীন্তন বিধায়ক ডঃ হিমন্তবিশ্ব শর্মা। যার পুরষ্কার স্বরূপ ডঃ শর্মাকে পরবর্তী তে প্রতি মন্ত্রী হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করেন প্রয়াত গগৈ। প্রয়াত হিতেশ্বর শইকীয়ার আমলে বোড়ো নেতা প্রয়াত প্রেম সিং ব্রহ্ম বোড়ো টেরিটোরিয়েল কাউন্সিল (বিটিসি) গঠন করেছিলেন।

কিন্তু তরুণ গগৈর আমলে হাগ্ৰামা মহিলারি তদানীন্তন উপ প্রধানমন্ত্রী তথা কেন্দ্ৰীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী লালকৃষ্ণ আডবাণির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরিত করে বোড়ো টেরিটোরিয়েল এরিয়া ডেভেলপমেন্ট (বিটিএডি) গঠন করে মহিলারি সিইএম পদে আসীন হন। সুতরাং এই বিটিএডি কে স্বীকৃতি দিতে পার্লামেন্টে আইন পাশ করতে হয়েছে। এ ছাড়া, প্রাক্তন কেন্দ্ৰীয় জলসম্পদ প্রতি মন্ত্রী বিজয়া চক্রবর্তীর সঙ্গে লালকৃষ্ণ আডবাণির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিলো বলে সর্বজন বিদিত।

উত্থাপিত অভিযোগ মতে, প্রয়াত গগৈ ও চক্রবর্তীর যুগ্ম প্রচেষ্টার দরুণই ২০০৩ সালে নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করা হয়েছিলো। ফলস্বরূপে, পরবর্তী সময়ে এন আর সি অসমে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। অবশ্য এর পেছনে কয়েক জন বুদ্ধীজীবি সহ সুপ্রীম কোর্ট ও গুয়াহাটি হাইকোর্টের খ্যাতনামা অ্যাডভোকেটের মস্তিষ্ক ছিলো বলে জানা গেছে।

অপরদিকে, আসু নেতা সমুজ্জ্বল কুমার ভট্টাচাৰ্য, ডঃ হিমন্তবিশ্ব শর্মা ও দীপক শর্মা প্রমুখেরা হিন্দু বাঙালি ও মুসলিমের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ভাবে এক টেবিলে বসে ষড়যন্ত্রের জাল বোনার অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছিলো। যদিও ডঃ হিমন্তবিশ্ব শর্মার বিজেপি গমনে বাঙালি হিন্দু ও মুসলিম দের রাজনৈতিক অধিকার সহ নাগরিকত্ব হরণের পথ অত্যন্ত মসৃণ হয়েছে বলে অনেকেই দাবি করেন।

বিজ্ঞাপন

উল্লেখ্য, ১৯৮৩ সালে আইএমডিটি আইন প্রণয়নের আগে যে কোনও ব্যাক্তি চার পাঁচ শ কিলোমিটার দূরে বসেই একজন হিন্দু বাঙালি কিংবা মুসলিমের বিরুদ্ধে বিদেশি বলে অভিযোগ করতে পারবেন এবং সংশ্লিষ্ট অভিযুক্ত কেই প্রমাণ করতে হবে যে তিনি বিদেশি নন। প্রাক প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত ইন্দিরা গান্ধী ভাষিক ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্ৰদায়ের কাছে থেকে এমন ভূরি ভূরি অভিযোগ পাওয়ার পর আইএমডিটি আইন প্রণয়ন করেন।

এই আইনের নিয়ম অনুসারে, যিনি কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে চাইলে তাঁকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির তিন কিলোমিটার ব্যাসাৰ্দ্ধের মধ্যেই থাকতে হবে। এ ছাড়াও অভিযোগ কারী কে প্রতিটি অভিযোগে সঙ্গে পঁচিশ টাকা দিতে হবে। অথচ অসম চুক্তি তে সন্নিবিষ্ট থাকা সত্ত্বেও সংখ্যালঘু সম্প্ৰদায়ের একমাত্র রক্ষা কবচ স্বরূপ এই আইন টি বাতিল হয়ে গিয়েছে।

১৯৮৫ সাল থেকেই জমিয়ত কিংবা সারা অসম সংখ্যালঘু ছাত্র সংস্থা (আমসু) ডি ভোটার, নাগরিকত্ব নিয়ে আইনি লড়াই করে আসছে। তবুও সামান্য আশার রূপালী রেখা দেখা যাচ্ছে যে আমসু সাংবিধানিক বেঞ্চের এই মামলায় ২০১২ সালেই পার্টি হয়েছিলো। তবে ১লা নভেম্বর এর আগে কোনও ভবিষ্যত বাণী-ই করা যাচ্ছে না।

অসম সন্মিলিত মহাসংঘ ১৯৮৫ সালে সংশোধন করা নাগরিকত্ব আইন কে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে। এই আইনের মাধ্যমেই অসম চুক্তির ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কে ভিত্তিবর্ষ করা হয়েছে। অসমের হিন্দু বাঙালিরা যাদের আপন ভেবে হিন্দুত্ব রক্ষা করতে গিয়েছেন। তাঁরা বাঙালির নাগরিকত্ব হরণ করতে চাইছেন। বিপরীতে, যাঁদের কে ঘৃণা করে দূরে সরিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা এখন ত্রাণকর্তা হয়ে দাঁড়াবে বলে বহুল চৰ্চিত হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *