ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির করের সঙ্গে তুলনা
শিলচর পুরসভার নতুন কর পরিকাঠামো নিয়ে ক্ষোভ ক্রমেই বেড়ে চলছে। এখন বিষয়টা নিয়ে শাসক ও বিরোধীর কোন সীমারেখা নেই। প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস যে নাগরিক সভা ডেকেছিল তাতে শাসক দলের ঘনিষ্ঠ অনেককে দেখা গেল। এখন শুধু শিলচর নয় লক্ষীপুরেও এই নির্দেশ জারি করা হয়েছে। ছোট শহর লক্ষ্মীপুরে যে কর পরিকাঠামো দেওয়া হয়েছে সেই মতে কর দিতে পারবেন না সাধারণ মানুষ। ইতিমধ্যে সেখানেও প্রতিবাদ হচ্ছে। আসলে সারা রাজ্যের বিভিন্ন পুরসভায় এই নির্দেশ জারি করা হয়েছে। কিসের ভিত্তিতে এই নির্দেশ জারি করা হলো? এ নিয়ে অনেকেই পুর প্রশাসনের তুলোধুনো করছেন। বিশিষ্ট সাংবাদিক অতীন দাশ নতুন নির্দেশকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির করের সঙ্গে তুলনা করেছেন। অবসরপ্রাপ্ত আমলা রসরাজ দাস এটাকে জিজিয়া করে সঙ্গে তুলনা করেছে ন। এভাবে তুলনা করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। কারণ ৭০০শতাংশের বেশি কর বৃদ্ধি পেয়েছে। এটা শহরবাসীর কাছে অনেকটা বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত। প্রত্যেক নাগরিকের যখন নিজের উপর বিষয়টি এসে পড়েছে তখন তারা প্রতিবাদী হচ্ছেন।
এই যে জনমানসে এতো ক্ষোভ এ নিয়ে কি ভাবছেন বা কি করছেন জনপ্রতিনিধিরা! লক্ষ্মীপুরের বিধায়ক কৌশিক রাই এ নিয়ে বললেন, এই কর নির্ধারিত হয়েছে রাজস্ব বিভাগের সর্বশেষ প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে। রাজস্ব বিভাগ জমির যে মূল্য ধার্য করেছে সেটার উপর ভিত্তি করে পুরসভা কর নির্ধারণ করছে।
তিনি লক্ষ্মীপুর পুরসভার বিষয়ে রাজস্ব বিভাগের কাছে একমাস আগেই এই জমির ভ্যালুয়েশন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানিয়ে একটি চিঠি দিয়েছেন। তার আশা রাজস্ব বিভাগ জমির মূল্য ফের নির্ধারণ করবে। তখন যে কর আসবে সেটা জনগণ নাগালের মধ্যেই থাকবে।
তবে শিলচর পুরসভার এই কর বৃদ্ধি নিয়ে যেভাবে মানুষের ক্ষোভ বেড়েছে তাতে নিঃসন্দেহে চিন্তিত শিলচরের বিধায়ক। কারণ এই কর সংক্রান্ত নির্দেশ এমন সময় জারি করা হয়েছে যখন শিলচরের পার্শ্ববর্তী অনেক পঞ্চায়েতকে পুর কর্পোরেশনের এলাকায় আনার প্রক্রিয়া চলছে। কিন্তু এভাবে যদি কর বৃদ্ধি পেতে থাকে তাহলে সমস্যা দেখা দেবে। পুর এলাকায় অন্তর্ভুক্ত হতে চাইবেন না এইসব এলাকার জনগণ। জেনে শুনে তো আর কেউ বিষ পান করতে চাইবেন না। এনিয়ে শিলচরের বিধায়ক দীপায়ন চক্রবর্তী জানালেন, তিনি এই বিষয়টি ইতিমধ্যে নগরউন্নয়ন মন্ত্রীর কাছে জানিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীকেও তিনি বিষয়টি অবহিত করছেন। এভাবে কর বৃদ্ধিতে যে সমস্যা তৈরি হয়েছে এটা স্বীকার করেন বিধায়ক। তিনি জানান রাজস্ব বিভাগের কাছে তিনি একটা চিঠি লিখছেন। রাজস্ব বিভাগ শিলচরের জমির যে ভ্যালুয়েশন ঠিক করেছে সেটা যাতে পুনর্বিবেচনা করা হয়। আপাতত বিধায়ক এই পথেই হাঁটছেন।
কিন্তু সরকারি সিদ্ধান্ত হোক বা রাজস্ব বিভাগের ভ্যালুয়েশনেই হোক। করের বোঝাটা চাপছে মানুষের কাঁধে। তাই ক্ষোভ ক্রমেই বাড়ছে। কংগ্রেস তৃণমূল কংগ্রেস বিডিএফ ইতিমধ্যে এই আদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে। নাগরিক সার্থরক্ষা সংগ্রাম পরিষদ এ বিষয়ে আন্দোলন শুরু করেছে। বিষয়টা এখন শাসকদল ও বিরোধী গণ্ডিতে আবদ্ধ নেই। এটা সামগ্রিকভাবে জনগণের বিষয় হয়ে গেছে।
এছাড়া শিলচরের ক্ষেত্রে যেখানে নির্বাচিত বোর্ড নেই সেখানে একজন এগজিকিউটিভ অফিসার কিভাবে এই নির্দেশ জারি করতে পারেন এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে । এছাড়া পুরসভার কর্মচারীরা মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কিভাবে জমির দলিল চাইছেন, এ নিয়ে অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করছে ন। কারণ, বলা হয়েছে সেলফ এসেসমেন্ট হবে। যদি সেল্ফ অ্যাসেসমেন্ট হয় তাহলে দলিল কেন চাওয়া হবে। এছাড়া যেভাবে কর নির্ধারণ করা হয়েছে সেটা সাধারণ মানুষ দিতে পারবেন না। কিভাবে এ নির্দেশ জারি হল এটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। রাজস্ব বিভাগ যদি জমির ভ্যালুয়েশন বেশি দেয় তাহলে করের হার বাড়বে ।
তাই বিধায়করা চাইছেন রাজস্ব বিভাগের রি ভেরিফিকেশন এর মাধ্যমে ভ্যালু কম দেখাতে। তবে এছাড়াও উপায় আছে। কারণ এই আইনের একটা জায়গায় লেখা আছে পুরসভার স্টিয়ারিং কমিটি চাইলে এই কর কাঠামোর পরিবর্তন করতে পারবে। এই রাস্তাটাও খোলা আছে। তবে শেষ পর্যন্ত কি হয় সেটাই এখন দেখার বিষয়। কারণ যতদিন যাবে মানুষের মনে খুব কিন্তু ক্ষোভ আরো বেড়ে চলবে। কর দিতে না পারলে ইলেকট্রিক লাইন কাটা হবে এমন কোথাও বলা হয়েছে। এতে মানুষ আরো ভীত হয়েছে ন। তাই বিষয়টা শিলচরের ক্ষেত্রে একটা বিরাট সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে।
Advertisement