এই ধরনের আইন যখনই প্রণয়ন হয় তখন সেটার লক্ষ্য থাকে উদ্বাস্তু বাঙ্গালিরা
আসামে ইনার লাইন পারমিট নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে তাদের অবস্থান জানাতে চার সপ্তাহ সময় দিল সুপ্রিম কোর্ট। এসম্পর্কিত এক মামলায় সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রকে বলেছে, কেন্দ্রীয় সরকার তাদের অবস্থান স্পষ্ট করুক। আসাম জাতীয়তাবাদী যুব সংঘর্ষ সমিতি সুপ্রিম কোর্টে একটি আবেদন করে আসামে পারমিট চালুর দাবি জানিয়েছিল। এই মামলাটি দুই বছরের পুরনো। কোভিড পরিস্থিতির জন্য মামলার কোন শুনানি হয়নি। এখন সুপ্রিম কোর্ট এই মামলা নিয়ে শুনানি শুরু করেছে।
উত্তর পূর্বে মনিপুর মিজোরাম ও অরুণাচল প্রদেশে ইনার লাইন পারমিট চালু রয়েছে। গত শুক্রবার মেঘালয়ে কে এস ইউ সে রাজ্যে ইনার লাইন পারমিট চালু দাবিতে একটি সমাবেশ করেছে। দীর্ঘ কয়েক দশক থেকে কে এসইউ এই দাবি জানিয়ে আসছে। এমনকি ত্রিপুরা ও নাগাল্যান্ডেও এই দাবি উঠেছে। ইনার লাইন পারমিটের অর্থ হলো যেসব রাজ্যে এটা প্রচলিত সেইসব রাজ্যে প্রবেশ করতে গেলে অনুমতি নিতে হবে। সেই রাজ্যের নির্দিষ্ট লিয়াসন অফিসার এই অনুমতি দেবেন।
এই ব্যবস্থা আসামে চালু করতে চাইছে জাতীয়তাবাদী সংঘর্ষ সমিতি। সেই উদ্দেশ্যে তারা সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছিল। আসামের ভূমিপুত্র দের অধিকার রক্ষার্থে এই আইন প্রয়োগ প্রয়োজন বলে মনে করে এ সংগঠন টি। তবে কোন সরকারই তাদের এই দাবিকে পাত্তা দেয় নি। কারণ আসামের মতো একটি বহুভাষিক বহুজাতিক রাজ্যে এটা সম্ভব নয়। এতে আরো বেশি সমস্যা দেখা দেবে। কিন্তু মামলাটি এখন সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ায় পরিস্থিতি জটিল হয়েছে। কারণ আদালতকে কেন্দ্রীয় সরকার স্পষ্ট ভাবে বুঝিয়ে বলতে হবে কেন তারা ইনারলাইনের পক্ষে নয়।
আসলে এই ধরনের আইন যখনই প্রণয়ন হয় তখন সেটার লক্ষ্য থাকে উদ্বাস্তু বাঙ্গালিরা। এই রাজ্যে ইনার লাইন পারমিটের অর্থ হল, আগামীতে ৬ নম্বর ধারা বাস্তবায়নের পথটা প্রশস্ত করা। লক্ষ লক্ষ জনগণ সমস্যা পড়বেন। ভূমিপুত্রদের অধিকারের নামে বাঙালি ও অন্য জাতি গোষ্ঠীর অধিকার কেড়ে নেওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে। ইনারলাইন পারমিট সেই সব রাজ্যে দেওয়া হয়, যেখানে অন্য রাজ্য থেকে অধিবাসীরা এলে জনবিন্যাসের পরিবর্তন আসতে পারে। ঠিক এরকম একটা পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশ তাৎপর্যপূর্ণ।
কারন কোন বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট যদি হস্তক্ষেপ করে তবে সেটার গুরুত্ব বেড়ে যায়। যেমন আসামে এনআরসি হয়তো কোনদিনই হতো না যদি সুপ্রিম কোর্ট হস্তক্ষেপ না করতো। কেন্দ্রকে অবস্থান জানাতে যে সময় সুপ্রিম কোর্ট দিয়েছে তাতে বিষয়টি গুরুত্ব আরো বেড়ে গেল। এখন এই বিষয়ে অনেকগুলি মামলা সুপ্রিম কোর্টে ঝুলে রয়েছে। নাগরিকত্ব আইন বাতিল, একান্ন না একাত্তর ভিত্তি বর্ষ, ৬ নম্বর ধারায় সংরক্ষণ হবে কিনা, ২৭ লক্ষ লোকের আধার কার্ড, ডি ভোটার সহ কয়েকটি জলন্ত সমস্যা এখন আদালতে রয়েছে।
আর এই প্রত্যেকটি সমস্যার সঙ্গে উদ্বাস্ত বাঙ্গালীদের ভবিষ্যৎ জড়িত রয়েছে। প্রতিটি সংগঠন এখন সুপ্রিমকোর্টকে তাদের দাবি আদায়ের একটা মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছে। এর জবাবে কিন্তু বাঙালি সংগঠনগুলি তেমন কিছুই করতে পারছে না। যে নাগরিকত্ব আইন রয়েছে সেটাকৈ এখন চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছে। যদিও প্রায় তিন বছর হতে চললো এই আইনের কোন রুলস তৈরি করা হয় নি। এভাবে নানা মামলার মধ্যে এখন নতুনভাবে সংযোজিত হয়েছে ইনার লাইন পারমিটের মামলা। যা ভবিষ্যতে বাঙালিদের জন্য একটা বড় বিপদ ডেকে আনবে।
ADVERTISEMENT