অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বহিষ্কারের কড়া নির্দেশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর
অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বহিষ্কার করার কড়া নির্দেশ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। দিল্লিতে এসআইবি অফিসারদের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি এ নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি প্রত্যেক রাজ্য থেকে অন্তত পক্ষে ১০০ জন অনুপ্রবেশকারী বের করার লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করে দিয়েছেন। এসআইবি অফিসারদের এব্যাপারে শনাক্তকরণ ও বহিষ্কার প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে বলেছেন তিনি। এই নির্দেশের মধ্যে এসে যাচ্ছে আসামও।
কিন্তু কোন আইনের ভিত্তিতে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের বহিস্কার করা হবে সেটা স্পষ্ট করে বলা হয় নি। যদি ১৯৪৮ সালের বিদেশী শনাক্তকরণ ও বহিস্কার আইন প্রয়োগ করা হয় তাহলে আসামে সেটা প্রয়োগ হবে কিনা সেটা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তাই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশ অসমের কতটুকু কার্যকর হবে সেটা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে।
আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা হচ্ছে কা বাতিল নিয়ে যে মামলা সুপ্রিম কোর্টে চলছে, তাতে আবেদনকারীরা আদালতকে বলেছেন “কা য়ের ক্ষেত্রে আসাম ও ত্রিপুরার জন্য আলাদাভাবে শুনানি নিতে হবে। কারণ দেশের অন্য রাজ্যগুলির সঙ্গে আসাম ও পুরাকে মেলানো যাবে না। সুপ্রিম কোর্ট আসাম সম্মিলিত মহাসংঘের এই আবেদনে সায় দিয়েছে। এবং আসাম ও ত্রিপুরার ক্ষেত্রে আলাদাভাবে শুনানি গ্রহণ করার কথা বলেছে। আর এই দুই রাজ্যের সরকারকে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করতে বলেছে। যদিও সিএএ সারাদেশে প্রয়োগ করা হবে। কিন্তু আসাম ও ত্রিপুরা সরকারকে শুধুমাত্র তাদের অবস্থান জানাতে বলা হয়েছে।
আদালতের এই নির্দেশ নিয়ে অত্যন্ত উল্লসিত আসু সহ বিভিন্ন সংগঠন। আসু নেতারা বলছেন,আদালতের এই মনোভাবের ফলে আমরা আশা করতে পারি কা অসমে বাতিল হয়ে যাবে। এভাবে দেখা যাচ্ছে নাগরিকত্ব সংক্রান্ত বা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বিতাড়ন ,প্রতিটি আইনের ক্ষেত্রে আসামকে একটা আলাদা দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা হচ্ছে। কোন আইন যখনই আসামে প্রয়োগ করা হয় তখন সেটার ক্ষেত্রে সংশোধন আনতে হয়। আর এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন বাঙালিরা। উদ্বাস্তু বাঙ্গালীদের নানাভাবে হেনস্থা করা হয়।
এনআরসি ডি ভোটার,এসব নানা সমস্যায় জর্জরিত অসমের বাঙালিরা। এইরকম একটা পরিস্থিতিতে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী শনাক্ত করার যে নির্দেশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দিয়েছেন তা সেটা যদি আসামে প্রয়োগ হয় তাহলে এর কোপ বাঙালীদের উপর পড়তে পারে। তাই এক্ষেত্রে রাজ্য সরকার অবশ্যই আসামের বিষয়টা আলাদা ভাবে কেন্দ্রকে বুঝিয়ে বলবে।
দেখা যাচ্ছে প্রতিটি বিষয়ে আসামের ক্ষেত্রে একটা আলাদা আইন করতে হচ্ছে। আসামের প্রতিটি বিষয়কে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখতে হচ্ছে। এতে এই রাজ্যের অন্য জনগোষ্ঠীর অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। সারা দেশে যেখানে এক আইনের কথা বলা হচ্ছে সেখানে আসামের ক্ষেত্রে কেন পৃথ ক চিন্তাভাবনা থাকবে। স্বাভাবিকভাবে এই বিষয়টা নিয়ে অনেকে মনে প্রশ্ন জাগছে।
অবৈধ অনুপ্রবেশকারীর সংজ্ঞা সারা দেশে একটা আর অসমে আরেকটা। ঠিক যেভাবে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন সারা দেশের জন্য করা হলো । কিন্তু আসামের ক্ষেত্রে তীব্র বিরোধিতা করা হচ্ছে। এর ফলে আইন কার্যকর হচ্ছে না।আর নানা সমস্যায় পড়েছেন বাঙালিরা। যদিও রাজ্য সরকার তাদের বিভিন্ন হলফ নামায় উদ্বাস্তুদের স্বার্থ রক্ষার কথা বলেছে।
মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেছেন আসামে কা লাগু হবে ই। মুশকিল হয়েছে সুপ্রিম কোর্ট যদি কোন নেতিবাচক রায় দিয়ে ফেলে তাহলে কিন্তু সমস্যা তৈরি হবে। সে ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারেরও কিছু করার থাকবে না। তাই কা নিয়ে আলাদা ভাবে শুনানিতে উল্লসিত আসু নেতা সমুজ্জল কুমার ভট্টাচার্য।
তিনি সাফ বলেছেন সুপ্রিম কোর্টের এই মনোভাবে তিনি আশাবাদী কা আসামে বাতিল হবে। বাতিল হবে কিনা সেটা বোঝা যাবে রায় বেরোনোর পর। কিন্তু একটা সংশয় তৈরি হয়ে গেল।