এই যে নির্যাতনটা চলছে এটা শুধু হিন্দিবাসীদের উপর চলছে এমন নয়, অতামিল যারাই আছে তাদের উপর এই ভাবে অত্যাচার চলছে
শুভ্র কান্তি ভট্টাচার্য : গত কয়েক বছরে বরাকের খুব কম পরিবার আছে যেখান থেকে চাকরির জন্য কেউ দক্ষিনে যাননি। আগরতলা থেকে বাঙ্গালরুর ট্রেন সব সময় ভর্তি থাকে। সিকিউরিটি গার্ড ,শ্রমিক বা ছোট ব্যবসা, বিভিন্ন দোকানের কর্মচারী ,এসব কাজের চাহিদা মেটাতে আসাম থেকে দলে দলে লোক গত কয়েক বছর পাড়ি দিয়েছেন দক্ষিণ রাজ্য গুলিতে। এর ফলেএখানকার বেকার সমস্যার অনেকটা সমাধান হয়েছে। কিন্তু এখন আর দক্ষিণের রাজ্যগুলি বরাক উপত্যকা তথা আসামের বেকার যুবকদের জন্য নিরাপদ নয়। বিশেষ করে তামিলনাডুর অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়।
এখানে প্রচুর লোক বরাক উপত্যকা থেকে চাকরি করছেন । কিন্তু ইদানিং এসব এলাকায় অসম থেকে যাওয়া শ্রমিকরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে তামিলনাডুর তিরুচুর শহর থেকে। এখানে প্রকাশ্যে এক হিন্দিভাষী শ্রমিককে খুন করা হয়। রাস্তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা শ্রমিককে খুনের দৃশ্য সর্বত্র ভাইরাল হয়। এ নিয়ে উত্তর প্রদেশে প্রতিবাদ সংঘটিত হয়েছে। আসলে এই যে নির্যাতনটা চলছে এটা শুধু হিন্দিবাসীদের উপর চলছে এমন নয়।
অতামিল যারাই আছে তাদের উপর এই ভাবে অত্যাচার চলছে। কোন বাসের মধ্যে অতামিল কাউকে পেলেই চড় থাপ্পড় মেরে নামিয়ে দেওয়া হয়। এসব ঘটনার দিন দিন বেড়েই চলছে। এবং বাইরে থেকে শ্রমিক নিযুক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সংগঠিত হচ্ছে তামিলনাডু বিভিন্ন শহরে। অনেক মহিলারা বলছেন, আমাদের এখানে তোমরা কেন কাজ করবে ।আমরাই কাজ পাচ্ছি না। এই ভাষ্যটা এখন তামিলনাডুর প্রতিটি শহরে। আর এতেই আতঙ্কে আছেন বরাক তথা আসাম থেকে যাওয়া হাজার হাজার বেকার যুবক। একটা আশা নিয়ে তারা দক্ষিণে পাড়ি দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন বোধহয় আর এখানে থাকা যাবে না। অত্যন্ত ভীত হয়ে আছেন তারা।
এমনই কিছু যুবক তামিলনাড়ু থেকে জানালেন তাদের দুঃখের কথা। কিছু ভিডিও পাঠালেন। এ ভিডিওগুলো দেখলে বা ফটোগুলো দেখলে বোঝা যায় কিভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে অসমের যুবকরা। তারা এ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। কিছু শহরের জেলাশাসকের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন স্থানীয় তামিল মহিলারা। তারা বলছেন আমাদের জায়গায় আমরা কাজ করব। তোমরা যাও। এভাবে যদি স্থানীয়দের বিক্ষোভ চলতে থাকে সারা তামিলনাডু জুড়ে তাহলে এখানকার ছেলেরা কদিন থাকতে পারবেন এখানে। অনেকেরই নানা কারণে মৃত্যু হয়। হত্যার ঘটনা আকছার ঘটছে। হিন্দি মুখ থেকে বের হলেই মুশকিল।
আর এখানে হিন্দি বলা ছাড়া তো উপায় নেই। যারা এখান থেকে যাচ্ছেন তারা সবাই তো আর ইংরেজি বলতে পারবেন না। তাই এটা একটা বিরাট সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে।দক্ষিণ রাজ্যগুলোতে যদি এভাবে চলতে থাকে তাহলে এর প্রভাব বরাকের অর্থনীতিতে পড়তে বাধ্য। কারণ কর্ণাটক তামিলনাড়ু হায়দারাবাদ ছাড়া রোজগারের আর তেমন রাস্তা নেই এখানকার যুবকদের। কিন্তু এই রাস্তা অবরুদ্ধ হওয়ার পথে। তাই অনেক যুবক জানালেন, তারা চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করুন।
তামিল আন্দোলনকারীরা মুখে বলছেন তাদের লড়াইটা হিন্দিবাসীদের বিরুদ্ধে। তারা ভাবছেন তাদের সমস্ত কাজকর্ম দখল করেছে হিন্দিবাসী রাজ্যগুলির লোক এসে। কিন্তু তারা আসাম বা উড়িষ্যার লোককে একই পর্যায়ে ফেলছে। আর এখানেই হয়েছে সমস্যা। অতামিল মানে হিন্দিবাসী। তাই এ বিষয়টা নিয়ে অত্যন্ত দুশ্চিন্তায় এবং উদ্যোগে আছেন বরাক থেকে ভাগ্য অন্বেষণ যাওয়া হাজার হাজার যুবক। আপাতত তারা বসে আছেন হিমন্ত বিশ্ব শর্মার মুখ চেয়ে।