নাগরিকত্ব আইন বিরোধী আন্দোলনে ফের উত্তপ্ত হতে চলছে গোটা উত্তর পূর্ব

3 - মিনিট |

কা আন্দোলনে গুয়াহাটি তছনছ হয়েছিল, সেই হিংসার স্মৃতি ভুলতে পারছেন না অসমের মানুষ

চয়ন ভট্টাচার্য

অসমে নাগরিকত্ব আইন বিরোধী আন্দোলন ফের মাথা ছাড়া দিয়ে উঠছে। আসাম সহ গোটা উত্তর পূর্বাঞ্চল কি উত্তপ্ত হতে চলেছে নাগরিকত্ব আইন বিরোধিতাকে কেন্দ্র করে। নর্থইস্ট স্টুডেন্ট অর্গানাইজেশন কোঅর্ডিনেশনের নেসোর উপদেষ্টা সমুজ্জ্বল কুমার ভট্টাচার্য বলেছেন , উত্তর-পূর্বের সাত রাজ্যে এই আন্দোলন সংগঠিত হবে।কা বিরোধী আন্দোলন সংঘটিত হবে। উত্তর-পূর্বের বিভিন্ন রাজ্যে ছাত্র সংগঠনগুলি এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেবে।তবে এই আন্দোলন হবে অহিংস। আন্দোলনের দিকে লক্ষ্য রেখে সরকারও কড়া পদক্ষেপ নিচ্ছে। সরকার বলেছে এই আইনের সমর্থনে গত বিধানসভা নির্বাচনে জনগণের রায় তারাপেয়েছেন। সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী পীযূষ হাজরিকা কা আন্দোলনকারীদের এক হাত নিয়ে বলেছেন, মানুষ আমাদের ভোট দিয়েছেন নাগরিকত্ব আইন সমর্থন করে বলেই। তাই সরকার এই আইন প্রয়োগ করবে।

নতুন করে কা বিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে প্রথমেই যে প্রশ্নের মুখোমুখি হচ্ছেন আন্দোলনকারীরা, সেটা হল আগেরবার যখন কা বিরোধী আন্দোলন হয়েছিল তখন সেটা কেন হিংসাত্মক রূপ নিয়েছিল?,আন্দোলন শুরুর আগে এই প্রশ্নের জবাব দিতে হচ্ছে প্রত্যেক কা আন্দোলনকারীকে। তারা যেখানে যাচ্ছে বা সাংবাদিক সম্মেলনে বসছেন, সেখানে একটা প্রশ্ন আপনাদের হাতে কি নিয়ন্ত্রণ থাকবে। বারবার সাফাই দিতে হচ্ছে ,না না আন্দোলন শান্তিপূর্ণ হবে। এই কথা বলে।


সম্প্রতি অমিত শাহ বলেছেন যে কা কার্যকর করা হবে। নাগরিকত্ব আইন সংসদে পাস হয়েছে। তাই এটা কেন্দ্র সরকার প্রয়োগ করবে। তবে সঠিকভাবে কবে প্রয়োগ হবে সেটা তিনি জানাননি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই ঘোষণার পরেই দেখা গেল কার বিরুদ্ধে আন্দোলনের একটা ক্ষেত্র প্রস্তুত হচ্ছে। সমুজ্জল কুমার ভট্টাচার্য হুংকার দিয়ে বলেছেন যে কোনভাবেই কা অসমে লাগু করতে দেওয়া হবে না।

রাইজে্র দলের নেতা অখিল গগৈ জানিয়েছেন কোনভাবেই তারা এই আইন আসামে প্রয়োগ করতে দেবেন না।
এদিকে কা বিরোধী আন্দোলনকারীদের তীব্র সমালোচনা করে মন্ত্রী জয়ন্তমল্ল বড়ুয়া বলেন, এরা আসলে আন্দোলনজীবী। একটা আন্দোলন না করলে তারা থাকতে পারে না। এসব আন্দোলনে মানুষ এগিয়ে আসবেন না। রাজ্যের মানুষ এই আইন মেনে নিয়েছেন। এবার কা র আন্দোলনকারীরা নিজের পক্ষে জনমত গঠন করতে পারছে না। সরকারের দুই মন্ত্রী পীযূষ হাজারিকা ও জয়ন্তমল্ল বড়ুয়া যেভাবে সামনে থেকে কার বিরোধীদের মোকাবিলা করছেন তাতে মনে হচ্ছে এবার সরকার কড়া হাতে এই আন্দোলন দমন করবে।


কিন্তু সারা রাজ্যে অশান্তির বাতাবরণ তৈরি হয় কিনা সেটা দেখার বিষয়। আন্দোলন কি হিংসাত্মক উঠবে?সর্বত্র এই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে আসুসহ বিভিন্ন আন্দোলনকারী নেতাদের। কা বিরোধী সমন্বয় সমিতির মুখ্য আহ্বায়ক হিরেন গোহাই জানিয়েছেন আন্দোলন সম্পূর্ণভাবে অহিংস পদ্ধতিতে হবে। যেখানে যাচ্ছেন তাদের জবাব দিতে হচ্ছে আন্দোলন হিংসাত্মক হবে না তো? কা বিরোধী আন্দোলনের সময় গুয়াহাটি শহর কিভাবে তছনছ করা হয়েছে সেটা এখনো মানুষ ভুলতে পারছেন না। তাই দ্বিতীয় দফায় আন্দোলন শুরু করতে গিয়ে এই সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন কা বিরোধীরা। বারবার এই প্রশ্ন উঠায় আন্দোলনটা ঠিক তেমনভাবে দানা বাঁধছে না।


আর এটাই এখন সবচাইতে বড় সমস্যা সমুজ্জ্বল অখিলদের কাছে। সাধারণ অসমীয়া সমাজ যে এই আইনের পক্ষে এটা শাসক দল বিজেপি ভাল ভালো করেই জানে।

অতীতে আন্দোলন করতে গিয়ে এভাবে সমস্যায় পড়তে হয়নি আন্দোলনকারীদের। কিন্তু এবার প্রথমেই তারা প্রশ্নের মুখোমুখি হচ্ছেন। এছাড়া সরকার এক্ষেত্রে প্রথম থেকেই নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছে। এই যে বারবার একটা প্রশ্ন উঠে আসছে এতে কিন্তু আন্দোলনকারীরা সঠিকভাবে এগোতে পারছেন না। সমুজ্জ্বল ভট্টাচার্যকে বারবার বলতে হচ্ছে আমাদের আন্দোলন হবে শান্তিপ্রিয় অহিংস।


এছাড়া এখন যে কা আসামের রাজনীতিতে খুব যে একটা বড় ইস্যু হবে এমন সম্ভাবনা নেই। তাই যতই হুংকার ছোড়া হোক, কার বিরুদ্ধে আন্দোলন কিন্তু তেমনভাবে ছড়িয়ে পড়বে না। অন্তত বর্তমান প্রেক্ষাপট এই কথাই বলছে।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *