স্থানীয় সুপারি কিনতে আর কেউ আসছেন না
সরকার গত কয়েক মাস থেকে বার্মিজ সুপারি ধরতে কড়াকড়ি করছে।বার্মিজ সুপারি ধরতে গিয়ে এখন স্থানীয় সুপারি ব্যবসা লাটে উঠেছে । যার ফলে বরাক উপত্যকার ছোট ছোট সুপারি চাষীরা এখন সমস্যায় পড়েছে ন। কারণ তাদের এই সুপারি কিনতে আর কেউ আসছেন না। কে আসবে, যেভাবে ধরপাকড় শুরু হয়েছে। বার্মিজ সুপারি ধরতে গিয়ে স্থানীয় সুপারির ট্রাক আটকে দেওয়া হচ্ছে। তাই সাহস করে বাইরের পাইকাররা এখন আর আসছেন না স্থানীয় সুপারি কিনতে।
এসব অভিযোগ উঠে আসলো পয়লাপুলে অনুষ্ঠিত সুপারি ব্যবসায়ী ও সুপারি চাষীদের একটি সভায়। ধানের পরেই সুপারি চাষে সবচাইতে বেশি লোক নির্ভরশীল। এরা বেশিরভাগই ছোট ব্যবসায়ী। বাড়িতে কিছু সুপারি গাছ লাগিয়ে সেটা বিক্রি করে অনেকেই সংসার চালান। অনেকের একটা পরিকল্পনা থাকে বছরে যা সুপারি হয়েছে সেটা বিক্রি করে পুজোর আগে ছেলেমেয়েদের জামা কাপড় দেবে ন।
কিন্তু সুপারি বিক্রি হচ্ছে না কেউ কিনতে আসছে না। জামা কাপড় দূরে থাক পেট চালানোই দায়। মোহন্ত দের পৌরহিত্যে অনুষ্ঠিত এই সভায় লক্ষ্মীপুরের ওয়ার্ড কমিশনার অমিত দাস বলেন, বার্মিজ সুপারি সরকার ধরুক এটা আমরা চাই । কিন্তু এর জন্য এখন যদি স্থানীয় সুপারি ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায় তাহলে সেটা দুঃখজনক। হাজার হাজার সুপারি ব্যবসায়ী তাহলে কি করবেন?সুপারি চাষের সঙ্গে শুধু যে চাষী জড়িত রয়েছেন এমন নয়, যারা গাছ থেকে সুপারি পাড়েন ও যারা ঠেলায় করে এই সুপারি নিয়ে যান তাদেরও জীবিকা এখন বন্ধ।
Advertisement
এক কথায় হাজার হাজার মানুষ অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু হয়ে পড়েছে ন। এছাড়া স্থানীয় সুপারিতে প্রসেসিংয়ের জন্য জিএসটি দেওয়া হয়। তাহলে কেন এটাকে আটকানো হবে। অথচ আসামের অন্য সব জেলায় স্থানীয় সুপারি ঠিকই বিক্রি হচ্ছে। সমস্যাটা শুধু হচ্ছে বরাক উপত্যকায়।
আসলে সারা উপত্যকাতেই এখন এই স্থানীয় সুপারি ব্যবসায়ীরা সঙ্ঘবদ্ধ হয়েছেন। আলগাপুরের রাস্তা অবরোধ করেছিলেন সুপারি ব্যবসায়ী রা। সবচাইতে বেশি সুপারি চাষ হয় ভাঙ্গা এলাকায়। সারা উপত্যকা জুড়ে এই আন্দোলনকে সঙ্ঘবদ্ধ করার একটা প্রয়াস শুরু হয় লক্ষীপুর থেকে। বক্তব্য রাখতে গিয়ে আবুল হোসেন, মুহিবুর রহমান খান, আব্দুল শুক্কুর বড় ভূঁইয়া,ইমদাদ হোসেন লস্কর ,বাপ্পা সেন স্থানীয় সুপারির উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানান।
আসলে অনেক সময় স্থানীয় সুপারির সঙ্গে বার্মিজ সুপারি মিশিয়ে ফেলা হয় ।তাই পুলিশ অনেক সময় অভিযান চালায়। এ নিয়ে আন্দোলনকারীদের বক্তব্য আছে এটা দেখা পুলিশের কাজ। কিন্তু তাই বলে স্থানীয় সুপারি ব্যবসা কে মেরে ফেলার অর্থ হয় না। এ নিয়ে ইতিমধ্যে বিধানসভায় সরব হয়েছে হাইলাকান্দির বিধায়ক ও করিমগঞ্জের বিধায়ক। এছাড়া স্থানীয় সুপারিতো পুজোতে লাগে, বিয়ে বাড়িতেও লাগে। তাহলে সুপারির উপর এত খড়্গহস্ত কেন। এক বক্তা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন আপনারা সবগুলো সুপারি গাছকে পুড়িয়ে ফেলুন। তাহলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা সাফ জানিয়ে দেন, বেআইনিভাবে আসা বার্মিজ সুপারির বিরুদ্ধে সরকার কড়া ব্যবস্থা নিক। এতে তাদের কোন আপত্তি নেই। কিন্তু যেভাবে স্থানীয় সুপারি আটক করা হচ্ছে ,যার জন্য সুপারি চাষীদের এখন মাথায় হাত। বার্মিজ সুপারির পাপের বোঝা আমাদের ঘাড়ে কেন চাপানো হবে। বাইরে থেকে কেউ এসে সুপারি সংগ্রহ করতে পারছে না।
এ নিয়ে জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করা হয়। অনেক বক্তাই এ বিষয়ে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার হস্তক্ষেপ দাবি করেন। আন্দোলন পরিচালনার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সমস্যার সমাধানের জন্য বরাকের দুই সংসদ ও ১৫ বিধায়কের কাছে আর্জি জানানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।