যোগেন্দ্র মণ্ডলের ভূমিকা নিচ্ছেন এখনকার বাঙালি নেতারা গত সাত বছরে বাঙালিরা বেশি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন
মিজোরামের চাকমারা একটা অত্যন্ত ছোট জনগোষ্ঠী। তাদের একজনই মাত্র বিধায়ক আছেন। বাকি ৩৯ জন বিধায়ক মিজো। এই এক বিধায়ক মিজোরামের চাকমাদের অধিকার রক্ষায় প্রায় প্রত্যেকদিন বিধানসভা তোলপাড় করে ন। কেন এ প্রসঙ্গে আনলাম এর কারণটা হল অসমে বাঙ্গালীরা দ্বিতীয় বৃহত্তম জনগোষ্ঠী হওয়ার পরও জাতির স্বার্থে বিধানসভায় কোন আওয়াজ শোনা যায় না। ঠিক এই প্রেক্ষাপটে আরেকটি কথা মনে হচ্ছে।
যোগেন্দ্র মন্ডলকে চিনতে ন?তিনি পাকিস্তানের সমর্থক ছিলেন। দেশভাগে যখন গোটা বঙ্গ জ্বলছিল তখন তিনি পাকিস্তান দাবির সমর্থন করেছিলেন। যার ফলে লক্ষ লক্ষ তফসীল মানুষ সে সময় পাকিস্তান দাবির সমর্থন করেছিল। কিন্তু পরবর্তীতে এদের কপালে কি নির্যাতন জুটেছিল ছিল তার সাক্ষী ইতিহাস। আর যোগেন্দ্র মন্ডলের শেষ পরিণতি কি হয়েছিল সেটাও আমরা জানি।
আজকের আসামের বাঙ্গালীদের যে ঘোর দুর্দিন চলছে তাতে মনে হচ্ছে আমাদের সমাজে এখনও যোগেন্দ্র মন্ডলদের অভাব নেই। এনআরসি, ডি ভোটার ৬ নম্বর ধারা এসবের নামে বাঙ্গালীদের উপর একটা অত্যাচার চলছে। স্বাধীনতার পর থেকে অসমে বাঙ্গালীদের অবস্থান দিন দিন অতঃপতনে গিয়েছে। আসাম আন্দোলনের নামে লক্ষ লক্ষ বাঙালি নির্যাতিত হয়েছেন। আসাম চুক্তির ফলে ১৯৭১ সালের পরে আসা বাঙালিরা নাগরিকত্ব হারালেন।
আর যারা একাত্তর সালের আগে এসেছেন তারাও চিন্তায় রয়েছেন। যদি কোন কারনে ১৯৫১ সালকে নাগরিকত্বের ভিত্তি করা হয় তাহলে অসমের বাঙালিরা আর ভোট দিতে পারবেন না। আমরা দেখেছি এনআরসির নামে ১৩ লক্ষ বাঙ্গালী হিন্দুর নাম বাদ গেছে। ২৫ লক্ষ বাঙালি আধার কার্ড থেকে বঞ্চিত। কিন্তু আমরা দেখছি এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। অসমীয়া জাতির স্বার্থ রক্ষায় সরকার ও নেতারা সবসময় সচেষ্টা থাকেন। কিন্তু বাঙালির অধিকার রক্ষায় এখনকার বাঙালি নেতারা এগিয়ে আসেন না। এই একের পর এক বাঙালি নির্যাতন চলছে ।এর বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন না এখনকার বাঙালি বিধায়ক মন্ত্রীরা।
ডি ভোটারের নামে ডিটেনশন ক্যাম্পে বন্দী প্রায় ১০০ জন বাঙালি আত্মহত্যা করেছে ন। কয়েকটি সংগঠন ছাড়া কেউ প্রতিবাদে শামিল হয়নি। তিনসুকিয়া ধলায় বাঙালি গণহত্যার যারা অভিযুক্ত তাদের এখন পর্যন্ত গ্রেফতার করা হলো না।
কেন বারবার বাঙালির উপরে আক্রমণ নেমে আসে। এর অনেকগুলো কারণ রয়েছে। প্রথম কারণটা হলো বাঙালিরা এখন পর্যন্ত অসমে নিজেদেরকে একটা ভোট ব্যাংক হিসাবে তৈরি করতে পারেনি। যেটা চা শ্রমিক অনেক সম্প্রদায় ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায় পেরেছে। আর ভোট ব্যাংক না হওয়াও কোন রাজনৈতিক দল বাঙালিকে পাত্তা দেয় না।
সব রাজনৈতিক দল জানে , যে বাঙালিদের মধ্যে যোগেন্দ্র মন্ডলের অভাব নেই। বাঙালি নেতারা জাতির দুর্দশার দিনেও চোখ বুজে বসে আছেন। আর বাঙ্গালীদের মধ্যে যারা একটু সম্পন্ন হয়েছেন তারা ভুলে যান তাদের নিজেদের জাতির অন্য লোকদের কথা। যার ফলে পরবর্তীতে তারাও নিজেরা শিকার হচ্ছেন।
Advertisement
আসামের বাঙ্গালীদের এই একটা আত্মকেন্দ্রিকতা এটাই এদের ধ্বংস ডেকে আনবে। আর বাঙ্গালী নেতারা যেভাবে সামান্য একটা টিকিটের লোভে নিজেদের সবকিছু বিসর্জন দিচ্ছে ন, সেটা ভাবতে আশ্চর্য লাগে। বাঙালিরা বিজেপিকে ভোট দেওয়াতে আমার কোন আপত্তি নেই। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে গত সাত বছরে এই সরকারের আমলে সবচাইতে বেশি বাঙালিরা প্রশাসনিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে ন। ২০১৬ থেকে শুরু হয়েছিল এনআরসির নামে হয় হয়রানি। এর পাশাপাশি ডি ভোটার ডিটেনশন ক্যাম্প আছেই।
মানবাধিকার কর্মী হর্স মান্দার সুপ্রিম কোর্টে একটি আবেদন না করলে এখনো ডিটেনশন ক্যাম্পে পচে মরতেন বহু বাঙালি। তারপরও হিন্দুত্বের জন্য বাঙালি বিজেপিকে ভোট দেবে। এটা বিজেপি জানে, বাঙ্গালীদের লাথি মারলেও তারা তাদেরই ভোট দেবে। আর এই ভাবনা থেকে চলে নির্যাতন। অসমে রাজনীতিতে বাঙালিরা বিজেপির স্বাভাবিক ভোটার। তাই কোন ব্যাপারে বাঙালিদের পরামর্শ গ্রহণ বাঙালি সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা এসব করতে চায় না এই সরকার। আর সরকারের এই কাজে নির্লজ্জভাবে সহায়তা করছে বাঙালি কিছু বিধায়ক সাংসদ। যে জাতি নিজের ইতিহাস ভুলে যায় সেই জাতির জন্য করুনা হয়।
বাঙালি এমন একটা জাতি। তাই অসমে আগামী দিনে বাঙ্গালীদের জন্য আরও বড় দুর্দশা আসছে। যতক্ষণ পর্যন্ত বাঙালিরা নিজেদেরকে একটি শক্তিশালী ভোট ব্যাংকে পরিণত না করছে ততদিন পর্যন্ত এই নির্যাতন শোষণ চলবে। কারণ ভোট ব্যাংক তৈরি করলে, তখন বাঙালি যে কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সওদা করতে পারবে। তখন দেখবেন বাঙ্গালীদের তোষণ করতে ব্যস্ত সব রাজনৈতিক দল। কিন্তু এই জাতির বিধায়করা এত মেরুদণ্ডহীন তারা নিজের জাতির স্বার্থে একটা কথা বলতে পারে না। এছাড়া এমন একটা শিক্ষা দেওয়া হয় মনে হবে যেন হিন্দুত্ব রক্ষা করার দায়িত্ব বাঙালি হিন্দুদের। অন্য হিন্দুরা নিজেদের অসমীয়া বিহারী গুজরাটি বলতে পারবেন, কিন্তু বাঙালি হিন্দুরা নিজেদের হিন্দু পরিচয় দিতে হবে। এই করতে গিয়ে নিজেদের সর্বনাশ থেকে আনছে বাঙালি হিন্দুরা।
না ধরকা না ঘাট কা এমন একটা অবস্থা হয়েছে এই জাতির। তাই অসমে বাঙ্গালীদের এবার প্রথমেই নিজেদের একটা ভোট ব্যাঙ্ক হিসেবে তৈরি করতে হবে। না হলে আগামীতে আরও বিশাল বিপদ ঘনিয়ে আসছে বাঙ্গালীদের জন্য।
Advertisements | 5E For Success