মাধ্যমিকে এবার এতো ভালো ফলাফল সরকারি স্কুলগুলো কিভাবে করলো!

2 - মিনিট |

অনেক সরকারি স্কুল যেগুলোয় গত বছর পাশের হার ছিল দশ শতাংশ, এমনকি ছয় শতাংশ- সেই স্কুলগুলোতে এবার পাশের হার ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ

কেআরসি টাইমস বারাক ভ্যালি ব্যুরো

শিলচর : মাধ্যমিকে এবার খুব ভালো ফলাফল হয়েছে। বিশেষ করে সরকারি স্কুলগুলিতে পাশের হার অবিশ্বাস্যভাবে বেড়েছে। এটা অত্যন্ত ভালো কথা যে সরকারি স্কুলগুলো উন্নতি করছে। কিন্তু একটা প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। উন্নতি মানে লটারি পাওয়া নয়। হঠাৎ করে কোটিপতি হয়ে গেল কেউ। অনেক সরকারি স্কুল যেগুলোয় গত বছর পাশের হার ছিল দশ শতাংশ, এমনকি ছয় শতাংশ। সেই স্কুলগুলোতে এবার পাশের হার ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ।

গত বছর সরকারি বালক বিদ্যালয় ,সরকারি বালিকা বিদ্যালয় দুটোই অবস্থা ছিল করুন। ছোট লাল শেঠ ইনস্টিটিউটে লজ্জাজনক রেজাল্ট হয়েছিল গত বছর। আর এ বছর এই তিনটা স্কুলই ভালো ফলাফল করেছে। ভাল শুধু নয় সাংঘাতিক ভাল ,৮০ শতাংশের উপরে পাশ। পাবলিক স্কুলও এবার ভালো ফলাফল করেছে। অধর চাঁদ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল গত বছর ভালো ফল করেছিল এবার আরো অনেক বেশি ভালো ফল করেছে।

তার মানে কি ধরে নেওয়া যায় যে গত এক বছরে সরকারি শিক্ষাব্যবস্থায় একটা বৈপ্লবিক উন্নতি হয়ে গেছে। হঠাৎ কি এমন ঘটলো যে উন্নতি একলাফে শিখরে পৌঁছে গেল। গত বছর যখন রেজাল্ট খুব খারাপ হয়েছিল তখন মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন , আগামী বছর যদি একই অবস্থা হয় তাহলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রেজাল্ট যদি জঘন্য হয় তাহলে এত টাকা দিয়ে শিক্ষক রেখে লাভ কি? শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসাবে ইনক্রিমেন্ট আটকে রাখা বদলি করা এসব এসব হুমকি ছিল।এটাই ছিল তার বক্তব্য। এতে মনে হয় কিছুটা কাজ হয়েছে।

বিষয়টা নিয়ে কথা হলো বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন ও কিছু শিক্ষকের সঙ্গে। তারা অনেকেই বলছেন কিছুটা হলেও কড়া মনোভাব নিয়েছে বিভিন্ন স্কুল। কিন্তু আসল কারণটা অন্য জায়গায়।৪৫ নম্বর ছিল অবজেক্টিভ। অর্থাৎ প্রশ্নের নিচে চারটা উত্তর দেওয়া আছে যেটা শুদ্ধ সেটাতে টিক মার্ক দিলেই হল। লিখতে হচ্ছে না কিছুই। আর এটাই নাকি সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। প্রায় সব ছাত্রই এই জায়গায় বাজিমাত করেছে। এটা হল একটা মতবাদ।

আরেকটা কারণ দেখানো হচ্ছে, সেটা হল এবার নাকি প্রশ্নপত্র সোজা করা হয়েছে। যেহেতু এটা মেট্রিকের শেষ বছর তাই যারা আছে তারা যাতে বেরিয়ে যায়, এইটাই নাকি চাইছিল কাউন্সিল। কারন অনুসন্ধান করতে গিয়ে এই দুটো যুক্তিকে সামনে পাওয়া গেল।‌ এর কারণ হাজার চেষ্টা করলেও মাত্র এক বছরের মধ্যে কোন স্কুল এতটুকু উন্নতি করতে পারে না।

যে স্কুল গত বছর ছিল ২০ শতাংশ,সেই স্কুল যদি ৪০ শতাংশ হয় এ বছর, তা হলেও মানা যায়। কিন্তু এক লাফে পাঁচ গুণ দক্ষতা বৃদ্ধি অসম্ভব। তাই অনেকেই বলছেন এই পাস করাটা আসলে সরকারি স্কুলের শিক্ষার উন্নতির সূচক নয়। নিন্দুকের মুখতো আটকানো যায় না। এই নিন্দুকরা বলছেন এই ৪৫ নম্বর অনেক স্কুলে নাকি ছাত্রদের বলে দেওয়া হয়েছে।

কোন একটা কিছু লিখে আনতে গেলে যে পরিশ্রম তার চাইতে নম্বর বলে দেওয়া সোজা। কয়েকটি স্কুলে যেভাবে নকলের হিড়িক পড়েছিল এবার মাধ্যমিকে তাতে এরকম ধারণা এক কথায় উড়িয়ে দেওয়া যায় না। স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন, চালাকি দ্বারা কোন মহৎ কাজ হয় না। এই অভিযোগ যদি সত্য হয়ে থাকে তাহলে কিন্তু শিক্ষার মান যেখানে ছিল সেখানেই থেকে গেল।

তবে এসব কথা তো আর প্রমাণ করা যায় না। তাই বলতেই হবে যে সরকারি স্কুল গুলোর মান উন্নত হয়েছে। আগামীতে দেখা যাবে যেসব বাবা-মা গরিব স্তর থেকে সামান্য উপরে আছে তারা তাদের বাচ্চাদের সরকারি স্কুলে ভর্তি করছেন। তবে বিষয়টা এত সহজ নয়। একটা খটকা কিন্তু থেকেই গেল।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *